সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৭ পৌষ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

'বাংকারের ভেতর কত সোনা গহনা দামী দামী জিনিস পড়েছিল'

বীরাঙ্গনা ললিতা নমশুদ্রের দুর্বিষহ জীবন

ললিতাদের বাড়িতে যেতে হলে আগে সিলেট যেতে হবে। সিলেট থেকে যেতেই বারটা বেজে যায়। প্রথমে ঘন্টা দুই গড়িতে করে যাই। রাস্তা বেশ ভাল। রাস্তায় নেমে চা নাস্তা খেয়ে আবারও রওনা দিলাম। পিচ করা রাস্তা। কোথাও একটুও ভাঙ্গা নেই। বুঝাই যাচ্ছে, নতুন করেছে রাস্তা। রাস্তার দুই পাশে বড় বড় পুরনো গাছ ডালপালা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সেইসব ডালপালা পাতার ছায়ায় ঝলমল আলোর মাঝে বেশ লাগছে সামনে দেখতে। গাড়িও চালাচ্ছে ভাল। আর রাস্তার দু’পাশে যত দূর চোখ যায় সবুজসহ নানান ধরনের সবজি ক্ষেত দেখা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে একটা চমৎকার সময় পার করছি। ঘন্টা দুই দেখতে দেখতে চলে গিয়েছে। হঠাৎ গাড়ি থামিয়ে দিয়ে ড্রাইভার সাহেব বললেন, এখন নামতে হবে। কেন? গাড়ি আর যাবে না। আমরা গাড়ি থেকে নেমে মিনিট পাঁচেক হাটার পর দেখি নদী। এই নদী পার হতে হবে। নৌকা একটা ভিরে গিয়েছে। আর একটা নৌকা ঐপারে। আমরা ঘাটে দাঁড়িয়ে আছি। নদীর মৃদু বাতাসে শরীর জুড়িয়ে গিয়েছে। এমন সময় চোখ পড়েছে একটা চায়ের দোকানের দিকে। গেলাম সেই দোকানে। দোকানে আরও বেশ ক’জন দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে। বিস্কুট, কলাসহ টুকটাক আরও কিছু আছে দোকানে। কিন্তু চা’য়ের সঙ্গে বিস্কুট আর কলা চলছে বেশি। দোকানদারের কাছে আমরাও একটা চা চাইলাম। দোকানদার খুব দ্রুত কমপক্ষে আট দশ রকমের নাম বলে ফেলেছেন। অনেক রকমের চা প্রতিদিনই বানায়। আমরা খেতে খেতে নৌকা ঘাটে পৌঁছে গিয়েছে। আমরা নৌকায় উঠি। নদী পার হয়ে অটোতে করে আবার কিছুদূর যাওয়ার পর নেমে হাঁটতে থাকি। এবার হাঁটা ছাড়া আর কোন ব্যবস্থা নেই। ঘন্টাখানেক হাঁটার পর পৌঁছাই একটা ছোট বাজারের রাস্তার ওপর। সেখানে বসে আবার চা খেয়ে কিছুদূর হাটার পর ললিতাদের বাড়ি পৌঁছালাম। গিয়ে দেখি, যে ললিতার খোঁজে এসেছি এটা সেই ললিতা নয়। আমরা ভুল করে অন্য গ্রামে চলে এসেছি। তখন আবার ফিরে যাই ললিতার খোঁজে। অনেক খোঁজার পর আসল ললিতার খোঁজ পেলাম।

ললিতা থাকেন একটি বস্তিতে। বস্তিটা বেশ বড়, এক-দেড়শ পরিবার থাকে। বস্তির পরিবেশটা খুবই খারাপ। ঐ বস্তিতে ছোট মাঝারি সাইজের বাচ্চা ৮০/৯০ টিরও বেশি হবে। সব বাচ্চাই অপুষ্টিতে ভুগছে। তাদের জামা কাপড় খুবই নোংরা। প্রতিটি ঘরই নোংরা, ময়লায় ভর্তি। সেই ময়লা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এক কথায় বলা যায়, মানুষ থাকার মতন না। আমরা গিয়ে দেখি, ললিতা রান্না করছে। আমরা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্য একজনকে বললেন তার রান্নাটা দেখার জন্য। ললিতা আমাদের সঙ্গে এসে কথা বলছেন। তিনি নিজে থেকেই বলছেন, এখানে বসে কথা বলা যাবে না। একে তো সবসময় বাচ্চাদের কান্নাকাটি লেগেই থাকে, অনেক বাচ্চা তো, তাই একটা বাচ্চা কান্না থামালে আরেকটা বাচ্চা কান্না শুরু করে দেয়। কেউ তো আর তাদেরকে আদর করে থামাতে আসবে না। একবার কান্না শুরু করে দিয়েছে তো কান্না করতেই থাকে, কে কাকে থামাবে সারাদিন। কান্না করতে করতে কাহিল হয়ে গেলে তখন সে নিজে থেকেই থামে। এরই মধ্যে ললিতা ইশারা দিলেন তার সঙ্গে যাওয়ার জন্য। কিছুদূর যাওয়ার পর একটা খালি জায়গা। সেখানে লোকজন নেই। কিন্তু একটু দূরেই শত শত কয়লার গাড়ি। কয়লা উঠানামা করছে। তাই ঐখানে বসে কথা বলা সম্ভব হ’ল না। ললিতা তখন অন্য একটা জায়গায় নিয়ে গেলেন। ঐখানের জায়গাটা ভাল, ভাল পরিবেশ আছে। কিন্তু যাকে বলে কাঠ ফাটা রোদ। নেই কোন বাতাস। কি আর করা, সুযোগ খুঁজতে খুঁজতে আমাদের সময় চলে যাচ্ছে। কড়া রোদ, সামনে-পিছনে, ডানে-বামে, কোন দিকে তাকানো যাচ্ছে না। ঝলমল রোদ এসে চোখে ধাক্কা দিচ্ছে আর ঘেমে, ভিজে চুপচুপ। তার পরও ললিতার সঙ্গে কথা শেষ করিনি__

আমার নাম ললিতা। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স আনুমানিক ১৩/১৪ বছর। আমার জীবনে খুব কম সময়ই কেটেছে সুখে। বিয়ের আগের দিনগুলোই ছিল আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। যখন ছোট ছিলাম তখন তো কিছুই বুঝতাম না। যখন থেকে বুঝতে শুরু করেছি, তখনকার দিনগুলো ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের। আমাদের তেমন ধনসম্পদ, অর্থ ছিল না। কিন্তু অনেক সুখের ও সুন্দর ছিল জীবনটা। আমাদের ছিল যৌথ পরিবার। আমার কাকা ছিল সাতজন আর পিসি ছিল আট/নয়জন, সঠিক মনে নেই। ঠামির ঘরে মোট ১৫ জন সন্তান জন্মেছিল। মরতে মরতে বড় হয়েছিল পাঁচজন। তার মধ্যে তিনজন ছিল পিসি আর ২ জন বাবা আর কাকা। ঠামি আমাদেরকে অনেক আদর করতেন। আমরা একটু বড় হতে না হতেই ঠামি আমাদের সবাইকে তার সঙ্গে রাখতেন। রাতে ঘুমানো থেকে শুরু করে ঠামি যখন যেখানে যেতেন তখন সেখানেই তাঁর সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন। রাতে ঘুমানোর সময় ঠামি প্রতিদিনই কত সুন্দর গল্প শোনাতেন। শ্লোক দিয়ে দিয়ে কথা বলতেন। কত মজার মজার কথা বলতেন। মোট কথা ঠামির সঙ্গে থাকার সময়টা খুব উপভোগ করতাম। এমন করে ঠামি গল্প বলতেন যে, হাসির গল্প হলে হাসতে হাসতে পেট ব্যথা হয়ে যেতো। আর কষ্টের গল্প হলে নিজের অজান্তে চোখের জলে বালিশ ভিজে যেতো। শব্দ হবে দেখে ডুকরে ডুকরে কাঁদতাম। তারপরও শুনতে চাইতাম। যদি গল্প বলা বন্ধ করে দিতেন তাহলে কান্না কান্না কন্ঠে সবাই এক সঙ্গে চিৎকার করে না, না বলে উঠতাম। তখন ঠামি আস্তে আস্তে মধুর সুরে বলতেন, বাহিরে কারা যেন কান্না করছে তা শুনে আমি গল্প ভুলে গিয়েছি, এই জাতীয় কিছু বলে আমাদেরকে শান্ত করে দিতেন।

শুধু ঠামি না। আমাদের বাড়ির পরিবেশটাই ছিল খুব সুন্দর। বাড়ির সবার সঙ্গে সবার ভাল সম্পর্ক ছিল। সবাই সবাইকে সম্মান করতেন, ভাল কথাবার্তা বলতেন। গল্প, হাসি-ঠাট্টা করতো কাজের ফাঁকে ফাঁকে। এগুলো ছিল বলেই জীবনটা সুন্দর ও মধুময় ছিল। বাড়িতে যদি কারো বিয়ে বা পূঁজো হতো তখন যেন আনন্দের বন্যা বয়ে যেত। আমাদের বাড়ির এমন আনন্দ উল্লাস দেখে আশপাশের বাড়ি থেকেও লোকজন এসে যোগ দিতেন। আমাদের পুরো গ্রামেই ছিল হিন্দু। কোন মুসলমান ছিল না আমার জানামতে।

১৯৭১ সালের যুদ্ধের অনেক আগেই আমার বিয়ে হয়েছিল। আসলে তখন বা এখন কত বয়স তা বলতে পারবো না সঠিক করে। তখন কি বয়স হিসাব করে রেখেছি না-কি। আমার তো মনে হয় আমার মা-ও সঠিক করে বলতে পারবে না আমার সঠিক বয়স কত, দিন তারিখ মাস বলবে দূরের কথা। তবে এটা বলতে পারি, আমার যখন বিয়ে হয়েছে তখনও আমার মাসিক শুরু হয়নি। বিয়ের পাঁচ বছর পর স্বামীর বাড়িতে আসা যাওয়া শুরু হয়। তখন আস্তে আস্তে আমার শরীর ও মনের পরিবর্তন আসতে থাকে। যতদিন আমি নিজ থেকে সবকিছু বুঝতে পারিনি ততদিন আমাকে স্বামীর ঘরে দেয়নি। শ্বশুর বাড়িতে গেলে শ্বাশুড়ি-ননদের সঙ্গে রাখতেন।

যখন যুদ্ধ শুরু হয়েছে তখন বা তার কিছুদিন আগে বা পরে আমার পেটে বাচ্চা আসে। আগেই তো বলেছি, দিন তারিখ মাস আমি এত কিছুর হিসাব রাখিনি, রাখতেও পারতাম না। যখন আমি ধরা পড়ি তখন মনে হয় আমার পেটে বাচ্চা ছিল। যাই হোক, দেশে যখন তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে তখন তো সবকিছু এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। তখন সকল মানুষের একটা মাত্র কাজ, আর তা হ’ল, নিজের জান মান বাঁচানো। তাই সব সময়ই আমাদেরকে প্রস্তুত থাকতে হতো। যখনই শুনি মিলিটারি আসছে তখনই সকল কাজকর্ম খাওয়া দাওয়া ফেলে, এমনকি গোসল করছি সেই ভেজা কাপড়েই দিতে হতো দৌড়। যার যার নিরাপদ জায়গায় গিয়ে আশ্রয় নিতে হতো।

আমি তো বাড়ির বউ, তাই আমাকে সবকিছু জিজ্ঞাসা করেই করতে হতো। তখন এটাই ছিল নিয়ম। আমি আমার স্বামীর বাড়ির কাউকে দোষ দেই না। যখনই শুনতাম গ্রামে মিলিটারি ঢুকেছে তখনই স্বামীর বাড়ির অন্যদের সঙ্গে গিয়ে লুকিয়ে পড়তাম। এভাবে কত দিন কত জায়গায় যে লুকিয়ে থাকতে হয়েছে তা বলে শেষ করতে পারবো না। এমন করে প্রায় দিনই লুকিয়ে থাকতে হতো। এরই মাঝে একদিন শুনি মিলিটারি এসেছে। সেই দিন স্বামীও বাড়িতে ছিল। যখনই শুনেছি মিলিটারি এসেছে, তখনই স্বামী শ্বাশুড়ি সহ বাড়ির সবাই তড়িঘড়ি করে যার যার নিরাপদ জায়গায় পালিয়ে যায়। আমাকে আমার স্বামী হাত ধরে নিয়ে গিয়েছে, সঙ্গে শ্বাশুড়ি ছিল। জঙ্গলের ভেতর পালিয়ে থাকি। কিছুক্ষণ পর স্বামী বা শ্বাশুড়ি বলছে, এখানে বেশি নিরাপদ না, অন্য জায়গায় যেতে হবে। এই বলে আমার স্বামী আমার হাতটা ধরে আর সঙ্গে শ্বাশুড়ি জঙ্গল থেকে বাহির হলাম অন্য জায়গায় পালাব বলে। যেই না জঙ্গল থেকে বাহির হলাম সঙ্গে সঙ্গে একদল মিলিটারি এসে আমাকে ধরে ফেলে। তখনই আমার শ্বাশুড়ি এক দিকে দৌড়ে যায়, আর আমার স্বামী আমার হাতটা ছেড়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। সেই যে স্বামী পালিয়ে গিয়েছে, সে আর ফিরে আসেনি। আজও গিয়েছে-কালও গিয়েছে। চিরকালের জন্য আমার স্বামী আমার কাছ থেকে পালিয়ে গিয়েছে। তারপর থেকে আমি আর কোন দিন আমার স্বামীকে দেখিনি। অনেক খুঁজেছি কিন্তু আর পাওয়া যায়নি।

আমাকে যখন ধরে নিয়ে যায়, তখন আমি মিলিটারিদের সঙ্গে খুব জোরাজুরি করি। তখন কেমন করে যেন আমার ডান হাতটা ভেঙ্গে যায়। তখন তো আর এসব বলতে পারবো না যে, কখন কিভাবে হাত ভেঙ্গেছে। তখন মাথায় একটাই চিন্তা ছিল যে, কিভাবে মান-ইজ্জত রক্ষা করা যায়। মরতে হলে মরবো তবুও মান দিব না।

এখনো ললিতার ডান হাতটা অনেকটা-ই বাঁকা এবং তাতে দাগ আছে।

তিনি বলতে থাকেন, তারপর হাত কিভাবে, কেমন করে ভাল হয়েছে তা তো আর বলতে পারবো না। আমার হাত ভাঙ্গার ব্যাথার চেয়ে আরও বেশি ব্যাথা ছিল শত শত মিলিটারিদের নির্যাতনের ব্যাথা। যতক্ষণ মিলিটারিরা আমার উপর নির্যাতন চালাত, ততক্ষণই আমার হাত ভাঙ্গার চেয়ে বেশি ব্যাথা পেতাম। শত শত বার নির্যাতনের শিকার হয়েছি। এই ছোট শরীর কিভাবে যে এত নির্যাতন সহ্য করেছে তা আমি জানি না, আমার শরীরই জানে। এখনও সেই দিনগুলো মনে হলে শরীর শিহরিত হয়ে উঠে, ভয়ে থর থর করে কাঁপতে থাকি। পা থেকে মাথা পর্যন্ত সমস্ত শরীরে তারা আঘাত করেছে। কি বলি আর এসব লজ্জা-শরমের কথা, মুখ দিয়ে আসে না। কিন্তু মনের ভেতর তো কথাগুলো দৌড়াদৌড়ি করে। তাদের নির্যাতনের কারণে সারা শরীর পেঁকে টসটসা হয়ে গিয়েছিল। একটু ধরলেই-ছুঁইলেই মনে হতো অনেক বড় আঘাত করছে। দল বেঁধে শত শত মিলিটারি মাসের পর মাস নির্যাতন করেছে। এগুলো কি আর বলা যায়? এগুলো মনে হলে এখনও মাথায় রক্ত উঠে যায়।

এই কথাগুলো বলার সময় বেশ উত্তেজিত হয়ে গেছেন ললিতা। তার চোখ, মুখ রাগে ফেটে যাচ্ছে। একটা সময় নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন ললিতা। তাকে শান্ত করতে আমার অনেক সময় লেগে যায়।

এরপর তিনি বলেন, আমাকে ধরে নিয়ে যায় স্থানীয় ক্যাম্পে। ঐ ক্যাম্পে শত শত মহিলাকে আটকে রেখে নির্যাতন করেছে। তাদের শরীরে যে কত শক্তি ছিল তা একমাত্র ভগবানই জানেন। একেকজন একই রাতে বার বার করেছে। সারা শরীরে অত্যাচার করত। একজনের এসব করা দেখলে অন্যদের তো আনন্দের শেষ নেই আর আমার জান যায় আর আসে। বাংকারের ভেতরের প্রতিটা মুহুর্ত ছিল একটা যুগের মতন।

তারা এত কষ্ট দিয়ে দিয়ে নির্যাতন করেছে যা বুঝানোর মতন ক্ষমতা আমার নেই। তার পরও ‘টু’ শব্দটা করতে দিত না। অতিরিক্ত কষ্ট হলে যদি নড়াচড়া করতাম, তখন মারত। এমন সব জায়গায় মারত যেখানে আঘাত করলে বেশি ব্যাথা পাব। আর যদি কান্নাকাটি করতাম, তাহলে মুখের ভেতরে কাপড় ঢুকিয়ে দিত, জল খেতে চাইলে মুখের ভেতর প্রস্রাব করে দিত।

আহা! কত বড় বড় ঘরের বউ ঝি ধরে ধরে এনেছে। আনার সময় তাদের পরনে কত দামী দামী পোষাক ছিল। সেই পোষাক খুলে উলঙ্গ করে রেখেছে। বাংকারের ভেতর কত মোটা মোটা বালা, গলার মালা, কানের দুল পড়েছিল, কে নেয়? তখন তো জান নিয়ে টানাটানি। এসব কে কারটা ধরে? যে কেউ ইচ্ছে করলে নিয়ে আসতে পারতো।

দেশ স্বাধীন হলে, মুক্তিবাহিনী গিয়ে আমাদেরকে উদ্ধার করে। বাংকার থেকে উদ্ধার করার পর স্বামীর বাড়িতে যাই। তারা আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছে। বলেছে, এমন বউ আমরা বাড়িতে রাখবো না, আরও কত কথা। যাই বাবার বাড়িতে। গিয়ে দেখি, বাবার বাড়িতে কেউ নেই, সবাই ভারত চলে গিয়েছে। গ্রামেও থাকতে দেয়নি আমাকে। তখন আমি মুসলমানদের বাড়িতে গিয়ে থাকতাম আর ক্ষেতে খামারে কাজ করে চলতাম। আবার বেশি ভারি কাজও করতে পারি না, ডান হাতটা ভাঙ্গা। কোন চিকিৎসা ছাড়া এমনিতেই হাড় জোড়া লেগেছে। তাই ত্যাঁড়া ব্যাঁকা, শক্তি পাই কম। এভাবেই দিন পার হচ্ছে।

আমার জীবন আর দশজন নারীর মতন হ’ল না। না পেলাম স্বামীর আদর ভালবাসা, না থাকতে পারলাম স্বামীর সংসারে। রাস্তাঘাটে, যেখানে সেখানে কত কষ্ট করে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছে গেলাম। জীবন থেমে থাকেনি, পার হয়েছে কিন্তু খুব কষ্টে।

লেখক: মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও প্রাবন্ধিক

/এএস

Header Ad
Header Ad

আমাদের কেবিনেটে কোনো অসৎ ব্যক্তি নেই: নৌ উপদেষ্টা

বক্তব্য রাখছেন নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, এই সরকার অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে কাজ করছে। যতই বদনাম করুন, চার মাসের কাছাকাছি শোনেন নাই যে হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। এই সরকারে যারা কাজ করছে হয়ত তাদের অনেকেরই আমাদের মত প্রশাসনিক নলেজ কম থাকতে পারে, কিন্ত কোনো অসৎ ব্যক্তি আমাদের কেবিনেটে নেই, টপ টু বটম।

রোববার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা বোট ক্লাবে বিএসসির (বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন) ৪৭তম বার্ষিক সাধারণ সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

নৌ উপদেষ্টা বলেন, বিএসসিতে আগের মতো চুরিচামারি ও হেরফের হবে না। কোনো চোর ধরা পড়লে তার আর রক্ষা নেই।

ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, বিএসসির জাহাজের বহর আরও বড় করার চেষ্টা চলছে। আশা করছি, আগামী দুই বছরে এটা সম্ভব হবে। তখন শেয়ার হোল্ডাররা আরও বেশি লভ্যাংশ পাবে বলে।

তিনি আরও বলেন, আমরা চট্টগ্রামে (বন্দরে) ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্টের ব্যবস্থা করছি। কয়েকটা কান্ট্রি চট্টগ্রাম বন্দর, বে টার্মিনালসহ আরও অন্যান্য বন্দরে বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে। ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ৬০০ মিলিয়ন ডলার বে টার্মিনালে বিনিয়োগ করার জন্য বসে আছে। দ্রুত আমরা এটা সাইন করবো।

এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, শেয়ারের বাজারে বর্তমান দুর্দিনে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন শেয়ার হোল্ডারদের জন্য ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। আশা করছি, আগামী বছর এ লভ্যাংশ আরও বাড়বে।

বিএসসির ৪৭তম বার্ষিক সাধারণ সভায় বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কমডোর মাহমুদুল মালেক বলেন, প্রতিষ্ঠার ৫৩ বছরের মধ্যে এবার সর্বোচ্চ নিট মুনাফা করেছে বিএসসি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কর সমন্বয়ের পর সংস্থাটির নিট মুনাফা হয়েছে ২৪৯.৬৯ কোটি টাকা।

তিনি আরও বলেন, ১৯৭২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের যাত্রা শুরু হয়। তখন শিপিং করপোরেশনের বহরে ছিল ৩৪টি জাহাজ। এতো জাহাজ থাকার পরও সে সময় বিএসসি লোকসানি প্রতিষ্ঠান ছিল। বর্তমানে পাঁচ জাহাজে রেকর্ড সংখ্যক লাভ করেছে।

Header Ad
Header Ad

কবে লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া, যা জানা গেল

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ছবি: সংগৃহীত

শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে এবং নতুন কোনো সমস্যার সৃষ্টি না হলে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য আগামী ২৯ ডিসেম্বর লন্ডন যেতে পারেন।

রোববার (২২ ডিসেম্বর) রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, আশা করছি, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২৯ ডিসেম্বর তিনি লন্ডনে যাবেন। ম্যাডামের সঙ্গে তার চার-পাঁচজন চিকিৎসক যাবেন। ইতোমধ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

জানা গেছে, শারীরিকভাবে নতুন কোনো সমস্যা উদয় না হলে, ২৯ ডিসেম্বর (রোববার) দিনে একটি ফ্লাইটে খালেদা জিয়া ঢাকা ছাড়বেন। তার সঙ্গে সফর করবেন মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য ডা. শাহাবউদ্দিন, ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনসহ কয়েকজন।

এর আগে, ২৯ অক্টোবর অধ্যাপক জাহিদ হোসেন জানিয়েছিলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে প্রথমে ‘লং ডিসটেন্স স্পেশালাইজড এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হবে। এরপর সেখান থেকে তাকে তৃতীয় একটি দেশে মাল্টিডিসিপ্ল্যানারি মেডিক্যাল সেন্টারে নেওয়া হবে।

Header Ad
Header Ad

হামাসের সঙ্গে সংঘর্ষে ৩৫ ইসরাইলি সেনা নিহত, আহত শতাধিক

ছবি: সংগৃহীত

গাজার উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি বাহিনীর চলমান অভিযানের মধ্যে সংঘর্ষ তীব্র আকার ধারণ করেছে। দখলদার বাহিনীর সঙ্গে হামাস ও ইসলামী জিহাদ প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সংঘর্ষে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে ইসরাইলি গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাবালিয়া শরণার্থী শিবির এবং এর আশপাশের এলাকায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের আক্রমণে অন্তত ৩৫ জন ইসরাইলি সেনা নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছে। সংঘর্ষের এই ঘটনা দখলদার বাহিনীর জন্য বড় ধরনের ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এছাড়া ইসরাইলি সেনাবাহিনীর দেওয়া তথ্য অনুসারে, গাজার উত্তরের জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের ৭০ শতাংশ ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।

দখলদার সেনারা ৯৬,০০০ ফিলিস্তিনি নাগরিককে জাবালিয়া শিবির ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইসরাইলি বাহিনী ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে অবরুদ্ধ গাজায় একটি গণহত্যামূলক আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে। এ আগ্রাসন শুরু হয় হামাসের ঐতিহাসিক অভিযানের প্রতিক্রিয়ায়। যা ফিলিস্তিনিদের ওপর দখলদারদের বাড়তে থাকা অত্যাচার-নিপীড়নের জবাব হিসেবে পরিচালিত হয়।

এরপরই ইসরাইল গাজার ওপর সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে এবং গণহত্যামূলক নির্মূল অভিযান শুরু করে। উপত্যকাটিতে ২০ লক্ষেরও বেশি ফিলিস্তিনি বাস করত। তাদের জন্য জ্বালানি, বিদ্যুৎ, খাদ্য ও পানীয় জল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।

গাজায় গত ১৫ মাসের বেশি সময় ধরে চলা বর্বর ইসরাইলি আগ্রাসনে এ পর্যন্ত মোট ৪৫,২৫৯ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। যাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন ১০৭,৬২৭ জন।

রোববার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, অব্যাহত ইসরাইলি হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সূত্র: মেহের নিউজ এজেন্সি

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

আমাদের কেবিনেটে কোনো অসৎ ব্যক্তি নেই: নৌ উপদেষ্টা
কবে লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া, যা জানা গেল
হামাসের সঙ্গে সংঘর্ষে ৩৫ ইসরাইলি সেনা নিহত, আহত শতাধিক
নতুন স্বরাষ্ট্রসচিব ড. নাসিমুল গনি
গুম করে বন্দিদের ভারতে পাঠাতেন শেখ হাসিনা!
বিরামপুরে সাদ পন্থীদের নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ
নওগাঁয় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান
আব্রাম না থাকলে তাকে আমার যোগ্য বলেই মনে করতাম না: অপু বিশ্বাস
কাবাঘরে ‌‘জয় বাংলা’ স্লোগান, পরিচয় জানা গেল সেই যুবকের
গাইবান্ধায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রেফতার
ডিসেম্বরেই বিশ্বব্যাংক ও এডিবির ১১০০ মিলিয়ন ডলার পাবে বাংলাদেশ
বঙ্গোপসাগর বড় বড় শক্তির নজরে পড়েছে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর নাম পরিবর্তন হয়ে যা হলো
ইজতেমা ময়দানে সাদপন্থীদের হামলার প্রতিবাদে নওগাঁয় মানববন্ধন
আমনের ভরা মৌসুমেও বাড়তি চালের দাম, কারসাজিতে কারা?
গোবিন্দগঞ্জে ট্রাকচাপায় নারীসহ ২ জন নিহত
বুয়েট শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় তিন আসামি ২ দিনের রিমান্ডে
আবারও বৃষ্টির আভাস, তাপমাত্রা কমে বাড়তে পারে শীত
উপদেষ্টা হাসান আরিফের মৃত্যুতে সোমবার রাষ্ট্রীয় শোক
সুরের জাদুতে ঢাকার মঞ্চ মাতালেন রাহাত ফতেহ আলী খান