শেয়ার বাজারে ‘আপস অ্যান্ড ডাউনস’ পার্ট অব দ্য সিস্টেম
সারা পৃথিবীতে শেয়ার বাজারই হচ্ছে একমাত্র বাজার যেখানে আপস অ্যান্ড ডাউনস বেশি হয়। এখানে আপস আছে বলেই মানুষ আনন্দ পায় এবং ডাউনস আছে বলেই মানুষ আনন্দ পায়। ডাউন না হলে এটি উঠবে কিভাবে? সুতরাং এখন আমাদের এখানেও এটি অনেক উঠেছে এবং কারেকশনের দিকে গেছে। সারা পৃথিবীতেই এখন একটা টালমাটাল অবস্থা এবং সারা পৃথিবীতেই স্টক মার্কেট পড়েছে। ৬০ হাজার থেকে ৫২ হাজারে আসছে। তার মানে ৮ হাজার পড়েছে। আমাদের এখানেও ফরেনাররা সেল করছে। এটি ৭৩০০ থেকে ৬২৫০ এ আসছে। এর মধ্যে অনেকের টাকা অর্ধেক হয়ে গেছে, অনেকে টাকা হারিয়েছে। এটিই স্বাভাবিক। এটি পার্ট অব দ্য সিস্টেম।
আমাদের এখানে ব্যক্তি সংখ্যা বেশি। ব্যক্তিদের মধ্যে ৯৫ শতাংশ ট্রেড করে থাকে। এরা রেগুলার ট্রেড করে। এরা দুই বছরের জন্য কোনো শেয়ার রাখবে না। এখানে বাজারটা স্বাভাবিকভাবেই অস্থির থাকে। এটিও খারাপ না। গতকালও অর্থমন্ত্রী বললেন, বাজারটা এতটা পড়ে গেল কেন? এটি দেখা দরকার। এটিতো আমরা মানতে পারি না। একটি আশা দেখলে বিনিয়োগকারী যারা আছেন, তারা এটি পজিটিভলি একসঙ্গে নেন। এর মধ্যে একমাস ধরে যে শেয়ার বাজার পড়ছে, এর মধ্যে ৩৭ হাজার বিও অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। এর অর্থ কি? তারা ইলেক্ট্রিক হয়ে গেছে। একদিকে শেয়ারের সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে ডিম্যান্ড সাইড দুর্বল হচ্ছে। তাহলে শেয়ার বাজারতো পড়বেই। তারপর একটা সময় বন্ধ হয়ে যাবে। গতকাল অর্থমন্ত্রী সেটিই বলেছেন।
শেয়ার বাজার কখনও এক জায়গায় থাকে না। একসময় নেমে যায় তারপর এটি আবার উঠতেই থাকে। এটিই নিয়ম সারা পৃথিবীতে। বাংলাদেশেও এটি বাইরের কিছু না। আমাদের এখানে ডলারের দাম বাড়ছে এবং এটি গ্লোবালই হচ্ছে। এখন খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে, অনেকে এখান থেকে টাকা পয়সা নিয়ে সাংসারিক কাজকর্ম চালাচ্ছেন। সবকিছু মিলিয়ে এখানে ডাউন ওয়ার্ডস অ্যাডজাস্টম্যান্ট হবে, সেটি আমাদের মেনে নিতে হবে। অনেকের মূলধনের ২৫% থেকে ৩৫% চলে গেছে। এটিই স্বাভাবিক।
শেয়ার বাজার কোনো গ্রামার মেনে চলে না। সারা পৃথিবীতে শেয়ার বাজার কারও কথা অনুযায়ী চলে না। শেয়ার বাজার জিগজ্যাগ মতে চলে। সারা পৃথিবীতে নিয়মই এটি। সুতরাং শেয়ার বাজারে গ্যাম্বলিং হয়, ম্যানুপুলেশন হয়, সিন্ডিকেট টেবিল হয় এটিও আছে। অন্যান্য দেশে শেয়ার বাজার এতটা বড় বলে সেটি এতটা বোঝা যায় না। আমাদের এখানে ছোট মার্কেট বলে সমস্যাগুলো চোখে পড়ে বেশি। অনেকে মনে করে এগুলো না হলে শেয়ার বাজার জমবে না। আমাদের এখানে যে সমস্যা সেটি হচ্ছে ভাল শেয়ারের অভাব। কাজেই এক্ষেত্রে টপ লেবেল থেকে চেষ্টা করতে হবে। মানুষকে যদি সম্পদের মালিকানা না দেওয়া হয়, মানুষতো সমস্যায় পড়বেই।
শেয়ার বাজার যদি ভাল চলে, পুঁজির কোনো অভাব নেই। মধ্যবিত্ত শ্রেণি এখানে যুক্ত হতে চায়। এটিতে কিন্তু সরকার ট্যাক্সও পাবে। অর্থমন্ত্রী মহোদয় বলেছেন, ব্যাংকগুলোকে শেয়ার কেনার জন্য। কেনার জন্য ফান্ড এবং ফ্রিডম আছে। কিন্তু তারা অজুহাত দেয় এবং তারা দূরে থাকতে চায়। গতকালও সিকিউরিটি একচেঞ্জ মার্জিন লোন সহজ করে দিয়েছে। এগুলো দিয়ে তেমন কোনো লাভ হবে বলে মনে হয় না। এখানে বিনিয়োগকারী সৃস্টি করতে হবে যারা মার্জিন লোনের উপর নির্ভর করে না। বিনিয়োগকারীরা নিজেরে পয়সা দিয়ে বিনিয়োগ করে এবং আস্তে আস্তে ধনী হওয়ার পাশাপাশি স্বাবলম্বী হওয়ার দিকে যায়।
লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আরএ/