বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫ | ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১
Dhaka Prokash

কলকাতায় শহীদ মিনার নির্মাণ

১৯৪৭ সালে ভারত বর্ষ বিভক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি আলাদা রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এর মধ্যে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত হয়। পাকিস্তানের অধিকাংশ জনগণের মাতৃভাষা বাংলাকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র উর্দু এবং ইংরেজিকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার উদ্যোগ নেওয়া হলে তৎকালীন পাকিস্তানে যে আন্দোলনের সূচনা হয়, তাই রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন নামে অভিহিত হয়। এ আন্দোলন হয় দুটি পর্যায়ে। প্রথম পর্যায় ১৯৪৭-৪৮ সাল। এ সময় রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ তৎকালীন পূর্ব-বাংলায় সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়। এ ধর্মঘটকে সফল করার জন্য পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন যুবনেতা শেখ মুজিবুর রহমানসহ আরো ৬৩ জন অগ্রগণ্য নেতা-কর্মী।

পরবর্তীকালে ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৪৮ পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মৃত্যু এবং ১৯৫১ সালের ১৬ই অক্টোবর রাউয়ালপিন্ডিতে এক জনসভায় বক্ততাকালে আততায়ীর গুলিতে প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের অপমৃত্যু হলে পাকিস্তানের সংবিধান প্রণয়ন এবং রাষ্ট্রভাষা নির্ধারণের বিষয়টি অমীমাংসিত থেকে যায়। লিয়াকত আলী খানের মৃত্যুর পর পূর্ব-বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হলে তিনি রাষ্ট্রভাষার বিষয়টি আবার সামনে নিয়ে আসেন। তার নেতৃত্বে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দু এবং ইংরেজিকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার উদ্যোগ নিলে পূর্ব-বাংলায় ব্যাপক ছাত্রবিক্ষোভ দেখা দেয়। ছাত্রদের সঙ্গে এ আন্দোলনে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করে। বাংলা ভাষা-সংস্কৃতি ও বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষার এ আন্দোলন ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৫২ সালের ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি পূর্ব-বাংলার ব্যবস্থাপক পরিষদের বাজেট অধিবেশনের দিন সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ সর্বাত্মক ধর্মঘটের ডাক দিলে সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ছাত্ররা মিছিল বের করলে পুলিশ বিনা উস্কানিতে গুলিবর্ষণ করে। ২১ এবং ২২ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে নিহত হন বরকত, জব্বার, রফিক, সালাউদ্দিন, শফিউর, আউয়াল, অহিউল্লাহসহ নাম না জানা আরও অনেকে। আহত এবং গ্রেপ্তারের সংখ্যা অগণিত।

২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ ঢাকা মেডিকেল কলেজের ১২ নং ব্যারাকের পূর্ব প্রান্তে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নেতা-কর্মীরা এক রাতের মধ্যেই নির্মাণ করেন 'শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ'। বদরুল আলম এবং সাঈদ হায়দারের নকশায় নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভের উচ্চতা ১০ ফুট এবং প্রস্থ ৬ ফুট। এই স্মৃতিস্তম্ভের উদ্বোধন করেন শহীদ শফিউর রহমানের পিতা মাহবুবুর রহমান। ২৬ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে এটি উদ্বোধন করেন দৈনিক আজাদ পত্রিকার সম্পাদক এবং পুলিশের গুলিতে ছাত্রহত্যার প্রতিবাদে পূর্ব-বাংলা ব্যবস্থাপক পরিষদ থেকে পদত্যাগকারী আবুল কালাম শামসুদ্দিন। উদ্বোধনের পরপরই নুরুল আমিন সরকারের পুলিশবাহিনী এটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়।

শহীদ মিনার ইটপাথরের তৈরি শুধুমাত্র কতগুলো স্তম্ভ নয়। বাঙালির শৌর্য-বীর্যের প্রতীক এবং আত্মপরিচয়ের ঠিকানা। এখানে এসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং সাহস সঞ্জয় করি আমরা। বাঙালির প্রতিটি লড়াই-সংগ্রামে এই শহীদ মিনার আমাদেরকে প্রেরণা জুগিয়েছে, আত্মোৎসর্গে অনুপ্রাণিত করেছে। আর সেকারণেই আধিপত্যবাদী গণবিরোধী শক্তি শহীদ মিনারকে ভয় পায় এবং এর অস্তিত্ব ধুলায় মিশিয়ে দিতে চায়। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, তারা প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে এবং সত্য-ন্যায়ের সংগ্রাম বিজয়ী হয়েছে। শহীদ মিনার বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে তার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে দেশ থেকে দেশান্তরে।

ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে এখন সর্বত্র শহীদ মিনার নির্মিত হচ্ছে। সংক্ষেপে তার নকশা সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করা বাঞ্ছনীয় বলে মনে করি। আমরা সকলে জানি যে, তৎকালীন পাকিস্তানের মুসলিম লীগ সরকারকে পরাজিত করে বাঙালির অধিকার আদায়ের জন্য হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ মোর্চা ‘যুক্তফ্রন্ট’। এই জোট তাদের একুশ দফার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিল। সেই মোতাবেক ১৯৫৬ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি সকাল নয়টায় পূর্ববঙ্গ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী আবু হোসেন সরকার ঢাকা মেডিকেল কলেজের ব্যারাকের সামনে শহীদ মিনার নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। আবু হোসেন সরকারের পতনের পর আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একক সরকার গঠিত হয়। সরকার পূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রধান প্রকৌশলী এ. জব্বারকে শহীদ মিনার নির্মাণের সার্বিক দায়িত্ব প্রদান করে। এ সময় সরকার শহীদ মিনার নির্মাণের নকশা প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করে। কমিটির সদস্যরা হলেন গ্রিক স্থপতি ভক্সিয়াডেস, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন এবং প্রকৌশলী এ. জব্বার।

কমিটি উচ্চ ডিগ্রিধারী শিল্পী হামিদুর রহমান প্রদত্ত নকশাকেই চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করে। হামিদুর রহমানের ওই নকশার ভিত্তিতেই ১৯৫৭ সালের নভেম্বর মাসে শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ শুরু হয় এবং ১৯৫৮ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই শহীদ মিনারের ভিত, মঞ্চ এবং তিনটি স্তম্ভ নির্মাণের কাজ সমাপ্ত হয়। পরিকল্পিত এই শহীদ মিনারের জন্য শিল্পী হামিদুর রহমান হাজার বর্গফুটের একটি ম্যুরাল এবং শিল্পী নভেরা আহমদের তিনটি ভাস্কর্যের কাজও ওই সময়ের মধ্যে সমাপ্ত হয়েছিল।

১৯৫৮ সালের অক্টোবর মাসে আইয়ুব-এর ক্ষমতা গ্রহণ, সামরিক শাসন জারি এবং পূর্ববঙ্গের আতাউর রহমান খান সরকার বাতিল ঘোষিত হলে শহীদ মিনার নির্মাণের কাজটিও বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৬২ সালে জেনারেল আজম খান পূর্ববাংলার গভর্নর নিযুক্ত হলে তার ব্যক্তিগত আগ্রহে শহীদ মিনারের কাজ সমাপ্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ড. মাহমুদ হোসেনকে সভাপতি করে ১৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন। এই কমিটির সুপারিশ এবং শিল্পী হামিদুর রহমানের নকশা অনুযায়ী নির্মিত এই শহীদ মিনার উদ্বোধন হয় ১৯৬৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। উদ্বোধন করেন শহীদ বরকতের মাতা হালিমা খাতুন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী দখলদার বাহিনী বুলডোজার দিয়ে এই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ভেঙে গুড়িয়ে দিলেও একই নকশায় বৃত্তের পরিসরে এটি পুনঃনির্মিত হয়।

১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এর মূল তাৎপর্য হলো, পৃথিবীর সকল ভাষার মানুষ যেন তাদের নিজ নিজ মাতৃভাষা চর্চা এবং লালন করে। কোনো ভাষা যাতে চর্চার অভাবে বিলুপ্ত হয়ে না যায়, সেটিও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অন্যতম প্রতিপাদ্য বিষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সর্বপ্রথম বাংলায় ভাষণ প্রদান করেন। এরপর ১৯৯৬ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা যতবার জাতিসংঘে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন, ততবারই বাংলায় ভাষণ দিয়েছেন। জাতিসংঘে প্রদত্ত ভাষণে তিনি বিশ্বের প্রায় ৩৫ কোটি মানুষের ভাষা বাংলাকে জাতিসংঘের অন্যতম দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান।

একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষিত হওয়ায় এর স্মারক এবং ইতিহাস সম্পর্কে জানবার আগ্রহ বিশ্বব্যাপী। একুশের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো শহীদ মিনার। ভাষা আন্দোলনের রক্তাক্ত স্মৃতিবাহী এ শহীদ মিনার ইতিহাসের অংশ এবং আবেগ-শ্রদ্ধার পীঠস্থান। বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপনের জন্য অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মিত হয়। যেখানে বাঙালি সেখানেই শহীদ মিনার। তবে অনেক দেশে বা স্থানে নিজ নিজ রীতি এবং নকশা অনুযায়ী শহীদ মিনার নির্মিত হতে দেখি। তবে সকলের প্রত্যাশা হলো, যেহেতু একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে, সুতরাং শহীদ মিনারের নকশা অভিন্ন হওয়া বাঞ্ছনীয়। পৃথিবীর বহু দেশে বাঙালিরা সেভাবে ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনার নির্মাণ করছেন, শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। ভারতের বাংলাভাষী প্রধান রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা এবং আসাম, মেঘালয়, ঝাড়খন্ডে বিভিন্ন আঙ্গিকের শহীদ মিনার বা স্মারক স্তম্ভ নির্মিত হতে দেখি। একুশে ফেব্রুয়ারিতে এখানে এসেই মানুষ শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করে, শ্রদ্ধা জানায়। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন চত্বরে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অনুরূপ নকশায় একটি ছোট আকারের শহীদ মিনার রয়েছে এবং এটি নির্মাণও করেছে বাংলাদেশ হাই কমিশন।

বাংলাদেশের বাইরে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগ ব্যতীত শিল্পী হামিদুর রহমানের নকশা অনুযায়ী ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অনুরূপ সম্ভবত প্রথম শহীদ মিনার নির্মিত হয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর কলকাতার বিটি রোডে। ১৫ ফুট উঁচু এই শহীদ মিনার নির্মাণের মূল উদ্যোক্তা 'সর্বভারতীয় বাংলাদেশ মঞ্চ'সহ তিনটি প্রতিষ্ঠান। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টা, বাংলাভাষার প্রতি মমত্ব এবং ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে নিহত শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের আত্মিক প্রকাশ এই শহীদ মিনার নির্মাণ। ব্রিটিশ রাজশক্তি বাংলাকে ভাগ করেছে কিন্তু বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে কখনো ভাগ করা যায় না। কলকাতা বিটি রোডের শহীদ মিনার সেই সত্যকেই নতুন করে জানান দিয়ে গেল। হাজার বছরের বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশের মূল স্রোতকে কখনো বিভক্ত করা যায় না। রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-সুকান্ত-জীবনানন্দ সকল বাঙালির। ভিসা পাসপোর্ট বা রাষ্ট্রীয় পরিচয়ের ভিন্নতা দিয়ে বাঙালির এ বন্ধনকে কখনো ছিন্ন করা যাবে না। আর সে কারণেই ঢাকায় যখন রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে রক্ত ঝরে ভারতের বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলে মানুষের হৃদয় হু-হু করে কেঁদে ওঠে। সঙ্গে থাকার প্রতিজ্ঞায় উদ্দীপ্ত হয় মানুষ। একইভাবে বরাক উপত্যকায় বা অন্য কোথাও যখন বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য মানুষ প্রাণ দেয়, তখন সকল বাঙালির হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়।

কলকাতার বিটি রোডে স্থাপিত নান্দনিক স্থাপত্যের এই শহীদ মিনারটি উদ্বোধন হয় ২০১৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। এ উপলক্ষে শহীদ মিনার চত্বর এক অনিন্দ্যসুন্দর সাজে সজ্জিত হয়েছিল। শহীদ মিনারের পাশে এক বিশাল উদ্বোধনী মঞ্চ নির্মাণ করা হয়। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, কবি, লেখক, সংস্কৃতি-কর্মীসহ বিপুল-সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি সেদিন এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি করে। গণমাধ্যমের ব্যাপক উপস্থিতি এ আয়োজনের গুরুত্বকে আরো বাড়িয়ে তোলে। অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ছিলেন প্রবীণ কথাসাহিত্যিক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি এবং ভাষা আন্দোলনের গবেষক হিসেবে আমাকে প্রধান অতিথি করা হয়েছিল। এ গৌরব বাংলাদেশের, এ সম্মান ভাষা শহীদদের।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের মাননীয় মন্ত্রী নাট্য ব্যক্তিত্ব ব্রাত্য বসু, লোকসভার সদস্য প্রবীণ নেতা সৌগত রায়, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ডেপুটি চিফ হুইপ তাপস রায় এবং আসামের শিলচরের ভাষা শহীদ স্মারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার রাজীব কর। অনুষ্ঠানের শুরুতে "আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি" সম্মেলক কন্ঠে পরিবেশন করে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। আমার সমস্ত শরীর...ফেব্রুয়ারি পালন করছি এখানকার মানুষের আবেগ এবং ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখে কখন যে চোখ ভিজে গেল, তা টের পাইনি। উদ্বোধকসহ সকল বক্তাই অভিমত ব্যক্ত করেন যে, বাংলাভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য তৎকালীন পূর্ব-বাংলা বা আজকের বাংলাদেশের বাঙালিরা যে ত্যাগ স্বীকার করেছে, তা সারা পৃথিবীর বাঙালিদের মাথা উঁচু করে দিয়েছে। এখন আমাদের দায়িত্ব হলো, বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির উন্নয়নের জন্য নিজেদের নিবেদন করা। উদ্বোধক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, আপনি চাইলে পৃথিবীর সব ভাষা শিখুন, তাতে কোন আপত্তি নেই। তবে সবার আগে মাতৃভাষাকে শিখুন, পরিচর্যা করুন। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি ছাড়া আমাদের কোনো অস্তিত্ব নেই।

আমি আমার বক্তব্যে কলকাতায় শহীদ মিনার নির্মাণ করায় উদ্যোক্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি আরও বলি যে, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চা এবং রক্ষায় এই নবনির্মিত শহীদ মিনার নিশ্চয়ই তরুণদের উদ্বুদ্ধ করবে। আমি কলকাতার বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুরূপ শহীদ মিনার নির্মাণের আহ্বান জানাই। উদ্বোধনী আলোচনা শেষে আমরা সকলেই নবনির্মিত শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ নিবেদন করি। একে একে অসংখ্য সংগঠন ও ব্যক্তি পর্যায়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। ফুলে ফুলে ভরে ওঠে পুরো শহীদ মিনার। এক অনিন্দ্য সুন্দর ভালোলাগা আর প্রশান্তি নিয়ে ফিরে আসি হোটেলে।

লেখক: লেখক, গবেষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

 

Header Ad
Header Ad

আমি জানি না, ওরা কেন মাঠ থেকে অবসর নিতে চায় না : খালেদ মাহমুদ সুজন

আমি জানি না, ওরা কেন মাঠ থেকে অবসর নিতে চায় না : খালেদ মাহমুদ সুজন। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের ক্রিকেটে আন্তর্জাতিক মঞ্চ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নেওয়ার সংস্কৃতি এখনো গড়ে ওঠেনি। সর্বশেষ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবসরের ঘোষণা দেওয়ার পর এই প্রসঙ্গ আবার আলোচনায় এসেছে।

২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘরের মাঠে সিরিজ খেলে ফুলের তোড়া হাতে নিয়ে হাসিমুখে বিদায় নিয়েছিলেন খালেদ মাহমুদ সুজন। একইভাবে ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বিদায় নিয়েছিলেন মোহাম্মদ রফিক। কিন্তু এরপর থেকে দুই দশকের বেশি সময়েও বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে মাঠ থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায়ের দৃশ্য দেখা যায়নি।

এ প্রসঙ্গে খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, “ওদের ক্যারিয়ার বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য অসাধারণ ছিল। মাঠ থেকে বিদায় নেওয়ার সুযোগ ওদের প্রাপ্য ছিল। যারা ভালোবেসেছে ও সমর্থন দিয়েছে, তারাও চাইত গ্যালারি ভরা দর্শকের হাততালির মধ্যে তারা বিদায় নিক। কিন্তু সেই সুযোগটা আর হলো না। কেন মাঠে অবসর নেয়নি, সেটা ওরাই ভালো বলতে পারবে।”

অনেকে মনে করেন, বোর্ডের পরিকল্পনার অভাবের কারণেই এমনটা ঘটছে। তবে সুজন এই দাবির সঙ্গে একমত নন। তিনি বলেন, “যখন আমি অবসর নিয়েছিলাম, আগেই জানিয়েছিলাম সেটাই আমার শেষ ম্যাচ। কিন্তু যদি কেউ না জানায়, বোর্ড বুঝবে কীভাবে? ক্রিকেটাররা আগেই বললে বোর্ডও সম্মানজনক বিদায়ের ব্যবস্থা করতে পারে।”

সম্প্রতি মুশফিকুর রহিম ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে এবং মাহমুদউল্লাহ সব ফরম্যাট থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। তাদের এমন সিদ্ধান্তকে সময়োপযোগী বলেই মনে করছেন সুজন। তার মতে, “ওরা চাইলে হয়তো আরও কিছুদিন খেলতে পারত। কিন্তু মাঠ থেকে বিদায় নিলে সেটা আরও স্মরণীয় হয়ে থাকত।”

মাঠ থেকে বিদায় নেওয়ার সংস্কৃতি গড়ে তোলা না গেলে ভবিষ্যতেও এই ধরনের পরিস্থিতি চলতেই থাকবে বলে মনে করছেন অনেকেই।

Header Ad
Header Ad

উপদেষ্টা মাহফুজ শাহরিয়ার কবিরদের ভাষাতেই কথা বলেছেন : জামায়াত

উপদেষ্টা মাহফুজ শাহরিয়ার কবিরদের ভাষাতেই কথা বলেছেন : জামায়াত। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ১৩ মার্চ এক বিবৃতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, মাহফুজ আলম গত ১২ মার্চ ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেছেন যে, “জামায়াত যুদ্ধাপরাধের সহযোগী ছিল।” মিয়া গোলাম পরওয়ার এ বক্তব্যকে ভিত্তিহীন ও মিথ্যা আখ্যা দিয়ে বলেন, মাহফুজ আলম জামায়াত সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন তা আসলে একটি প্রতিবেশি দেশের গুপ্তচর শাহরিয়ার কবিরদের ভাষার অনুকরণ।

তিনি আরও বলেন, মাহফুজ আলমের উচিত স্মরণ রাখা যে, তিনি একটি অরাজনৈতিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা এবং কোনো রাজনৈতিক দলকে টার্গেট করে এমন মন্তব্য করার অধিকার তার নেই। এমন মন্তব্য দিয়ে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অরাজনৈতিক চরিত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।

মিয়া গোলাম পরওয়ার উল্লেখ করেন যে, শেখ মুজিবুর রহমানের সময় গঠিত তদন্ত কমিশনেও জামায়াতের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এমনকি অধ্যাপক গোলাম আযম সুপ্রিম কোর্টে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে নাগরিকত্ব ফিরে পেয়েছিলেন।

তিনি আরও বলেন, শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের প্রভাবিত বিচার এবং স্কাইপ কেলেঙ্কারি, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বক্তব্য এবং সাঈদীর মামলার সাক্ষী সুখরঞ্জন বালীর বক্তব্য এই বিচার ব্যবস্থার গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামী আহলে সুন্নত আল জামায়াতের অনুসারী এবং এর আক্বিদার বিষয়ে প্রশ্ন তোলা অযৌক্তিক। জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে আসছে।

মিয়া গোলাম পরওয়ার আশা প্রকাশ করেন যে, মাহফুজ আলম তার মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করবেন এবং ভবিষ্যতে এমন বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন।

Header Ad
Header Ad

নওগাঁ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা

ছবি: সংগৃহীত

শফিউল আজম টুটুলকে আহ্বায়ক ও মোস্তাফিজুর রহমান মানিককে সদস্য সচিব করে নওগাঁ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ৫১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) রাতে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানি ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান এই কমিটি অনুমোদন দেন।

কমিটির অন্যান্য নেতারা হলেন, যুগ্ম-আহ্বায়ক দেওয়ান কামরুজ্জামান কামাল,মো. জাহাঙ্গীর আলম গুলজার, শামিম নুর আলম শিপলু,মো. মাহমুদ হাসান,গোলাম মোস্তফা তাতু,আলম তাজ তাজু,মো. মিজানুর রহমান রনি, মো. মামুনুর রশিদ,আব্দুল্লাহ আল মামুন শিমুল,হাসিবুর রহমান প্লাবন,মো. নূর নবী,মো. আব্দুল বারী তুহিন,মো. রাগিব শাহরিয়ার কৌশিক,মো. শহিদুজ্জামান সৌরভ,মো. ফারহিম ইসলাম মুন্না।

 

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

এছাড়া সদস্যরা হলেন, আব্দুল বারী হিরা, মহসিন আলী,মুশফিকুর রহমান সুজন চৌধুরী,মেহেদী হাসান পলাশ,মো. হেলাল উদ্দিন,আরিফুল ইসলাম বাপ্পী,স্বাধীন সরদার,কে এম রাব্বি রিফাত স্বচ্ছ,মো. সুরুজ সরকার,মো. মামুনুর রশিদ বুলেট,মো. মাসুদ রানা,মো. শাহরিয়ার হক রাজু,মো. সালমান ফারসী রাজ,মো. শামীম হোসেন, মো. ইস্রাফিল আলম তিতাস,মো. রায়হানুল ইসলাম রিপন,মো.শামস বিন আইয়ুব,মো. আশাদুল ইসলাম,মো. রুহুল আমিন মল্লিক,মো. ইশতিয়াক আহমেদ মিনার,মো. এনামুল হক (দপ্তরের দায়িত্বে),মো. রাকিন হোসেন (সহ-দপ্তরের দায়িত্বে),মো. পাঠান মুরাদ,মো. আশিক আহমেদ শাওন,মো. সবুজ হোসেন,মো. ডলার,শ.ম. আলেফ হোসেন সুমন,মো. শহীদুজ্জামান মুরাদ,মো. রিপন রেজা, এ্যাড, আলতাফ হোসেন উজ্জল,সোহেলী আক্তার শুভ,সোহাগ কুমার কর্মকার,মোঃ ওমর ফারুক (ওমর),মো. স্বাধীন আহমেদ।

 

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

 

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

আমি জানি না, ওরা কেন মাঠ থেকে অবসর নিতে চায় না : খালেদ মাহমুদ সুজন
উপদেষ্টা মাহফুজ শাহরিয়ার কবিরদের ভাষাতেই কথা বলেছেন : জামায়াত
নওগাঁ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা
শিশু আছিয়ার দাফন সম্পন্ন, অভিযুক্তের বাড়িতে আগুন দিলো বিক্ষুব্ধ জনতা
বেইজিংয়ে শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন ড. ইউনূস
‘২০২৬ সালেই বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণ করা হবে’
নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি শোভনের বাবা গ্রেপ্তার
শুক্রবার থেকে বন্ধ হচ্ছে দেশের সব পর্ন ওয়েবসাইট
ট্রাম্পের গাজা দখলের পরিকল্পনা থেকে সরে আসা নিয়ে যা বলল হামাস
গাম্বিয়ার সঙ্গে ভিসা অব্যাহতি চুক্তি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও গভীরতর করবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
স্ত্রীসহ সাবেক বিজিবি প্রধান সাফিনুল ইসলামের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
মাগুরার শিশু ধর্ষণ ও হত্যার বিচার ৭ দিনের মধ্যে শুরু হবে: আইন উপদেষ্টা
আছিয়ার মরদেহ সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে মাগুরায় নেওয়া হবে
ঢাকায় পৌঁছেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস
সোয়া ২ কোটি শিশুকে খাওয়ানো হবে ভিটামিন-এ প্লাস ক্যাপসুল
ধর্ষণের হুমকি পেলেন ভাইরাল কন্যা ফারজানা সিঁথি, অতঃপর...
যমুনা সেতু মহাসড়কে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ, আহত ২৫
নওগাঁ মেডিকেল কলেজ নিয়ে ষড়যন্ত্র বন্ধ ও স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের দাবি
চুয়াডাঙ্গায় ১ লাখ ৪৭ হাজার শিশুকে খাওয়ানো হবে ভিটামিন 'এ' প্লাস ক্যাপসুল
টাঙ্গাইলে ‘বঙ্গবন্ধু সেনানিবাস ও বঙ্গবন্ধু ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ’র নাম পরিবর্তন