সব দলের অংশগ্রহণে জনবান্ধব নির্বাচন হোক
নির্বাচন ব্যবস্থা হলো সাংবিধানিক নিয়ম অনুসরণ করে জনগণের মতামত জানানোর ব্যবস্থা। ভোট একটি দেশের জনগণের অন্যতম গণতান্ত্রিক অধিকার। এর মাধ্যমে জনগণ কোনো ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় আসার জন্য নির্বাচিত করে। স্বচ্ছ্বতা ও দায়বদ্ধতাকে গণতন্ত্রের একটা স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এজন্য অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন রাজনৈতিক-গণতন্ত্রের একটি আবশ্যিক পূর্বশর্ত। যে ধরনের নির্বাচনী ব্যবস্থাই অনুসরণ করা হোক না কেন তাতে জনগণের অবাধ ভোটাধিকার প্রয়োগ ও ভোটের মাধ্যমে জনগণের প্রকৃত ইচ্ছা ও মতামতের প্রতিফলন নিশ্চিত করা নির্বাচনের প্রাথমিক ও মৌলিক উপাদান।
কিন্তু আমাদের জাতীয় নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচনগুলো প্রশ্নবিদ্ধ। গত দুই নির্বাচনেও আমরা ভালো কিছু দেখিনি। নানা কারণেই দেশের মানুষজন নির্বাচনে ভোট দিতে না পেরে ভোট বিমুখ হয়ে পড়েছেন। প্রকৃত ভোটাররা নির্বাচন কেন্দ্রে যায় না। ভোটার হিসেবে যারা যায় তারা আবার গিয়ে দেখে যে, তাদের ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। অনেকেই ভোট কেন্দ্রের বাইরে থেকে ফিরে আসেন। নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে বিগত সময়গুলোতে যেমন প্রশ্ন উঠেছিল বর্তমান সময়েও একইরকমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। বর্তমান অবস্থা আগামীতে আরও বাড়বে। পরিস্থিতি আরও সংঘাতময় হবে। কাজেই নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হবে। নির্বাচনের আগে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত থাকবে বলে মনে হয় না। সেটি মানুষের জীবনের উপরে যেমন প্রভাব ফেলবে, সমাজের উপরেও প্রভাব বিস্তার করবে ব্যাপকভাবে। যা দেশের জন্য কোনোভাবেই ভালো কিছু বয়ে আনবে না।
দেশের উন্নয়নের জন্য, দেশের অর্থনীতির জন্যও এটি ভালো কোনো খবর নয়। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকা মানে সাধারণ জনগণের ভোগান্তি। অনেকেই ইচ্ছাকৃত ভায়োলেন্স ঘটায় জনগণের সম্পৃক্ততা রাখতে চায় না বলে। পলিটিক্যাল কনফ্লিক্ট আমরা যেটি দেখছি, সবসময়ই জনগণের বিরুদ্ধে গেছে। এই অবস্থা চলমান এবং সেটি আগামীতে আরও ব্যাপকমাত্রায় বাড়বে বলেই মনে হচ্ছে।
কাজেই সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা যতই বলুক না কেন মানুষের বিশ্বাস কোথা থেকে আসবে? বিশ্বাসতো অতীত ও বর্তমান থেকেই আসবে। সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলে যে কাজগুলো করছে, যেসব কার্যক্রম আমরা দেখছি, সরকারি দলও তার অংগ সংঘটন, ছাত্রলীগ, পুলিশ ইত্যাদি ক্ষেত্রে সেরকম ভালো কিছুতো দেখা যাচ্ছে না।
যাইহোক, আমরা চাই সবকিছুর পরেও একটি গঠনমূলক জনবান্ধব নির্বাচন হোক। সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন সংঘঠিত হোক। জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে সরকার স্বচ্ছতার পরিচয় দিক এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে এখন থেকেই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করি।
লেখক: সাবেক নির্বাচন কমিশনার
আরএ/