নির্বাচনে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পক্ষপাতদুষ্ট
সুষ্ঠু নির্বাচনের সবচেয়ে বড় বাধা হলো সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষপাতদুষ্টতা। একটি নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশীজন থাকে। এখন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি হবে না তা নির্ভর করছে এ সব অংশীজন অথবা স্টেক হোল্ডারের উপর। জনগণের ভোটেই নির্বাচন হওয়া উচিত। জনগণের মতামতই প্রতিফলিত হওয়া উচিত। আমাদের আশা সেটিই। একইসঙ্গে এই নির্বাচনকে ঘিরে আমাদের হতাশাও আছে।
জনগণের মতামত প্রতিফলিত হওয়ার ক্ষেত্রে কতগুলো প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে কিংবা বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারের একটি হলো নির্বাচন কমিশন অন্যটি হলো সরকার। সরকার মানে প্রশাসন অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সরকার ও নির্বাচন কমিশন স্বার্থপর হয়ে নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে। নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ না হয়ে যদি পক্ষপাতদুষ্ট হয়, যদি কোনো দলের প্রতি অনুগত হয়, তখন নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী ফলাফলকে ভণ্ডুল করতে পারে। আমরা দেখেছি নির্বাচন কমিশন ইভিএম ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনমনীয়তা দেখাচ্ছে। সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বাধা সৃষ্টি করতে পারে এবং করছেন। আমার কথা হচ্ছে যে, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যারা আছেন, তারা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন যেমন নিশ্চিত করতে পারে, আবার সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে বাধাও সৃষ্টি করতে পারে।
জনগণের মতামত বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করতে পারে নাগরিক সমাজ। গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজ তাদের সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারে। তারা জেনে শুনে বুঝে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আমার কথা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন যদি নিরপেক্ষ না হয়, তারা যদি পক্ষপাতদুষ্ট হয়, কোনো দলের পক্ষে যদি তাদের অবস্থান হয়, তাহলে কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। তেমনিভাবে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি পক্ষপাতদুষ্ট হয়, তাহলে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভবপর হবে না। সেক্ষত্রে জনগণের মতামত কার্যকর হবে না।
আমাদের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল হওয়ার অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হওয়ার পর থেকে নির্বাচন কমিশনে দলীয়করণ হয়েছে। নির্বাচন কমিশনে পক্ষপাতদুষ্ট ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, বিভিন্ন রকম কৌশলের মাধ্যমে। সেই কৌশলের মাধ্যমে পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ বহু কথা বলা যায়। তারা সম্প্রতি যে ধরনের কর্মকাণ্ড করছে সেটি দুঃখজনক। ইভিএম নিয়ে যদিও ব্যাপক জন অসন্তোষ আছে। তাদের ভাষা এরকম যে, সবার অংশগ্রহণে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন তাদের দায়িত্ব নয়। তাদের দায়িত্ব হল, ইচ্ছুক দলগুলোকে নিয়ে নির্বাচন করা। এটিতো কোনো নির্বাচন হতে পারে না। নির্বাচন মানেই হচ্ছে বেছে নেওয়া। নির্বাচন কমিশন তাদের রোডম্যাপের মাধ্যমেই তারা যে সবার অংশগ্রহণে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন করতে চায় না, এটি সুস্পষ্ট। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চরম পক্ষপাতদুষ্ট এবং আমাদের ২০১৮ সালের নির্বাচনে মধ্যরাতে যে ভোট হয়েছে, এই মধ্যরাতের ভোটের সবচেয়ে মূল ভূমিকা পালন করেছে নির্বাচন কমিশন। যেগুলো হচ্ছে আমাদের পরবর্তী নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার পথে বাধা। এইসব বাধা দূর করতে না পারলে সমস্যা হবে এবং এ ধরনের পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে কখনো দেশ ও জাতি এগিয়ে যেতে পারে না।
বদিউল আলম মজুমদার: সম্পাদক, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)
আরএ/