অর্থনৈতিক মন্দা নিরসনে সময়মত কাজ করতে হবে
আমার প্রথম কথা হচ্ছে যে, একদিনে কিন্তু অর্থনীতিতে বড় কোনো পরিবর্তন আসে না। আমাদের যে চ্যালেঞ্জগুলো আগে এসেছে, সেই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার চেষ্টা আগে করতে হবে। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় তহবিল অনেক কমে গেছে। এক বছর আগে এটি ছেচল্লিশ বিলিয়ন ডলার ছিল, এখন এটি তেত্রিশ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এখন এই বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভটি কীভাবে বাড়ানো যায়, সেটিও চেষ্টা করা দরকার। এমনিতেই মূল্যস্ফীতি গত দশ-বারো বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছে। রেমিট্যান্সের অবস্থা খুব একটা সন্তোষজনক নয়।
রেমিট্যান্স বাড়ানোর জন্য আমাদের দক্ষ শ্রমিক বিদেশে পাঠানো দরকার। সেটি একটি চ্যালেঞ্জ। দক্ষ শ্রমিক হলে তাদের যেখানেই পাঠানো হোক না কেন, তারা বেশি উপার্জন করতে পারবে এবং বেশি মাত্রায় দেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারবে।
দেশে আয় বৈষম্য ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। সেটি ক্রমান্বয়ে কমানোর জন্য চেষ্টা করা লাগবে। কোভিড ১৯ এর অতিমারির কারণে দারিদ্রসীমার নিচে লোকের সংখ্যা বেশি হয়ে গেছে। আগে বলা হত প্রায় ২০ শতাংশের মত। এখন বিভিন্ন সার্ভে থেকে বলা হয় এটি প্রায় ৩০ শতাংশের মত। সেজন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর নিরাপত্তা বাড়ানো লাগবে এবং সুষ্ঠু বিতরণের বিষয়টি নিশ্চিত করা লাগবে।
আরও একটি বিষয় হলো— গোটা বিশ্বের অ্ধিকাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকই ডলারের বিপরীতে নিজস্ব মুদ্রার কমবেশি অবমূল্যায়ন করছে। এই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তরফ থেকে বৈদেশিক মুদ্রার বৈদেশিক নিয়মিতভাবে প্রয়োজনবোধে ভ্যালু্য়েশন করার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেটিকে স্বাগত জানাতেই হবে। পাশাপাশি আমদানি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। যে কোনো মূ্ল্যেই ডলারের যথেচ্ছা ব্যবহার বা উল্টাপাল্টা ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। সব ধরনের বিশেষ করে বিলাসী পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণের সময় এসেছে।
সবচেয়ে বড় কথা হল, আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমদানি শিল্পের প্রসারকে উৎসাহিত করার এখনো প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে দ্রুত বদলে যাওয়া বিশ্ববাণিজ্যের এই সংকটকালে কথাটি আরও বেশি প্রযোজ্য এবং সেটি আমাদের আমলে নিতে হবে। এজন্যে এনবিআর বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে। বিনিময় হার কীভাবে অনুকূলে নিয়ে আসা যায় সেজন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে। আমাদের রেমিট্যান্স বাড়ানোর প্রক্রিয়া আরও ফলপ্রসূ করার চেষ্টা করা লাগবে। বাজার বিচিত্রকরণ করার প্রয়োজন আছে।
রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আরও দক্ষ লোক নিয়োগের প্রয়োজন আছে। যাতে করে তারা দেশীয় উপার্জন বৃদ্ধি করতে পারে। মোট কথা অর্থনৈতিক মন্দা নিরসনে আমাদের আরও গঠনমূলক চিন্তাভাবনা করতে হবে। সেজন্য সময়মতো কাজ করতে হবে। যাতে করে এই প্রকল্পগুলো থেকে আমরা সর্বোচ্চ কাঙ্ক্ষিত সুফল পেতে পারি।
এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা
আরএ/