জেলা প্রশাসকদের দায়িত্বশীল হতে হবে
আমি মনে করি, ডিসি সম্মেলন একটি ভালো উদ্যোগ এবং সম্মেলনটি প্রতিবছরই হয়ে থাকে। এটি সরকারের একটি নিয়মিত কর্মসূচি। কাজেই এটি নিয়ে আলাদা করে অর্থাৎ বিশেষভাবে বলার কিছু নেই। এই সম্মেলনগুলো মূলত পুলিশের ক্ষেত্রে, ডিসিদের ক্ষেত্রে এ রকম বিভিন্ন ক্ষেত্রেই প্রতিবছর হয়ে থাকে। সম্মেলনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার ও মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে একটি যোগসূত্র স্থাপিত হয় এবং এর মাধ্যমে সরকারের নীতি নির্ধারকরা সরকারের বিভিন্ন নির্দেশাবলি জেলা প্রশাসকদের জানাতে পারেন।
এক্ষেত্রে সরকারের সর্বত্র সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কঠোর মনোভাব প্রদর্শন এবং দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ার কোনো বিকল্প নেই। প্রশাসন শক্তিশালী হলে বিভিন্ন সেবা পেতে সাধারণ মানুষের কষ্ট হয় বটে, কিন্তু এতে দুর্নীতির সুযোগ কম থাকে। স্থানীয় প্রশাসনকে জনমুখী করার লক্ষ্যে আমলাতন্ত্রের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতাবান করার সরকারি উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা লক্ষণীয়।
এসব দিক বিবেচনায় প্রতিবছরই ঘটা করে ডিসি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত ও তা সমাধানে সুপারিশ উত্থাপনের আলোকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তবে এক্ষেত্রে যে বিষয়টি লক্ষ্যনীয় তা হলো, মুখে বলা মাত্রই কিন্তু সমস্যাগুলোর সমাধান একবারে হয়ে যায় না। সমস্যা চিহ্নিত করা এবং সেসবের যাচাই বাছাই ও পর্যালোচনা একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। এবারের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রায় ২৫টির মতো নির্দেশনা এসেছে দেখেছি। অনেকগুলো টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনের সঙ্গে জড়িত এবং তারই পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভবপর বিষয়গুলো সমাধানের একটি চেষ্টা জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে করা হয়।
কাজেই আমাদের এমনটি আশা করা ঠিক হবে না যে, কোনো কিছু চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা তার সুফল পেয়ে যাব।এখানে আইনগত বিষয় আছে। দ্বিতীয়ত আর্থিক বিষয় আছে। দুর্নীতি রোধ, এ রকম বেশকিছু টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন আছে। যেগুলো পর্যালোচনাসহ যাচাই বাছাই করার দরকার আছে বলে আমি মনে করি।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছাড়াও এবারের সম্মেলনে বিভিন্ন পর্যায়ের নীতি নির্ধারকরা জেলা প্রশাসকদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেন। স্থানীয় প্রশাসন চালাতে এগুলো তাদের সাহায্য করে এবং করবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। জেলায় সরকারের মুখপাত্র জেলা প্রশাসকরাই মুখ্য দায়িত্ব পালন করেন।
সেক্ষেত্রে ডিসিদের এই বৈঠক সরকারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় নির্বাচনের আগে এবারের ডিসি সম্মেলনে সরকারের পরিকল্পনা বা ইশতেহার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে বিশ্বাস করি। দেশে মাঠ পর্যায়ে নানা ধরণের সমস্যা আছে। তারা সেগুলো তুলে ধরতে পারেন। দেশ জুড়ে ডিসিদের মাধ্যমেই সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয় বলে ডিসি সম্মেলন নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ। ডিসিরা কাজ করতে গেলে যেখানে বাধাপ্রাপ্ত হন সেখানেই তারা কিছু প্রস্তাব পাঠান। সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনার পর কিছু সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সরকার দেশের কল্যাণ বয়ে আনে বলে বলে আমি মনে করি।
ড.আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব