দেশের স্বার্থে কর্মীবান্ধব নিয়োগ প্রক্রিয়া জরুরি
বর্তমানে মালয়েশিয়ায় লোক নিয়োগের যে প্রক্রিয়া বাংলাদেশে চলছে, সেটি হ-য-ব-র-ল হয়ে গেছে অনেক বছর আগেই। নানা রকম প্রতিবন্ধকতা, বিশেষ করে যারা বিভিন্ন ধরনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তারা ওই প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়ায় সেটির বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র করেন এবং ষড়যন্ত্রে তারা সফলও হন। এরপর তারা পুনরায় বাজারটি কুক্ষিগত করেন। নির্দিষ্ট কয়েকটি এজেন্সি বাইরে লোক পাঠাতে থাকে। যখন নতুন করে নিয়োগের ক্ষেত্রেও গুটিকয় এজেন্সিকে লোক নেওয়ার বিষয়ে অনুমতি দেওয়া হলো এবং যেকোনো কারণেই হোক, তাদের সিস্টেম যখন চলমান হলো না, এরপর সরকারেরই একটি অর্গানাইজেশন, ওদের মাধ্যমে এখন খুবই কম পয়সায় আমাদের লোকজন যেতে পারে, তখন অন্যান্য বেসরকারি সংগঠনগুলো বাদ পড়ে যায়।
মালয়েশিয়ায় একটি নতুন সরকার গঠিত হলো। দীর্ঘদিন সরকারের বিরোধিতা যারা করে আসছেন, একসময় মাহাথির মোহম্মদের সাপোর্টার ছিলেন, এখন আনোয়ার ইব্রাহিম সরকার গঠন করেছে। যেকোনো সময় সরকারের পতনও হতে পারে। কাজেই এই জোড়াতালির সংসার, জোড়াতালির সরকার কতদিন চলে সেটি একটি ভাবার বিষয়।
এই সরকার আসার পর বাংলাদেশের বিশেষ করে শ্রমিক নেওয়ার ব্যাপারে কোনো নীতিগত পরিবর্তন হবে বলে আমি মনে করি না। আমি যতটুকু জানি, ক্যাবিনেটে যারা আছেন, সৎভাবে অভিভাবকের দিকে তাকিয়ে কোন সিস্টেম করবে অথবা আমাদের দিকে তাকিয়ে সমর্থন করবে সেরকম কোনো সম্ভাবনা নেই।
বিশ্বের অন্যান্য দেশে আমাদের লোকজন যায়। প্রায় এক কোটি লোকের মতো বাংলাদেশি বিভিন্ন দেশে আছে। অন্যান্য দেশেও আস্তে ধীরে যদি পারত, আমাদের লোকজন কম খরচে বিদেশে যেতে পারত। তবে এক্ষেত্রে যত সংগঠন থাকুক না কেন, কোনো লাভ হবে না। কারণ তারা পয়সা দিয়ে নিজের পয়সা উঠাবে।
এ বিষয়ে আমাদের সরকারকেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এখন আমাদের কানে আসছে যে মালয়েশিয়ায় যেতে ইচ্ছুক দরিদ্র কর্মীদের রক্ত চোষার উদ্দেশে গুটিকয়েক এজেন্সির স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে আবার সিন্ডিকেট তৈরি হচ্ছে। এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা শক্তিশালী না হলে এটি তৈরি করার কথা ভাবত না। বাংলাদেশেই হোক বা মালয়েশিয়ায়, এই সিন্ডিকেটের, তাদের পরিকল্পনা ও কর্মসূচি অনুযায়ী, দুদেশের সংশ্লিষ্টদের সম্মত করানোর জন্য যথাযথ সংশ্রয় (নেটওয়ার্ক) রয়েছে বলেই মনে হয়। দুঃখজনক হলো, দরিদ্র বিদেশগামী কর্মীদের স্বার্থের কথা কেউ ভাবেন না। তাহলে কি কর্মী ও রিক্রুটিং এজেন্সির স্বার্থ রক্ষায় অভিবাসী-বান্ধব নিয়োগ ব্যবস্থার স্বপ্ন কোনোদিনই বাস্তবায়িত হবে না?
আমি মনে করি যে, দেশের স্বার্থেই আমাদের কর্মীবান্ধব নিয়োগ প্রক্রিয়াকেই বাস্তবায়ন করতে হবে- দেশের অর্থনীতির স্বার্থে, কর্মীদের নিয়োগ প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ রাখা এবং তাদের পরিবারগুলোর জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য ফিরিয়ে আনার স্বার্থেই এটি আমাদের করতে হবে এবং সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ কে এম আতিকুর রহমান: সাবেক রাষ্ট্রদূত
এসএন