নিজেদের স্বার্থে পারস্পরিক সম্পর্ক মসৃণ রাখা জরুরি
মার্কিন সহকারের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর বাংলাদেশ সফর মূলত একটি রুটিন সফর। তবে এই সফরটি এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ যে, তার আশেপাশে অনেকগুলো সফর হয়ে গেছে। এটি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সফর হলে এতটা গুরুত্ববহ অথবা আগ্রহ সৃস্টি করত না।
সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব হচ্ছে, এ অঞ্চলের দেশগুেলার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও মসৃণ ও সুন্দর করা। আমাদের যেমন একজন প্রতিনিধি থাকেন যিনি দক্ষিণ এশিয়া অথবা পূর্ব এশিয়া দেখেন, উনিও তাই। এই সফরগুলো নিয়মিতই হয়ে থাকে। তারা যেমন আসেন, আমাদের ফরেন সেক্রেটারিও যান। এক ধরনের ভিজিট বিনিময় হয়। তার মানে এ রকম নয় যে, এর গুরুত্ব কম।
গুরুত্ব কম নয় এজন্য যে, বস্তুত বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কেমন হবে, সেটি নির্ধারণ করা তাদেরই দায়িত্ব। অবশ্যই সিদ্ধান্ত আরও উপর থেকে হয়, কিন্তু মূল কাজটি কিন্তু তারাই করে থাকে। তার মানে হচ্ছে, তার সফর মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান, বিশেষ করে বাংলাদেশের ব্যাপারে সেটি তার বিষয় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেটি তিনি ব্যাখ্যা করেছেন এবং উপস্থাপন করেছেন আমাদের সিনিয়র অফিসারদের সঙ্গে। অন্যদিকে, আমাদের সরকারেরও কিছু বক্তব্য আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে।
আমাদের যে জিএসপি সুবিধা ছিল সেগুলো বর্তমানে চালু নাই।পার্লামেন্টের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সেটি পুনরায় শুরু হতে পারে। সেটি যদি হয় তাহলে বাংলাদেশের জন্য জোড়ালোভাবেই বিবেচনা করা হবে বলে মনে করি। যখন জিএসপি সুবিধা বাতিল করা হয়, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে কারণেই দিয়েছিল, সেগুলো আমরা পূরণ করেছি। সেদিক বিবেচনায় জিএসপি সুবিধা পূরণ করা নীতির প্রশ্নে বাংলাদেশের জন্য সঠিক আছে। আমরাও আশা করি, নতুন করে যদি জিএসপি সুবিধা চালু হয়, বাংলাদেশে জন্য সেটি আশা করা যায়।
এ ছাড়া, গত বছরে কিছু বিষয়ে যখন একটু তিক্ততা দেখা গিয়েছিল দুই পক্ষের সম্পর্কের মাঝে, সে অবস্থান থেকে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। যদিও তিনি খুব ভদ্র ভাষায় হাসিমুখে কথাগুলো বলেছেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানগুেলা পুনর্ব্যক্ত করেছেন আগামীতেও গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলতে থাকবে, সেটিও কিন্তু উনি নিশ্চিত করে গেছেন।
কাজেই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এর আগে যে কথাগুলো অস্বস্তিকর ছিল দেশের জন্য, সেটির কোেনা পরিবর্তন হবে না। সেটি আগে যা ছিল তাই থাকবে। কথাটি এজন্যই বলছি, আগামীতে একটি নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষের জন্য আছে। এ কারণে সবাই এটি নিয়ে সচেতন। পশ্চিমা দেশগুলোও তাদের যে অভ্যন্তরীণ নীতি, সেই নীতিরই অংশ হচ্ছে, বিভিন্ন দেশে এগুলোকে প্রচার করা। তার অংশ হিসেবেই তারা এটি করে এবং তারা এটি করতে থাকবে। র্যাবের বিরুদ্ধে যে নিষেধাজ্ঞা আছে, সেটি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তাদের একটি প্রক্রিয়া আছে এবং তারা এর মধ্য দিয়েই যাবে।
আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রে শক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যারা শক্তিমান তারা সেটির প্রভাব রাখবে এবং কখনো কখনো ব্যর্থ হবে। একটি দেশ যে সবাইকে একই দৃষ্টিতে দেখবে এমন নয়। বিষয়টি আপেক্ষিক বলা যায়। তবে নিজেদের স্বার্থেই পারস্পরিক সম্পর্ক মসৃণ রাখতে হবে।
মো. তৌহিদ হোসেন: সাবেক পররাষ্ট্রসচিব