অর্থনৈতিক মন্দা নিরসনে গঠনমূলক চিন্তাভাবনা থাকতে হবে
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ দিন দিন কমছে। আই এম এফের প্রথম কিস্তি পাওয়া গেছে তার মানে রিজার্ভ কিছুটা উন্নতি হবে। এদিকে ডলারের দাম ৪ টাকা করে বাড়ছে। কাজেই মূল্যস্ফীতি খুব কমবে না। আমাদের যেটি করতে হবে, মূল্যস্ফীতির কারণে যারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বরাদ্দ বাড়াতে হবে। সেগুলো সুষ্ঠু বিতরণ নিশ্চিত করা লাগবে। মূল্যস্ফীতির কারণে জনজীবনে দুর্ভোগ বাড়ছে। সেক্ষেত্রে আমাদের যে আইন আছে, সেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা থাকতে হবে। কেউ মজুদদারি করছে কি না, অযথা দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে কি না- বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে। প্রয়োজন হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান পরিচালনা করতে হবে। তা ছাড়া সরকার প্রায় এক কোটি মানুষকে নিরাপত্তা বলয়ে নিয়ে আসার যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, সেটি সঠিকভাবে হচ্ছে কি না, সাধারণ প্রান্তিক মানুষ এর বাইরে থেকে যাচ্ছে কি না, অসাধু ব্যবসায়ীরা অর্থ উপার্জন করছে কি না- সেগুলো দেখা উচিত।
এখন যেটি চিন্তার বিষয়, তা হলো দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। দেশে উৎপাদন বাড়াতে হলে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। দেশ-বিদেশের অনেক তরুণ করোনার সময় কাজ হারিয়েছে। তাদের পুনরায় কর্মসংস্থানের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। বিশ্ববাজারে মূল্যস্ফীতির কারণে, ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে, সাপ্লাই রিডাকশনের কারণে, আমাদের আমদানিখাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সেদিকে আমাদের সচেষ্ট থাকতে হবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি মন্দা অবস্থায় আছে বলব না। তবে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে আমাদের যে লক্ষ্য ছিল, জিডিপির ৭.৫ শতাংশ সেটি তো আর দিতে হবে না। তবে এখনো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে যে পূর্বাভাস আসে সেগুলো ৫ থেকে ৬ শতাংশ আছে। সেটি সাম্প্রতিককালের ইতিহাসের তুলনায় একটু কম। তবে সেটি শঙ্কাজনক পরিস্থিতি সেটি বলা যাবে না। সেজন্য আমাদের এখন থেকেই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যাতে করে ভবিষ্যতে আর কোনো বড় কোনো শঙ্কার সৃষ্টি না হয়।
আমার প্রথম কথা হচ্ছে যে, একদিনে কিন্তু অর্থনীতিতে বড় কোনো পরিবর্তন আসে না। আমাদের যে চ্যালেঞ্জগুলো আগে এসেছে, সেই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার চেষ্টা আগে করতে হবে। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় তহবিল অনেক কমে গেছে। দেশে আয় বৈষম্য ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। সেটি ক্রমান্বয়ে কমানোর জন্য চেষ্টা করা লাগবে। কোভিড ১৯এর অতিমারির কারণে দারিদ্র্যসীমার নিচে লোকের সংখ্যা বেশি হয়ে গেছে। সেজন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বাড়ানো হবে এবং সুষ্ঠু বিতরণের বিষয়টি নিশ্চিত করা দরকার।
সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমদানি শিল্পের প্রসারকে উৎসাহিত করার এখনো প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে দ্রুত বদলে যাওয়া বিশ্ববাণিজ্যের এই সংকটকালে কথাটি আরও বেশি প্রযোজ্য এবং সেটি আমাদের আমলে নিতে হবে। এজন্যে এনবিআর বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে। বিনিময় হার কীভাবে অনুকূলে নিয়ে আসা যায় সেজন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে। আমাদের রেমিট্যান্স বাড়ানোর প্রক্রিয়া আরও ফলপ্রসূ করার চেষ্টা করা লাগবে। বাজার বিচিত্রকরণ করার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি। রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আরও দক্ষ লোক নিয়োগের প্রয়োজন আছে। যাতে করে তারা দেশীয় উপার্জন বৃদ্ধি করতে পারে। মোট কথা অর্থনৈতিক মন্দা নিরসনে আমাদের আরও গঠনমূলক চিন্তাভাবনা করতে হবে।
এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা
এসএন