দক্ষিণ বাংলাকে নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা দরকার
পদ্মা সেতু একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এটি অবশেষে শেষ করা সম্ভব হয়েছে। এটিকে একটি মাইলফলক হিসেবে ধরা যেতে পারে এবং অবশ্যই এটি প্রশংসার দাবিদার। তবে আমাদের দেশে একটি বৈশিষ্ট হল অদক্ষ খরচ অর্থাৎ আমি মনে করি, খরচটি দক্ষ হওয়া উচিত। আমি এখানে কম খরচের কথা বলছি না। দক্ষ খরচের কথা বলছি। এক হাজার টাকায় যে কাজটি করা সম্ভব, সেখানে যদি দশ হাজার টাকা খরচ করি তাহলে নয় হাজার টাকা আমরা অন্য জায়গায় ব্যবহার করতে পারতাম সেটি আর সম্ভব হচ্ছে না। অদক্ষ খরচ বলতে আমি আরও যেটি বলছি যে, আমাদের যেগুলি মেগা প্রজেক্ট আছে, সেগুলিতে ব্যয় বিষয়ে সচেতন থাকা উচিত। অদক্ষ খরচের বিষয়টি বিশেষ করে পদ্মা ব্রিজের সময় বাড়ানোর বিষয়টি এবং এতে যে খরচ বেড়ে গিয়েছে সেটি থেকে শিক্ষা নিতে হবে আমাদের। এখন এই মেগা প্রকল্পটিতো শেষ হয়েই গেল। আগামীতে অন্যান্য প্রকল্পেও এই বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। এটি একটি সংস্কৃতি দাঁড়িয়ে গেছে। আমি মনে করি, এখান থেকে বেরিয়ে আসাটা আমাদের জন্য জরুরি।
পদ্মা সেতু একটি গুরুত্বপুর্ণ অবকাঠামো হিসেবে তৈরি হলো। এবার এখান থেকে ফসল ঘরে তুলে নিয়ে আসতে হবে। সেজন্য বিশেষ করে দক্ষিণ বাংলাদেশকে নিয়ে আমাদের একটি বিশেষ পরিকল্পনা দরকার। এগুলি অটোমেটিক হবে না। কারণ এটিতো আর ম্যাজিক না যে অর্থনীতি হঠাৎ করে হয়ে যাবে। আমার কথা হচ্ছে, ব্রিজতো হলো। এখন আমাদের যেটি করতে হবে তা হলো, স্থানীয় অর্থনীতির বিকাশ কিভাবে হবে সেটি নিয়ে ভাবা। যারা উদ্যোক্তা শ্রেণি আছেন, তাদেরকে কিভাবে সহায়তা দেওয়া দরকার ইত্যাদি বিষয়সমূহসহ কিছু সিদ্ধান্তে আমাদের আসতে হবে। ব্রিজ হয়ে গিয়েছে মানে মনে রাখতে হবে, সব শেষ নয়।
পদ্মাসেতু সম্পর্কে একটি কথা আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। এটি কিন্তু দক্ষিণ বাংলাদেশের জলবায়ু হুমকির একটি কারণ হতে পারে। কাজেই আমাদের আরও একটি বিষয় খেয়াল রাখা দরকার। সেটি হচ্ছে একটি উপকূলীয় বাঁধের সুরক্ষা দরকার হতে পারে আমাদের। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে আইলা ২০০৯ সালে হলেও এখন পর্যন্ত কিন্তু সাতক্ষীরার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলি এখনও দুরাবস্থায় আছে। পদ্মা সেতুর সুফল পাওয়ার জন্য সরকারকে একটি বৃহৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সেজন্য এখন থেকেই আয়োজন শুরু হওয়া দরকার। পদ্মার ওপারে কোন কোন খাতে কি কি ধরণের সহায়তা দেওয়া দরকার সেগুলি নজরে নিয়ে আসা উচিত। অদক্ষ খরচের বিষয়টি বিশেষ করে পদ্মা ব্রিজের সময় বাড়ানোর বিষয়টি এবং এতে যে খরচ বেড়ে গিয়েছে সেটি থেকে শিক্ষা নিতে হবে আমাদের।
এখন এই মেগা প্রকল্পটিতো শেষ হয়েই গেল। আগামীতে অন্যান্য প্রকল্পেও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। এটি একটি সংস্কৃতি দাঁড়িয়ে গেছে। আমি মনে করি, এখান থেকে বেরিয়ে আসাটা জরুরি। কৃষিতে কিভাবে সহায়তা দেওয়া দরকার। স্থানীয় শিল্প কোনগুলি এখানে বিকাশ হতে পারে, এটির সূত্র ধরে আমাদের আন্তঃদেশীয় বানিজ্য বাড়ার সুযোগ আছে। সেগুলির জন্য আরও অনেকগুলিই অবকাঠামো দরকার। সেগুলির দিকে নজর দেওয়া হবে। মুল কথা হলো, আমরা একটি গুরুত্বপুর্ণ মাইলফলক অতিক্রম করছি। এখানে অদক্ষ খরচের বিষয়টি অন্যান্য প্রকল্পে যেন না হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে। সর্বোপরি আমাদের দক্ষিণ বাংলাদেশের জন্য একটি মহা অর্থনৈতিক পরিকল্পনার উদ্যোগ নিতে হবে। যাতে করে পদ্মাব্রিজের ফলে যে সুফল পেতে চাই আমরা, সেটি যেন বাস্তবেই দ্রুত সম্ভব পেতে পারি। সেটি দীর্ঘসুত্রিতার দিকে যেন না যায়, সেদিকে নজর দেওয়া দরকার।
আমি যেটি বলবো, এখন দরকার বৃহৎ অর্থনৈতিক মহা পরিকল্পনা দক্ষিণ বাংলাদেশের জন্য। সেতু উদ্বোধনের সাথে সাথে সে লক্ষ্যে একটি সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ শুরু করার এখনই সময়।
লেখক: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা