বৈশ্বিক কঠিন সময়ে শান্তি অনিবার্য
আমরা নতুন বছরে পদার্পণ করেছি। প্রথমত যে বিষয়টি হলো— গেল বছর পৃথিবীর জন্য খুব একটা ভালো সময় যায়নি। মনে হচ্ছিল রোগ শোক কেটে উঠে তারপর হয়ত ভালো অবস্থায় যাবে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে পরিস্থিতি আবার একইরকম এবং আমি বলব তা আরও খারাপ হয়েছে। কারণ জ্বালানি সংকট যেভাবে শুরু হয়েছে, তাতে করে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের জন্য অসুবিধা হয়েছে বেশি।
বাইরের কারণে আমাদের জ্বালানি নির্ভরতা খুব বেশি বেড়ে গিয়েছিল এবং আমরা চেষ্টাই করিনি নিজেদের একটা সক্ষমতা বের করার। ব্যবসায়ীরা বরং পছন্দ করেছেন যে, তারা আমদানি করবেন এবং সেখান থেকে লাভ করে নেবেন। দেশের এস্কেলেটর সেখানে তাদের কোনো লাভ নেই। এটি এক এক জনের এক এক রকম স্বার্থ। যেকারণে অর্থনীতি খুবই কঠিন সময় পার করছে। যেটি দরিদ্র মানুষের জন্য অনেক বেশি কঠিন সমস্যা সৃষ্টি করেছে।
বহিঃবিশ্বের সঙ্গে বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টানাপোড়েন শুরু হয়েছিল। র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের এ টানাপোড়েন। এ বছরও তারা কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তবে আমাদের দেশে দেয়নি সেটি নিয়ে একধরনের সন্তুষ্টি আছে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টানাপোড়েনটি রয়েই গেছে। এটি পুরোপুরি দূরীভূত হয়নি। তবে বিষয় হচ্ছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টানাপোড়েন থাকলেই যে তাদের সঙ্গে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য কমে গেছে তা নয়। মোটামুটিভাবে মার্কিনীদের সঙ্গে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বেড়ে গেছে, কমেনি। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক গতানুগতিক পর্যায়ে। বড় কোনো পরিবর্তন নেই। নতুন কোনো অগ্রগতি কোনোখানেই নেই এবং আমাদের যে সমস্যা হচ্ছিল সেগুলো কোনোটাই কোনোদিকে এগোয়নি।
ইউরোপের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক মোটামুটি ভালো আছে। আমাদের কিছু বিষয়ে তাদের আপত্তি ছিল। শ্রমিকদের অধিকার ও অযৌক্তিক অভিবাসন ইত্যাদি সমন্বয় করে ইউরোপের সঙ্গে এখন মোটামুটি ভালো সম্পর্ক চলছে। রাশিয়ার সঙ্গে শেষ মুহূর্তে একটি টানাপোড়েন চলছে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা নিয়ে। তবে রাশিয়ার চেয়েও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ সবদিক বিবেচনায়।
নতুন বছরটি আসলে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বছর। পশ্চিমারা যেহেতু নির্বাচন নিয়ে প্রচুর উৎসাহ দেখাচ্ছে, কাজেই এক্ষেত্রে যে কি হবে তার উপরই নির্ভর করবে আমাদের বৈদেশিক সম্পর্ক। এ ছাড়া রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রেও কিছুটা সমস্যা আছে। গতবছর বেশ কমেছে। আমরা আশাবাদী হতে চাই যে, সেটি আমরা কাটিয়ে উঠতে পারব। তবে সরকারের আরও একটু কঠোর হওয়া উচিত যারা শ্রমিক পাঠায় তাদের ব্যাপারে। চুক্তি আশি হাজার টাকা, অথচ তারা নেয় সাড়ে তিন লাখ টাকা। এটি থেকে আমরা যদি মুক্তি না পাই, তাহলে শ্রমিক প্রেরণের বিষয়ে সমস্যা রয়েই যাবে। সৌদি আরব ছাড়া বলা যায়, কোথাও কোনো শ্রমিক যাচ্ছেই না। এটি খুবই হতাশাব্যঞ্জক। সেক্ষেত্রে আমাদের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে যে, ট্র্যাডিশনাল যে এরিয়াগুলো আছে ,সেখানে শ্রমিক যেন যেতে পারে, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করা।
আমি আশা করি যে, ২০২৩ অপেক্ষাকৃত ২০২২ এর চেয়ে ভালো যাবে এবং সংঘাতের যে পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে আছে এখন সেটি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। সেক্ষেত্রে আমি আশাবাদী হতে চাই যে, তারা দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে না দিয়ে বরং আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করবেন। তারা অবশ্যই যে বিষয়টি লক্ষ্য রাখবেন তা হলো— মানুষ যেন শান্তিতে থাকতে পারে বিশেষ করে এই কঠিন সময়ে।
মো. তৌহিদ হোসেন: সাবেক পররাষ্ট্র সচিব
আরএ/