দেশের স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক জরুরি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেক কারণেই আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। সেটি অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক, সামাজিক- সবদিক থেকেই দেশটির সঙ্গে আমাদের বেশ সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক। দেশের জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে। কাজেই অনেকভাবেই আমরা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত।
বহুপাক্ষিকভাবেও আমাদের আমেরিকার সঙ্গে নানাবিধ সম্পৃক্ততা আছে। যেকোনো বিচারেই একটি বড় শক্তি। সেখানে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা কার্যক্রম আমরা পরিচালনা করছি, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় ধরনের অবদান আছে। কোভিডের সময়ও যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতেও যুক্তরাষ্ট্র আমাদের শক্তিশালি সমর্থন দিয়েছে আমরা জানি।
কূটনৈতিক পরিমণ্ডলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বন্ধু। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এটির একটি গুণগত প্রভাব আছে। তবে কূটনৈতিক সম্পর্কে হালকা টানাপোড়েনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দুই দিকেরই চাহিদা নিয়ে আলাপ-আলোচনা হওয়া দরকার। স্বাধীনতার সময় থেকেই মার্কিন জনগণ আমাদের সমর্থন করে গেছে। কারণ এটি একটি ন্যায়সংগত উদ্যোগ। কাজেই বলা যায় কূটনৈতিক জায়গাটিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অন্যরকম এবং সেটি বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই বিদ্যমান।
আমাদের সাহায্যের একটি বড় অংশই কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে। তবে এটি ঠিক যে, গত কয়েক বছর ধরে সেটি পরিবর্তিত হচ্ছে। আগে যেটি ছিল সাহায্য নির্ভরতা এখন সেখান থেকে বাণিজ্য নির্ভরতার দিকে গিয়েছি। কাজেই এই বাণিজ্য নির্ভরতায় যাওয়াটা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্মানের জায়গাটি প্রসারিত করেছে। এবং প্রায় বিশ বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের এক নম্বর এক্সপোর্ট ডেস্টিনেশন। রপ্তানিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিরাট ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এ ছাড়াও আমাদের আরও বেশ সুযোগ সুবিধা ছিল। তাদের ও আমাদের ভূল বোঝাবুঝির কারণে সেটি কিছুটা পিছিয়েছে। সুযোগগুলো আমরা ব্যবহার করতে পারিনি। আমাদেরও সুযোগগুলো নেওয়া উচিত ছিল।
বাংলাদেশের সামগ্রিক স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে কূটনৈতিক পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বজায় রাখতে যত্নশীল হতে হবে।
বিশেষ দেশের সঙ্গে আমরা কী চাই, ওরা কী চায়— তা নিয়ে কথাবার্তা বলে বুঝে নিলেই ভালো হয়। কারণ ওরা যেমন বাংলাদেশকে স্থিতিশীল দেখতে চায়, শান্তিপূর্ণ দেখতে চায়, আমরাও তা চাই। আমরাও ব্যবসা-বাণিজ্য ও নানা বিষয়ে তাদের ওপর নির্ভরশীল। এ সব বিবেচনায় ঠাণ্ডা মাথায় আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
দুই পক্ষই যদি অনড় থাকে তাহলে ক্ষতি আমাদেরই বেশি। কারণ রপ্তানি, রেমিট্যান্স ও কূটনৈতিক সমর্থনের মতো বিষয়গুলোতে আমরা তাদের সঙ্গে কাজ করি। তাই বাংলাদেশের সামগ্রিক স্বার্থ মনে রেখে, সম্পর্কের গতি-প্রকৃতি মূল্যায়ন করে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ইতিবাচক জায়গায় রাখতে যত্নশীল হতে হবে। আমরা যদি সম্পর্কের ইতিবাচক দিকটিকে গুরুত্ব দিই অর্থাৎ সমস্যার চেয়ে সমাধানের দিকে মনযোগী হই, সেটি সবার জন্যই মঙ্গলজনক হবে।
হুমায়ূন কবির: সাবেক রাষ্ট্রদূত
আরএ/