বিড়ম্বনা ও বৈষম্য নিরসনের মাইলফলক হতে পারে মেট্রোরেল
অনেক প্রতীক্ষার পর মহানগরী ঢাকাতে মেট্রোরেল উদ্বোধন করা হয়েছে। বিলম্বে হলেও এটি আমাদের জন্য একটি আনন্দের খবর। মেট্রোরেল উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থায় একটি নতুন মাত্রা যুক্ত হলো। যানজট নিরসনের পাশাপাশি জনমানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা আংশিক হলেও সুন্দর ও সহজ হলো।
গণপরিবহন ব্যবস্থায় একটি বিশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা সবসময়ই আমরা লক্ষ্য করেছি। এখানে সেবার মান নিয়েও নানা প্রশ্ন আছে। সেক্ষেত্রে মানুষের বিড়ম্বনা ও বৈষম্য নিরসনের মাইলফলক হতে পারে মেট্রোরেল।
এটি যথাযথভাবে সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হলে নগরীর সাধারণ মানুষ সুফল পাবেন। আরামদায়ক ও নির্ভরযোগ্য পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে আধুনিক ঢাকা গড়ে তোলা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি। মেট্রোরেল ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা সেই পথে আরও এক ধাপ অগ্রসর হলাম এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
বহিঃবিশ্বে বিশেষ করে ইউরোপে মেট্রোরেলে যাত্রীর চাহিদা অপেক্ষাকৃত কম। কিন্তু ঢাকায় যাত্রীদের ঘিরে এর অমিত সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মেট্রোরেল পরিকল্পিতভাবে করতে না পারলে ফলাফল খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্টেশনের কাছে ছোট পরিবহন পৌঁছার ব্যবস্থা অবশ্যই থাকতে হবে। আবার স্টেশনে নেমে যাতে সেখান থেকেই গন্তব্যে যেতে পরিবহন পাওয়া যায়, সে ব্যবস্থা থাকতে হবে।
যদি স্টেশনে নেমে গাড়ি পেতে অনেক দূর যেতে হয়, তাহলে গণপরিবহন ব্যবস্থার সেই উন্নয়নকে সার্বিকভাবে কার্যকর বলা যাবে না। স্টেশনের কাছে যাতে ছোট পরিবহন দাঁড়াতে পারে তার জন্য পর্যাপ্ত স্থান রাখতে হবে। এটা করা না গেলে যাত্রী ক্ষুব্ধ হবেন। নিচের সড়কেও যাতে যানজট না হয়, সে লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। সার্বিক বিষয়ে নিবিড় নজরদারির মাধ্যমে বসবাসযোগ্য ঢাকা গড়ে তোলা সম্ভব।
আমাদের কাজের ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা দূর করতে হবে। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, সরকার সরাসরি সেবা দিতে পারে না। পাটকল, রেল ও বিমান খাতের দিকে তাকালে এর সত্যতা পাওয়া যাবে। সরকারি প্রতিষ্ঠান সরাসরি পরিচালনার দায়িত্ব নিলে তা টেকসই হয় না। এ জন্য পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে ছেড়ে দিলে মেট্রোরেলের সুফল বেশি আসবে। সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্তরা অবহেলার সুযোগ খোঁজেন। স্টেশন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে নানা অনিয়ম দেখা যায়। মেট্রোরেলের স্টেশন পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া এবং নামার পর গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব একসঙ্গে দিতে পারলে ভালো হতো। মেট্রোরেলের ভাড়া সহনশীল রেখে এটিকে আমজনতার বাহনে রূপ দেওয়া দরকার। তাই তাদের কথা চিন্তা করে ভাড়া নির্ধারণ করা উচিত।
প্রসঙ্গত বলতে চাই যে, একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করাই শেষ কথা নয়। সেটি সঠিকভাবে পরিচালনা করাও খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রসঙ্গত, হাতিরঝিল প্রকল্পটি আমার করা ছিল। কিন্তু কাজটি হয়ে যাওয়ার পর থেকে সেটিকে পরিচ্ছন সুন্দর জনবান্ধব রাখার যে প্রচেষ্টা, সেখানে ঘাটতি দেখা যায়। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা পানিশোধনসহ সকল কাজের জন্য লোক আছে। এরা বেতনও নিচ্ছে কিন্তু দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে না। সঠিক মনিটরিং হচ্ছে না। কাজেই আমি মনে করি, সার্ভেভিত্তিক ও টেকসই জনমুখী উন্নয়ন জরুরি।
ড. শামসুল হক: গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ; অধ্যাপক, পুরকৌশল বিভাগ, বুয়েট