‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্য কথায় ও কাজে স্বাক্ষর রাখবে
আমরা ইতিমধ্যেই ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণের প্রক্রিয়ায় আছি। সবক্ষেত্রে বিশেষ করে সেটি নির্বাচন অথবা সম্মেলন যেভাবেই বলি না কেন, একটি স্লোগানকে প্রতিপাদ্য করলে সুবিধা হয়। সেই হিসেবে এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’।
স্লোগানটি তারা সচেতনভাবেই দিয়েছে বলে মনে হয়। স্মার্ট বাংলাদেশ শব্দটির মধ্যে একটি বিষয় নিশ্চয় আছে, যেটি হলো বাংলাদেশকে একটি ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। সে হিসেবে শব্দটির মধ্যে একটি নতুনত্বও আছে বলা যায়। আমার কথা হচ্ছে, এক্ষেত্রে নির্বাচন পর্যন্ত বাংলাদেশের রূপরেখা কী হবে সেটিও একটি বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে হচ্ছে।
আমরা যদি বড় বড় দেশগুলোর দিকে তাকাই দেখব, বৃহত্তর স্বপ্ন তৈরি করতে বৃহত্তর স্বপ্ন দেখতে হয়। একটি স্বপ্ন না থাকলে কিন্তু সামনের দিকে এগিয়ে চলা সম্ভব হয় না। যদি আমেরিকার দিকে তাকাই অথবা সাম্প্রতিক সময়ে চীন নিজেদের ভেতর যে সার্কেল তৈরি করেছে সেখানেও যদি ইতিবাচকভাবে চিন্তা করি, তাহলে দেখব, এরা একটা ডায়াস ইতিমধ্যে তৈরি করেছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ট্যালেন্টকে তারা কাজে লাগিয়েছে। এবার দেশের কথা বিবেচনায় রেখে বলব, যে স্লোগান নিয়ে আওয়ামী লীগের এবারের সম্মেলন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ সেক্ষেত্রেও বলব, একটি স্বপ্ন তাদের মধ্যেও কাজ করছে বলেই প্রতীয়মান হয়। সে ব্যাপারেই বাংলাদেশ চিন্তা ভাবনা করছে।
এখন দেখার বিষয় হচ্ছে এর উপাদানগুলো কী কী? সেই অবকাঠামোর মধ্যেও স্মার্ট বাংলাদেশে কী কী থাকবে? শিক্ষার ব্যাপারে কী থাকবে? স্বাস্থ্যের ব্যাপারে কী থাকবে? সংস্কৃতির ক্ষেত্রে স্মার্ট বাংলাদেশ মূলত কী ভূমিকা রাখবে? এই বিষয়গুলো আমরা প্রত্যেকেই দেখতে চাইব। সেটির একটি ভিত্তি মনে হচ্ছে তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশের জন্য একটি কাঠামো তৈরি করাঅত্যন্ত জরুরি। সমাজের উচ্চবিত্ত শেণি যারা আছেন, তারা আসলে কী ভাবছেন? সকল সেক্টরের কথাই আমি বলছি। বিশেষ করে একজন শিক্ষক হিসেবে আমি বলব, এরা অধিকাংশই বাংলাদেশের উপর ভরসা রাখতে পারছে না। এদের বেশির ভাগের ছেলেমেয়েরা অধিকাংশই বিদেশে থাকে। সে জায়গায় পরিবর্তন যদি না আনা যায়, পরিবর্তন নিয়ে আসা খুব সহজ হবে বলে মনে হয় না। তবে দেশের প্রতি আস্থা স্থাপন করতে পারলে তারা যদি ফিরে আসে, অর্থাৎ দুর্নীতির কথা যেটি বলছি, দেশের সম্পদ অথবা অর্থ যেভাবেই বলি না কেন, সেটি সংরক্ষণ করা জরুরি।
এই শ্রেণির ছেলে-মেয়েরা যারা বিদেশে থেকে যায়, তাদের বাবা মায়েরাও কিন্তু একটা সময় অবসরে যাওয়ার পরে তাদের বাড়ি ঘর বিক্রয় করে দিয়ে বিদেশে পাড়ি জমায়। অনেকে আবার দূর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে যায়। এই দুর্নীতির অর্থ যদি পাচার না হয়ে বিনিয়োগ করা হতো বাংলাদেশে সেটি দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখত। কারণ, টাকাটাতো আমি বালিশের নিচে রাখতে পারছি না।
আমাদের দেশের দুর্নীতি ও আমেরিকার দুর্নীতি দুটি আবার ভিন্ন রকম। আমেরিকায়ও দুর্নীতি হয়। আমেরিকার দুর্নীতির অর্থ আমেরিকায়ই বিনিয়োগ হয়। কিন্তু আমাদের দেশের দুর্নীতির অর্থ দেশে বিনিয়োগ হয় না। এটির ইনভেস্টমেন্ট হয়, বিদেশে। সেটি আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, দুবাই অথবা কানাডাতে। কাজেই আমরা যদি নিজের দেশের দিকে দৃষ্টি দিই, ছেলে-মেয়েদের বিদেশপ্রীতি দূর করতে সচেষ্ট হই, আমাদের এখন দেখা দরকার আসলে আমরা কী ধরনের স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরি করছি অথবা তৈরি করতে চাই।
সেক্ষেত্রে বিদেশপ্রীতি অর্থাৎ মানিলন্ডারিং এটি থামানো যায় কি না। এর পেছনে সুদূরপ্রসারি একটি চিন্তাভাবনা, দেশকে উন্নত দেশ হিসেবে অনেক দূর নিয়ে যাওয়ার যে প্রতিশ্রুতি, ২০৪০ এর মধ্যে, সেটি তখন সত্যিকার অর্থেই সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
ড. ইমতিয়াজ আহমেদ: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্লেষক