শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫ | ৫ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

তোমাদের ত্যাগেই কষ্টার্জিত আমাদের বিজয়

‘সাংস্কৃতিক রাজধানী’ হিসেবে স্বীকৃত কুষ্টিয়া জেলা এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘অস্থায়ী রাজধানী’ হিসেবে স্বীকৃত বৃহত্তর কুষ্টিয়ার মুজিবনগর- দুটো নামের মধ্যেই রয়েছে বাংলাদেশের মানচিত্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থান। ১৬ ডিসেম্বর বাংলার আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে পড়লো বিজয়ের আনন্দ। কুয়াশার পর্দা সরিয়ে সবুজ বনানীর বুক চিরে রক্তাক্ত বলয়টা ধীরে ধীরে সগর্বে মাথা তুলে দাঁড়াল। সুদীর্ঘ নয় মাসের বন্দি জীবনে মুক্তির উচ্ছাস। শিশিরে ভেজা উন্মুক্ত খোলা প্রাঙ্গণে পা রেখে প্রভাতী সূর্যের সোনালী আলোয় বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলো বাংলার মানুষ। বিজয় উল্লাসে মত্ত অস্ত্রধারী মুক্তিযোদ্ধাদের রোষানল থেকে বাঁচাতে সুহৃদ প্রজ্ঞাবান সদ্য বিজয়ী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীনের কণ্ঠ ‘স্বাধীন বাংলা বেতার’ থেকে যখন ভেসে আসে- ‘দেশবাসীর কাছে আবেদন, বিচারের পর শাস্তি হবে। তাই আইন ও শৃঙ্খলার ভার নিজেদের হাতে তুলে নেবেন না’, তখন মুক্তিযুদ্ধকালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ৫০ কিলোমিটার সম্প্রচার যন্ত্রটি এক অসাধ্য সাধন করেছিলো বলেই মনে হয়েছিলো। গর্বের বিষয় এই যে, কুষ্টিয়া অঞ্চলের বহু শিল্পী ও কর্মী শব্দযুদ্ধে ভাষা সৈনিকের ভ‚মিকা গ্রহণ করেছিলেন। আব্দুল জব্বার, রাজু আহমেদ, কল্যাণ মিত্র, সুশীল বসু, শাহীন সামাদ, তিমির নন্দী, প্রসেনজিৎ বসু, বাবুয়া, মান্না হক, রঞ্জু, গণেশ, জমির প্রমুখ কণ্ঠসৈনিকদের অংশ গ্রহণের প্রভাবেই জাতি সেদিন একটি ফুলকে বাঁচাতে যুদ্ধ করতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলো। মুক্তিযুদ্ধকালীন ১১টি সেক্টরের মধ্যে কুষ্টিয়া ৮ নম্বর সেক্টরের অধীনে মেজর আবু ওসমান চৌধুরীর নেত্বত্বে পরিচালিত হয় এবং পরবর্তীতে মেজর মঞ্জুর এই সেক্টরের নেত্বত্ব গ্রহণ করেন। কুষ্টিয়ার তৎকালীন বাঙালি জেলা প্রশাসক মো. শামসুল হক জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিলের দক্ষিণ-পশ্চিম ১ নম্বর জোনে স্বার্থক দায়িত্ব পালন করেছিলেন।



‘সুন্দর কুষ্টিয়া’ আয়োজিত শিল্পী ইতি খানের শিল্পকর্ম ‘শত্রু’ সুভ্যেনিরে প্রকাশিত গীতিকার ও নাট্যকার দুলাল জুবাইদ রচিত ‘অসুন্দরের বিপক্ষে’ কবিতায়-

হে মানুষ
নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সেই নিকৃষ্টতম
যার হাত প্রতিবেশীর রক্তে রঞ্জিত
যার চোখে কিশোরী ধর্ষণের লোলুপতা
যার দ্বারা মানবতা লাঞ্চিত।
এবং নিশ্চয়ই তার প্রতি অযুত কণ্ঠে বর্ষিত হোক
ঘৃণা! ঘৃণা! এবং ঘৃণা!...

আমাদের দুঃখী দেশটি আমাদের বড় ভালোবাসার দেশ, বড় মমতার দেশ। যারা জীবন বাজি রেখে এই স্বাধীন দেশটি আমাদের এনে দিয়েছেন তাঁদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। আর যেসব স্বাধীনতা বিরোধী, বিশ্বাসঘাতক, যুদ্ধপরাধী এই স্বাধীন রাষ্ট্রটিকে গলা টিপে হত্যা করার চেষ্টা করছে তাঁদের জন্যে রয়েছে অন্তহীন ঘৃণা। স্বাধীনতার ৫০ বছরে দাঁড়িয়ে বলতে চাই- যতদিন বাংলাদেশ টিকে থাকবে, এই দেশের মানুষ স্বাধীনতা বিরোধী, বিশ্বাসঘাতক, যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করবে না।

কুষ্টিয়ার স্বাধীন বাংলার প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী অ্যাডভোকেট আব্দুল জলিল স্মৃতিচারণে বলেন: “আমি, মারফত সহ বেশকিছু মুক্তিযোদ্ধা কুষ্টিয়া শহরে প্রবেশ করে দেখি শুধু লাশ আর লাশ, বিভীষিকাময় অবস্থা। কুষ্টিয়া পৌর বাজারের উত্তর বোমের আঘাতে বিরাট পুকুর হয়ে গেছে। পাকপিকচার সিনেমা হল আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রন্থ। প্রায় বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার বাড়িতে এসে দেখি পোড়া বাড়ি, বাড়িতে কেউ নেই। ...। আমার মা-বাবা, ভাইবোনেরা নদীর ওপারে হরিপুর নিজ বাড়িতে অবস্থান করছে। এর মধ্যে শামসুল হাদী, মির্জা জিয়াউল বারী নোমান, শেখ দলিল, শামসুল হুদা তাঁদের স্ব স্ব গ্রুপ ও অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কুষ্টিয়া শহরে প্রবেশ করে। কিছুক্ষণ পর কুষ্টিয়া শহরে চারপাশ থেকে হাজার হাজার মুক্তিকামী মানুষ ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে কুষ্টিয়ার আকাশ বাতাসকে মুখরিত করে তোলে এবং আমাদের স্বাগত জানায়। শামসুল হক, এমপিএ আব্দুর রউফ চৌধুরী, জোনাল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ডিসি শামসুল হক ডিসি কোর্টে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রশাসনিক কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে আমি, শামসুল হাদী, মির্জা জিয়াউল বারী নোমান, শেখ দলিল নবী বক্সের হোটেলে (বর্তমান লাভলি টাওয়ার) স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের জেলা অফিস চালু করি।”

মুক্তিযোদ্ধারা ৩১ মার্চের মধ্যেই কুষ্টিয়া শহর শত্রুমুক্ত করায় এ সম্পর্কে ভারতীয় দৈনিক পত্রিকার রিপোর্টে বলা হয়: “Kushtia is one of the few districts completely liberated from the Pakistan Army. The Kushtia town was taken by the Mukti Bahini after a three prolonged assault on the Army on March 29.” [গুটিকয়েক জেলার মধ্যে কুষ্টিয়া অন্যতম যেটাকে পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনীর কাছ থেকে মুক্ত করা হয়েছে, মার্চের ২৯ তারিখ (প্রকৃত পক্ষে তারিখটা ছিলো মার্চের ৩০ তারিখ) মুক্তিবাহিনী তিন দিক থেকে যুগপৎ আক্রমণ করে কুষ্টিয়া শহরকে অধিকার করেছে।]

‘টাইম’ ম্যাগাজিনের ১৯ এপ্রিল এ প্রকাশিত ‘দ্য ব্যাটল অব কুষ্টিয়া’ প্রতিবেদনটি ছিলো সাড়া জাগানো। ম্যাগাজিনের ডেন কগিন ‘PAKISTAN: The Battle of Kushtia’ প্রতিবেদনটি বন্তুনির্ভর প্রামাণ্য দলিল হিসেবে আজও বর্তমান। প্রতিবেদনটির উল্লেখযোগ্য অংশের বাংলা তরজমা: “৩১ মার্চ (প্রকৃতপক্ষে তারিখটি ৩০ মার্চ) ভোর ৪.৩০ মিনিটে প্রায় ৫০০০ কৃষক ও পুলিশ সদস্যের একটি দল কুষ্টিয়াকে মুক্ত করার জন্য একটি অভিযান শুরু করে। হাজার হাজার নগরবাসী ‘জয় বাংলা (বাংলার বিজয়)’ বলে স্লোগান দিতে দিতে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন, সৈন্যরা স্পষ্টতই এতো হাজার প্রতিবাদী বাঙালির দ্বারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিলো। পাকিস্তান বাহিনীর নায়েক সুবেদার (সিনিয়র সার্জেন্ট) মোহাম্মদ আইয়ুব ধরা পড়ার পর শোক প্রকাশ করে এবং আক্ষেপ করে বলে যে: ‘আমরা খুব অবাক হয়েছিলাম এবং ভেবেছিলাম যে বাঙালি বাহিনী আমাদের মতো একটি বাহিনী (কোম্পানি)’র আকার নিয়েছিলো, যাঁরা আমাদের আক্রমণ করবে। আমরা জানতাম না যে শহরবাসীর প্রত্যেকেই আমাদের বিপক্ষে ছিলো।’ কুষ্টিয়ার যুদ্ধে সর্বশেষ জীবিত আত্মগোপনে থাকা ও অস্ত্র ফেলে দেওয়া ১৩ পাকসৈন্য রেডিও ভবনে সারারাত কাটিয়ে পরদিন ভোর হওয়ার আগে পালিয়ে অচেনা পথে অজানা গন্তব্যে যাত্রা শুরু করে এবং দুই বাঙালি অস্ত্রধারী মিলিশিয়া তাঁদের বন্দি করে কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে ফিরিয়ে আনার আগে ১৪ মাইল পথ পর্যন্ত তাঁরা পায়ে হেঁটে অতিক্রম করেছিলো। এই ১৩ জনই ডেল্টা কোম্পানির ১৪৭ জন পুরুষের একমাত্র পরিচিত জীবিত ছিলো। পশ্চিম পাকিস্তানি নিহতদের মধ্যে নাসিম ওয়াকার ছিলেন ২৯ বছর বয়সী পাঞ্জাবী যিনি জানুয়ারিতে (১৯৭১) কুষ্টিয়ার সহকারী জেলা প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। বিক্ষুব্ধ জনতা যখন তাঁর মৃতদেহটি পেয়েছিলো তাঁরা এটি শহরের রাস্তায় আধা মাইল দূর পর্যন্ত টেনে নিয়ে যায় এবং রাস্তার পাশেই মাটিচাপা দিয়ে দেয়।”

কুষ্টিয়ার ধ্বংসযজ্ঞ সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পিটার কারগিলের অন্যতম সহকারী অ্যানডং হেজিডেন ১৯৭১ সালের ২৮ মে কুষ্টিয়া ভ্রমণ করে এক রিপোর্ট প্রদান করেন। রিপোর্টে তিনি এক ভয়াবহ ধ্বংসচিত্রের বর্ণনায় বলেন: ‘শহরটি (কুষ্টিয়া) দেখাইতেছিলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর বোমার আঘাতে বিধ্বংস জার্মানির শহরগুলির অনুরূপ। শহরের প্রায় ৯০ ভাগ বাড়ি, দোকান, ব্যাংক প্রভৃতি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হইয়াছে। আমরা যখন শহর প্রদক্ষিণ করিলাম স্থানীয় সকলেই তখন পালাইতেছিলো। অবস্থাটি ছিলো পারমাণবিক হামলার পারফিনের ন্যায়। আমি একজনকে একটি খাবারের দোকান দেখাইয়া দিতে বলিলাম। কিন্তু ৯০ মিনিট খোঁজ করিয়াও কোনো খাবারের দোকান পাওয়া গেলো না। সেখানকার জনসংখ্যা ছিল ৪০ হাজার।’...

সদ্য স্বাধীন কুষ্টিয়াকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দেখা একজন ব্রিটিশ সাংবাদিক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সব থেকে বিধ্বস্ত ভিয়েতনামের মাইলাই শহরের সাথে কুষ্টিয়া শহরকে তুলনা করেন। অনেক প্রাণ, অনেক ত্যাগ, অনেক ঈজ্জত-সম্ভ্রম এর বিনিময়ে ১১ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে কুষ্টিয়া পাকিস্তান হানাদার মুক্ত হয়। ঐ সময়ে এই যুদ্ধ বিজয়ের ঘটনাটি বিবিসি ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচার করা হয়। ১ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিল বাংলাদেশের মধ্যে একমাত্র কুষ্টিয়া শত্রুমুক্ত থাকার কারণে দেশবরেণ্য অনেক নেতৃবৃন্দই কুষ্টিয়া হয়ে ভারত সীমান্তে বৈদ্যনাথতলাতে যেতে সক্ষম হন এবং ১৭ এপ্রিল অস্থায়ী মুজিব সরকারের শপথ গ্রহণ সম্ভব হয়। ৯ ডিসেম্বর জেলা শহর ছাড়া সমগ্র কুষ্টিয়া শত্রু মুক্ত হয়। কুষ্টিয়া শহর মুক্ত করতে মিত্রবাহিনীর বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়। ৮ ডিসেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এখানে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর প্রচণ্ড যুদ্ধ চলে। এই যুদ্ধে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকটি ট্যাংক ও বিমান ধ্বংস এবং বহু পাকসেনা ও মিত্রবাহিনীর সৈনিক নিহত হয়। অবশেষে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র প্রতিরোধ এবং উপর্যুপরি আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে ১১ ডিসেম্বর ভোরে পাকসেনারা কুষ্টিয়া ছেড়ে ভেড়ামারা-পাকশী ফেরিঘাট পার হয়ে ঢাকার দিকে চলে যাওয়ার পর কুষ্টিয়া জেলা সম্পূর্ণ শত্রু মুক্ত হয়ে যায়। ৯ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী রাইফেল-এসএলআর এর গুলি ফুটিয়ে কুমারখালী থানায় গিয়ে বিজয়ের পতাকা উত্তোলন করে কুমারখালী শহর মুক্ত ঘোষণা করেন। ৮ ডিসেম্বর পাকহানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে মিত্রবাহিনীর সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধারা কুষ্টিয়ার ভেড়ামারাকে শত্রু মুক্ত ঘোষণা করেন। ৮ ডিসেম্বর বিভিন্ন বয়সের হাজারও নারী-পুরুষ রাস্তায় নেমে আনন্দ উল্লাস করতে থাকে। সেই থেকে এই দিনটি মিরপুর থানা পাকহানাদার মুক্ত দিবস হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্থান পায়। ৮ ডিসেম্বর দৌলতপুর থানা হানাদার মুক্ত ঘোষণা করেন তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর নুরুন্নবী। ৪ ডিসেম্বর খোকসা থানা মুক্ত হয়।



কুষ্টিয়া সম্পর্কে ‘পূর্বদেশ’ প্রতিনিধি ১৯৭২ সালেই লিখেছেন: “...বর্বর পাকসেনা ও তাঁদের অনুচরেরা গড়াই নদীর ধার দিয়ে গঙ্গা-কপোতাক্ষ ঘাট থেকে শ্মশান ঘাট পর্যন্ত দেড় মাইল এলাকার মধ্যে প্রায় পাঁচ-ছয় হাজার বাঙালি নর-নারীকে হত্যা করে তাদেরকে নদীতে ফেলে দিয়েছিলো। সেই সমস্ত হতভাগ্য মানব সন্তানের হাড়গোর এখনো নদীতে গোসল করতে গেলে মাঝে মাঝে মানুষের পায়ে বাঁধে। কুষ্টিয়া শহরের আমলাপাড়ায় বিমান নন্দীর বাড়ি বলে পরিচিত একটি বাড়িতে বর্বরতা স্থাপন করেছিলো বধ্যভূমি। এখনো সেটা জনসাধারণের কাছে ‘ফাঁসি ঘর’ বলে পরিচিত। সেখানে হত্যার নিদর্শন ফাঁসির দড়ি বেশকিছুদিন আগেও ঝুলছিলো। শহরের আর একটি বধ্যভূমি হচ্ছে কুষ্টিয়া হাউজিং কলোনি। পার্শ্ববর্তী-দূরবর্তী সব গ্রাম থেকে কিশোরী-তরুণী সমস্ত বয়সের মেয়েদের ধরে নিয়ে সেখানে তাঁদের আটকে রেখে চালাতো অমানবিক পাশবিক অত্যাচার। তাঁদের এই অত্যাচারের হাত থেকে বিধবা, পঙ্গু মেয়েরাও বাদ পড়েনি। এমনকি মাত্র চারদিনের প্রসূতিও তাঁদের পাশবিকতার হাত থেকে রক্ষা পায়নি। নারী নির্যাতনের আরো একটি স্থান ছিলো পুলিশ লাইনের উত্তরে ও রেণউইক কোম্পানির পশ্চিমে অবস্থিত সিঅ্যান্ডবি’র একটি হলুদ রঙের একতলা বাড়ি- সেখান থেকে ভেসে আসতো অসহায় নারীর করুণ আর্তনাদ। শহরে আরো একটি বধ্যভ‚মি কোর্টপাড়ায় মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান আক্কাস এমএনএ এর বাড়ি, যে বাড়িটি রাজাকারেরা দখল করে রেখেছিলো। এই বাড়ির মধ্যে একটি কুয়া আছে এবং তাঁর পাশেই লম্বা একটা ঘর। যে ঘরে হতভাগ্য মানুষদের মাটিতে শুইয়ে গোরু-ছাগলের মতো জবাই করে লাশগুলোকে ফেলতো ঐ কুয়ায়। কুয়াটি এখনো অজস্র কঙ্কালে ভরাট। গঙ্গা-কপোতাক্ষ অফিসের পাশের বাঁধানো ঘাটে হতভাগ্য মানুষদের ধরে নিয়ে এবং গলায় পাইকারিভাবে ছুরি চালিয়ে নদীতে ফেলে দেওয়া হতো। তাঁরা খেয়াল খুশি মতো ট্রেন থেকে লোক নামিয়ে প্রকাশ্যে মানুষের সামনেই বেয়নেট চার্জ করে পেট ফেড়ে ফেলতো।” স্বাধীনতা পরবর্তীতে জন স্টোন হাউজ ও ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলামের উপস্থিতিতে দুই পিকআপ বোঝাই মানুষের কঙ্কাল, মাথার খুলি ও হাড় উদ্ধার করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। কুষ্টিয়া জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে যতগুলো বৃহৎ বধ্যভূমি রয়েছে বিত্তিপাড়া বধ্যভূমি তাঁর মধ্যে অন্যতম।

১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর এসব বীরের চূড়ান্ত তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশের মাধ্যমে ৬৭৬ (বর্তমানে ৬৭৯) জনকে খেতাব দেওয়া হয়। তারমধ্যে কুষ্টিয়ার খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা ১১ জন। তাঁরা হলেন- শহিদ শরফুদ্দীন আহমেদ বীরউত্তম, শহিদ আবু তালেব বীরউত্তম, শহিদ খালেদ সাইফুদ্দীন তারিক বীরবিক্রম, শহিদ দিদার আলী বীরপ্রতীক, শহিদ কে এম রফিকুল ইসলাম বীরপ্রতীক, শহিদ আবদুল আলিম বীরপ্রতীক, এজাজুল হক খান বীরপ্রতীক, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বীরপ্রতীক, শহিদ হাবিবুর রহমান বীরপ্রতীক, শহিদ শামসুদ্দীন আহমেদ বীরপ্রতীক, আতাহার হোসেন বীরপ্রতীক, মোসলেম উদ্দিন বীরপ্রতীক।

স্বাধীনতার পর শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান প্রদর্শন ও তাঁদের গৌরবময় স্মৃতি রক্ষায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হলেও রাজাকারদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শনের নিমিত্তে নির্মিত ২০০০ সালের বিজয় দিবসে। এটিই বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম নির্মিত ভাস্কর্য। পৃথিবীর অনেক দেশেই স্বাধীনতার স্মৃতিকে অম্লান রেখে নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস শিক্ষা দেওয়া হয়, যদিও আমরা এ থেকে বঞ্চিত জাতি! যুদ্ধ মানুষের ক্ষয় করে কিন্তু কোনো কোনো যুদ্ধ সৃষ্টির আনন্দে ভাস্বর। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এমনই এক দৃপ্ত ইতিহাস। কিন্তু স্বাধীনতার পর তাঁদের সেই দেশপ্রেম, সাহস ও বীরত্বের কথা আমরা ৫০ বছরেও যথাযথভাবে তুলে ধরতে পারিনি। এই বীরদের মুখে বা কাগজে-কলমে স্বীকৃতি দিলেও তাঁদের কথা আমরা আজ মনে রাখিনি। স্বাধীনতা পরবর্তী প্রজন্ম জানতেই পারেনি যে তাঁরা কতো বড়ো বীরের জাতি! দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে তাঁদের সামনে মুক্তিযোদ্ধাদের সেই উজ্জ্বল আত্মত্যাগ ও বীরত্বের ইতিহাস তুলে ধরা ছিলো একটি জাতীয় কর্তব্য। বাংলাদেশের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অগণিত সাধারণ মানুষের অসাধারণ যোদ্ধায় পরিণত হওয়ার রুদ্ধশ্বাস কাহিনি। এ যুদ্ধ তীর ধনুক নিয়ে কিংবা ঢাল তলোয়ার দিয়েও নয়; এ যুদ্ধ থ্রি নট থ্রি রাইফেল ও বাঙালির বাঁশের লাঠি এবং আপামর দেশবাসীর যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে অত্যাধুনিক কামান ও আধুনিক মরণাস্ত্রের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ও মুক্তির যুদ্ধ। এরকম একটি যুদ্ধে আমাদের পূর্বপুরুষরা যদি অস্ত্র হাতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে না পড়তেন তবে আমরা এ রকম একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পেতাম না। ছাত্র-যুবক, কৃষক-শ্রমিকসহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ও পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই দেশ-মাতৃকার ডাকে শত্রæর বিরুদ্ধে হাতে তুলে নিয়েছিলেন অস্ত্র। ১৯৭১ সালে তাঁরা প্রশিক্ষিত ও অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যেভাবে যুদ্ধ করেছিলেন, তা অবিশ্বাস্য। অনেক ঘটনা গল্প-কাহিনির চেয়েও রোমাঞ্চকর। মুক্তিযুদ্ধ যেমন শোক ও বেদনার, তেমনি বীরত্ব ও গৌরবের। এই ইতিহাস বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

লেখক: ইতিহাস গবেষক ও প্রাবন্ধিক

Header Ad
Header Ad

নারীরা কেন বয়সে ছোট পুরুষের সঙ্গে প্রেমে জড়াচ্ছেন?

ছবি: সংগৃহীত

সম্পর্ক তৈরির বেলায় বয়স বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তবে বর্তমান প্রজন্মের অনেকের কাছে বয়স বিশেষ গুরুত্ব বহন করে না। তাই আজকাল নিজের বয়সের চেয়ে কম বয়সের মানুষের সঙ্গে সম্পর্কে জড়াচ্ছেন তরুণ–তরুণীরা।

পুরুষের ক্ষেত্রে এমন সম্পর্ক সমাজে স্বাভাবিক হলেও নারীর ক্ষেত্রে নয়। তবে আজকাল অনেক নারীই সঙ্গী বাছাই করার সময় বয়সের ফারাককে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন না। তাই তাঁরা এখন প্রেমিক বা দাম্পত্যসঙ্গী হিসেবে বেছে নিচ্ছেন কম বয়সীদের। ডেটিং অ্যাপের ট্রেন্ড বলছে, নারীরা পছন্দের ক্ষেত্রে সুন্দর মন, ব্যক্তিগত সুরক্ষা, আত্মবিশ্বাসী সঙ্গীকে খুঁজে নিতে চান। যেকোনো সম্পর্কে ভারসাম্য ও গতিশীলতাকে গুরুত্ব দেন।

ডেটিং ট্রেন্ডে নারীরা

মনোবিদেরা মনে করেন, এখনকার নারীরা নিজেদের সম্পর্ক নিয়ে বেশ সচেতন। যেকোনো বিষয়কে সহজভাবে নিতে পারার মানসিকতা বেড়েছে, বিশেষত অগ্রসর বিশ্বে তাঁরা কোনো বিষয়ে ভীত নন। সম্পর্কে যুক্ত হওয়ার সময় আত্মবিশ্বাস ও আত্মসচেতনতায় গুরুত্ব দেন তাঁরা। ঐতিহ্যগতভাবে পুরুষকে একচেটিয়াভাবে সফল কিংবা শক্তিশালী হিসেবে মেনে নিতে তাঁরা নারাজ। সঙ্গীর প্রতি আনুগত্যের চেয়ে নারীরা নিজের সুখ ও সামগ্রিক মঙ্গলকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। এসব কারণেই অনেক নারী কম বয়সী পুরুষ সঙ্গীর সঙ্গে ডেটিং করছেন। অর্থাৎ ব্যক্তিগত পছন্দকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন তাঁরা। কম বয়সী পুরুষ সঙ্গীর কাছ থেকে মানসিক, সামাজিক চাহিদাসহ অন্যান্য প্রয়োজনকে গুরুত্ব দিয়েই সম্পর্কে জড়াচ্ছেন।

নানা কারণে সম্পর্কে জড়ানোর সময় নারীরা কম বয়সীদের গুরুত্ব দেন

নিজের চেয়ে কম বয়সী পুরুষ সঙ্গীর সান্নিধ্যে আসায় নারীদের মধ্যে নিজেদের আরও তরুণ ভাবার একধরনের প্রবণতা তৈরি হয়েছে। কম বয়সী তরুণেরা নিজেদের সম্পর্কে সচেতন, নিজের স্বাস্থ্য ও রুচির বিষয়েও সজাগ। নতুন নতুন অভিজ্ঞতা কম বয়সীদের পৃথিবীকে নতুন করে জানার সুযোগ দেয়। এসব কারণে সম্পর্কে জড়ানোর সময় নারীরা কম বয়সীদের গুরুত্ব দেন। নারীরা এখন আগের চেয়ে বেশি অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্বাধীনতার জন্য ছুটছেন। পারিবারিক বা সামাজিক নিরাপত্তার জন্য বয়স্ক সঙ্গী খোঁজার প্রথাগত নিয়মে তাঁরা আর বিশ্বাসী নন। ব্যক্তিগত পরিপূর্ণতা, মানসিক সংযোগ ও আকর্ষণকে অগ্রাধিকার দিতেই নিজের পছন্দের সঙ্গীকে বেছে নিচ্ছেন।

বয়স কোনো বিষয় না

বয়সের ব্যবধান সম্পর্কে এখন নারীদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বেশ নমনীয়। তরুণদের তুলনায় নারীরা মধ্যবয়সীদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর আগে অনেক চিন্তা করছেন। মধ্যবয়সী বা সমবয়সীদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক রীতিনীতি বা লোকদেখানোর আচারকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় বলে মনে করেন নারীরা। সম্পর্ক নিয়ে পুরোনো সামাজিক নিয়মগুলোকে চ্যালেঞ্জ করতে চান তাঁরা।

Header Ad
Header Ad

জুলাই-মার্চ মাসে ৩০.২৫ বিলিয়ন ডলার পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ

ছবি: সংগৃহীত

চলতি অর্থবছরের (২৪-২৫) জুলাই-মার্চ মাসে তৈরি পোশাক রফতানি বেড়েছে ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ মাসের দেশভিত্তিক রফতানি তথ্য থেকে বিষয়টি জানা গেছে।

জানা গেছে, এই সময়ে ৩০ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ। যা পোশাক খাতের স্থিতিস্থাপকতা এবং সম্ভাবনা তুলে ধরে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

তথ্য থেকে জানা যায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখনো বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের মোট রপ্তানির ৪৯ দশমিক ৮২ শতাংশই রফতানি হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নে। যার মোট বাজার মূল্য ১৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার।

এরপরেই রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজার। এ বাজারে মোট রফতানি হয়েছে ৫ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক। যা মোট রফতানির ১৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ। যেখানে কানাডার মোট বাজার অংশ ছিল ৯৬৩ দশমিক ৮৫ মিলিয়ন ডলার। যার বাজার অংশ ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। যুক্তরাজ্যের বাজারও গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যার রফতানি মূল্য ৩ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার। যা বাংলাদেশের মোট তৈরি পোশাক রফতানির ১১ দশমিক ১০ শতাংশ ।

প্রবৃদ্ধির দিক থেকে ইইউতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি বছরের পর বছর ধরে উল্লেখযোগ্যভাবে ১১ দশমিক ৩১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। উল্লেখিত সময়ে যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৭ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং কানাডা ১৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, যুক্তরাজ্যে তৈরি পোশাক রফতানি ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ এর একটি সামান্য প্রবৃদ্ধির হার প্রদর্শন করেছে।

ইইউর মধ্যে, জার্মানি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার হিসেবে দাঁড়িয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের রফতানির পরিমাণ ৩ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার, স্পেন ২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার, ফ্রান্স ১ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার, ইতালি ১ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার, পোল্যান্ড ১ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার এবং নেদারল্যান্ডস ১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার।

প্রবৃদ্ধির হার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল - জার্মানি (১০ দশমিক ৭২ শতাংশ), ফ্রান্স (১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ), নেদারল্যান্ডস (২৩ দশমিক ১৫ শতাংশ), পোল্যান্ড (১০ দশমিক ৩২ শতাংশ), ডেনমার্ক (১২ দশমিক ৮০ শতাংশ) এবং সুইডেন (১৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ) ।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতেও অপ্রচলিত বাজারে প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, সামগ্রিকভাবে ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে মোট রফতানি ৫ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা বাংলাদেশের মোট রফতানির ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ দখল করেছে।

এই বাজারগুলোর মধ্যে, জাপান মোট ৯৬০ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন ডলার আমদানি করে শীর্ষে রয়েছে, তারপরে অস্ট্রেলিয়া ৬৫৩ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন ডলার এবং ভারত ৫৩৫ দশমিক ১৫ মিলিয়ন ডলার আমদানি করে।

তুরস্ক এবং মেক্সিকোর মতো দেশগুলোতেও উল্লেখযোগ্য রফতানি হয়েছে। তুরস্কে ৩৫৭ দশমিক ২২ মিলিয়ন ডলার এবং মেক্সিকোতে ২৫১ দশমিক ২২ মিলিয়ন ডলার, যা প্রশংসনীয়। উল্লেখিত সময়ে ভারতে ২০ দশমিক ৪৫ শতাংশ, জাপান ১০ দশমিক ০৬ শতাংশ, মেক্সিকো ২৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং তুরস্কের ৩২ দশমিক ৫৪ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

রিপোর্টে দেখা গেছে, এই সময়কালে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, তুরস্ক এবং মেক্সিকোতে প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক থাকলেও রাশিয়া, কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মালয়েশিয়ায় রফতানি হ্রাস পেয়েছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া এবং কোরিয়ায় নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি এই বাজারগুলোতে আরও গুরুত্বসহকারে রফতানি বাজার দেখা দরকার।

নিটওয়্যার খাত মোট ১১ দশমিক ২২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে। ওভেন সেক্টরেও ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যে প্রবৃদ্ধি ধীর হলেও অপ্রচলিত বাজারে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পয়েছে।

রফতানির চলমান প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্যভাবে ইইউ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল। যা বাংলাদেশের প্রধান বাজার হিসেবে অব্যাহত রয়েছে। যা এই ক্ষেত্রগুলির মধ্যে আরও সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়।

বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক, বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘এটি আমাদের মোট রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে প্রধান ঐতিহ্যবাহী বাজারের তাৎপর্য প্রদর্শন করে।’ তিনি আরও বলেন, অপ্রচলিত বাজারে মাঝারি প্রবৃদ্ধি এই বিভাগে আরও গবেষণা এবং মনোযোগের গুরুত্বকে তুলে ধরে, কারণ এর যথেষ্ট প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে, যা ঐতিহ্যবাহী বাজারের ওপর নির্ভরতা ভারসাম্য বজায় রাখতেও সাহায্য করবে।

রুবেল বলেন, স্থায়ী বৈশ্বিক বাণিজ্য উত্তেজনা ক্রমাগত বৈশ্বিক পরিবেশকে পুনর্গঠন করছে। এমন সুযোগ তৈরি করছে যা বাংলাদেশ সুবিধা নিতে পারে।

Header Ad
Header Ad

মুন্সীগঞ্জে মাইক্রোবাসের সঙ্গে ধাক্কা

সংঘর্ষে উড়ে গেছে বাসের ছাদ, তবুও ১০ কিলোমিটার চালিয়ে ৬০ যাত্রীকে বাঁচালেন চালক

ছবি: সংগৃহীত

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে মাইক্রোবাসের সঙ্গে ধাক্কা লাগার পর কাভার্ডভ্যান ও একটি কন্টেইনারের সঙ্গে সংঘর্ষে উড়ে গেছে বরিশাল এক্সপ্রেস নামের যাত্রীবাহী একটি বাসের ছাদ। পরপর তিন দফা দুর্ঘটনায় পড়ে আহত হন বাসের অন্তত ২০ যাত্রী।

তবু বাস না থামিয়ে ছাদবিহীন গাড়িটি ১০ কিলোমিটার পথ চালিয়ে নিয়ে যান চালক। পরে জনরোষে গাড়ি থামাতে বাধ্য হন।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের শ্রীনগরের সমষপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বাসটিতে ৬০ যাত্রী ছিলেন।

বাসের যাত্রীরা জানান, ঢাকা থেকে বরিশাল এক্সপ্রেস লিমিটেডের বাসটি দ্রুতগতিতে চালাচ্ছিলেন চালক। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের শ্রীনগরের কামারখোলা এলাকায় পৌঁছেলে একটি কাভার্ডভ্যানের সঙ্গে ধাক্কা লাগে বাসটির। এতে বাসটির সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এ সময় চালক বাসটি না থামিয়ে আরও বেপরোয়া গতিতে চালাতে থাকে। সমষপুর এলাকায় পৌঁছে অপর একটি প্রাইভেটকারকে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে বাসটির ছাদ বডি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রাস্তায় পড়ে যায়। যাত্রীরা চালককে থামাতে অনুরোধ করলেও সে তা উপেক্ষা করে।

যাত্রীরা বলেন, চালক দুর্ঘটনাস্থলের অদূরে হাইওয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গাড়ি দেখে ছাদবিহীন চলন্ত বাস চালিয়ে ১০ কিলোমিটার দূরের পদ্মা সেতু উত্তর থানার লৌহজংয়ের কুমারভোগ এলাকায় নিয়ে আসে। এ সময় আহত যাত্রীদের ‘বাঁচাও বাঁচাও’ চিৎকার শুনে বাসটি আটক করে জনতা।

পদ্মা সেতু উত্তর থানার ওসি মো. জাকির হোসেন জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় থানা, হাইওয়ে পুলিশ ও শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। আহত যাত্রীদের উদ্ধার করে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর মধ্যে গুরুতর আহত শাহিন নামের এক যাত্রীকে শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

চালক ও হেলপার বাস রেখে পালিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

নারীরা কেন বয়সে ছোট পুরুষের সঙ্গে প্রেমে জড়াচ্ছেন?
জুলাই-মার্চ মাসে ৩০.২৫ বিলিয়ন ডলার পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ
সংঘর্ষে উড়ে গেছে বাসের ছাদ, তবুও ১০ কিলোমিটার চালিয়ে ৬০ যাত্রীকে বাঁচালেন চালক
কোলের সন্তান বিক্রি করে অলংকার, মোবাইল কিনলেন মা
চুয়াডাঙ্গায় বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে দু’জন নিহত
ইয়েমেনের তেল বন্দরে মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ৩৮
হবিগঞ্জে ট্রাক-পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ৪
সৌদি আরব-মরক্কো থেকে ৪৬৬ কোটি টাকার সার কিনবে সরকার
গাইবান্ধায় মাদক মামলায় ৩ যুবকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের আহ্বান জানালেন প্রধান উপদেষ্টা
তোপের মুখে ওয়াক্‌ফ আইন স্থগিত করল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
নিজেকে বরিশাল সিটির মেয়র ঘোষণার দাবিতে মামলা করলেন ফয়জুল করীম
ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদের ‘পূর্ণ নিরাপত্তা’ নিশ্চিতের আহ্বান বাংলাদেশের
টাঙ্গাইলে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে কেন্দ্র সচিব ও পরীক্ষার্থীসহ আটক ৬
৭১ এর গণহত‍্যার জন‍্য ক্ষমা ও সম্পদ ফেরত দেয়া নিয়ে আলোচনায় সম্মত পাকিস্তান
এবার স্ত্রী রিয়া মনিকে তালাকের ঘোষণা দিলেন হিরো আলম
সাবেক এমপি বাহারের জমি-বাড়ি জব্দ, ২৯টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো ধরণের বাণিজ্যযুদ্ধে জড়াতে চায় না ভারত
বিজ্ঞানীদের সফলতা: ইমপ্লান্ট নয়, নতুন করে গজাবে ক্ষয়ে যাওয়া দাঁত!
নওগাঁয় বাসায় ঢুকে তরুণকে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা