মেট্রোরেলের যাত্রা একটি যুগান্তকারী ঘটনা
আমাদের জন্য খুবই আনন্দের বিষয় যে, ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেল ৬-এর (আংশিক) উদ্বোধন হল। এটি অভিনন্দনযোগ্য এবং প্রশংসনীয় একটি কাজ। ঢাকার পরিবহন যোগাযোগের ক্ষেত্রে মেট্রোরেলের শুরু, এটি একটি যুগান্তকারী ঘটনা বলেই আমি মনে করি।
এখন যদিও খুব সীমিত পরিসরে চালু হলো। তবে মেট্রোরেল ৬ এর প্রস্তাবিত ও পরিকল্পিত চিত্রটি আমরা জানি। আর সেটি হলো— ৬টি লাইন হবে। তার মধ্যে এটি প্রথম শুরু হল। উত্তরা থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত চলবে মেট্রোরেল। এখন যে অংশটি শুরু হলো সেটি উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত। ছয়টি মেট্রোরেল সম্পন্ন হতে কতদিন সময় লাগবে বলা খুবই কঠিন। কারণ প্রথমটিও নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় লেগেছে। এখন আগামীতে এর বাকি অংশ এবং বাকি পাঁচটি মেট্রোলাইনের কাজ সম্পন্ন করা গেলে ঢাকার পরিবহন ক্ষেত্রে বিশাল অবদান রাখবে মেট্রোরেল।
ঢাকাতে যানজট শুধুমাত্র যে মেট্রোলাইন অথবা বাস লাইনের অভাবের জন্যই হয়—বিষয়টি তা না, এখানে অনেক বিষয় এর সঙ্গে যুক্ত। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো এর ব্যবস্থাপনা। সেখানে আমাদের প্রচণ্ড ঘাটতি আছে। সুতরাং নতুন নতুন আধুনিক লাইন লাগবেই। আধুনিক ব্যবস্থাপনাতো লাগবেই। কিন্তু ভৌত অবকাঠামো অথবা পরিবহন ব্যবস্থা করলেই যে সব সমাধান হবে, তা কিন্তু না। এটির পাশাপাশি আগেই সুস্থ ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি।
যাইহোক, সংক্ষেপে যদি বলি, এই যে মেট্রোরেল শুরু হল এবং সেক্ষেত্রে আশা করা যায় যে, মেট্রোলাইনের বাকি অংশ বলা হয়েছে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ হবে। হলে খুবই ভাল। তাহলে অন্তত উত্তরা থেকে মতিঝিল এই দূরত্ব অর্থাৎ মানুষ এই ভ্রমণটি সহজেই করতে পারবে সীমিত খরচের মধ্যেই। আমরা সে ব্যাপারে খুবই আশাবাদী।
বাকি পাঁচটির কাজও শুরু হোক। যতক্ষণ পর্যন্ত না সবকটি মেট্রোলাইন সম্পন্ন হচ্ছে, ততক্ষণ কিন্তু ঢাকার যোগাযোগ ও যানযট নিরসন, যোগাযোগ উন্নতিকরণ এতে আংশিক অবদান রাখতে পারবে— তা খুব বেশি নয়। পাশাপাশি বাস পরিবহন সেটিও উন্নতি করতে হবে। ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে নগর পরিবহন প্রকল্প। এরকম আধুনিক ব্যবস্থাপনায় নতুন নতুন গণপরিবহন আনতে হবে। যেটি পরিবেশ ব্যবস্থাপনা রয়েছে সেটিকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে হবে। কাজেই আমি এটিই বলব যে, মেট্রোরেল শুভ উদ্বোধন, শুভ পদক্ষেপ এবং আমাদের আধুনিক পরিবহনে অর্থাৎ মহানগর যোগাযোগে ও পরিবহনে ঢাকায় বিরাট ভূমিকা পালন করবে।
আমি মনে করি যে, এটি একটি প্রতীক। এই প্রতীকী ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ করা অত্যন্ত জরুরি। অর্থাৎ বাদবাকি পাঁচটি লাইনও নির্মাণ করা। পাশাপাশি বাস রেপিড ট্রানজিট যেটি গাজীপুর থেকে বিমান বন্দর পর্যন্ত এখনো প্রকল্প নির্মাণ চলছে। বহুদিন লাগছে অর্থাৎ অনেক বেশি সময় লাগছে। সেটি সম্পন্ন করা এবং অন্যান্য রেপিড ট্রানজিটসহ আরও কয়েকটি লাইন, সেগুলোও শেষ করতে হবে।
সার্বিকভাবে গণপরিবহনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হচ্ছে বাস। এ বাসের ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে। এ ছাড়া ব্যক্তিগতগাড়ি ব্যবহার, যেমন প্রাইভেটকারসহ অন্যান্য যেগুলোও যানজটের মূল কারণ— সেটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা, ব্যবস্থাপনার মধ্যে রাখা। পাশাপাশি হল, অপ্রাতিষ্ঠানিক পরিবহন যেটিকে বলে, ইনফরমাল ট্রান্সপোর্ট যেমন রিকশা, অটোরিকশা, এগুলো বড় ভূমিকা রাখে, কিন্তু এখানেও ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে সঠিক ভূমিকাটি রাখতে পারছে না।
এ সব কিছু মিলিয়েই আমি বলব, পরিবহন সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে হবে। সরকারের যেসকল পরিকল্পনা আছে, সেগুলো খুবই যোগ্যতার সাথে, সক্ষমতার সাথে দক্ষতার সাথে এটি বাস্তবায়ন করতে হবে। তা হলে আমাদের রাজধানী মহানগরী ঢাকা এর পরিবহন, যোগাযোগ, ইত্যাদি বিষয়ে উন্নত ব্যবস্থা আমরা আশা করতে পারব এবং অব্যবস্থা যেটি আছে, সেটি দূরীভূত হবে। আপাতত এটুকুই আশা রাখি।
নজরুল ইসলাম: নগর পরিকল্পনাবিদ
আরএ/