অর্থনীতিতে অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে ‘পদ্মা সেতু’
পদ্মা সেতু দেশের একটি মেগা প্রকল্প। অনেক চিন্তা ভাবনা করে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। যদিও সময় একটু বেশিই লেগেছে। হিসেবের বাইরে খরচও বেশি হয়েছে। তারপরও বলব, দীর্ঘ প্রতীক্ষার প্রহর শেষে অবশেষে পদ্মা সেতু উদ্ভোধন হতে যাচ্ছে। এটি একটি বড় প্রাপ্তি আমাদের জন্য। এটির জন্য অবশ্যই সাধুবাদ জানাই সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে।
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু তৈরি হচ্ছে, নিঃসন্দেহে এটি অনেক আনন্দ ও অনেক গৌরবের বিষয়। আমরা জানি, সেতু নির্মানের পূর্বে প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল র্পযন্ত জাপানি সাহায্য সহায়ক সংস্থা (জাইকা) সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করে। ওই সময়ই ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নির্মানের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ফলে সেতু নির্মান শুরু হয়।
তারপর অনেকদিন খুব একটা অগ্রগতি আমরা দেখিনি। তবে যেহেতু সদিচ্ছা ছিল কাজেই বাংলাদেশের স্বপ্ন পদ্মা সেতুর নকশা চূড়ান্তকরণের কাজ একসময় সম্পন্ন হয়। এর মধ্যইে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সরকাররে চুক্তি হয়। কিন্তু ২০১০ সালে বিশ্বব্যাংক হঠাৎ করেই পদ্মা সেতু প্রকল্পে দূর্নীতির অভিযোগ তুলে এবং বিশ্বব্যাংক নিজেরাই তদন্ত শুরু করে। ২০১২ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পে উচ্চ পর্যায়ে নীতি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক সরকারের সঙ্গে করা ১২০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণচুক্তি বাতিল করে দেয়। কিন্তু আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারকে ধন্যবাদ জানাই কাজটি সুসম্পন্ন করার জন্য।তিনি কাজটি করে দেখিয়েছেন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে নিজস্ব অর্থায়নে সবচেয়ে বড় যোগাযোগ অবকাঠামো হচ্ছে পদ্মা বহুমুখী সেতু। পদ্মা সেতু দিয়েই দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গ্যাস সংযোগ। টানা হচ্ছে বিদ্যুৎ লাইন।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এক হবে পদ্মার এপাড়-ওপাড়। যার ফলে দূরত্ব কমে আসবে দেশের এক অঞ্চলের সঙ্গে আরেক অঞ্চলের। গতি বাড়বে বাংলাদেশের র্অথনীতির, চাকা ঘুরবে দ্রুতবেগে। এক শতাংশের বেশি হারে জিডিপি বাড়ব। ভাগ্য বদলে যাবে দক্ষিণ ও দক্ষণি-পশ্চিমাঞ্চলের বহু জেলার মানুষের। বাড়বে জীবনযাত্রার মানও। যানজট কমে যাবে। জীবনযাত্রা সহজ হবে।
পদ্মা সেতু চালু হয়ে গেলে আশা করা যায় যে, বরিশাল পটুয়াখালিসহ অন্যান্য জেলাগুলির সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক সহজ হয়ে যাবে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে। দেশের পরিবহন খরচ কম হবে। সময় কম লাগবে। অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হবে। সার্বিক অর্থনীতিসহ বিশেষ করে ওই অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়।এটিই হচ্ছে প্রত্যাশা।এখন দেখার বিষয় বাস্তবে কি হয়।
ব্যবসা বানিজ্যের ক্ষেত্রে ইতিবাচক বিষয় হল, পরিবহন খরচ কমবে যদিও টোল বৃদ্ধি করা নিয়ে একটি প্রশ্ন এসেছে ,আমি মনে করি সেটি সমস্যা নয়। যদি উৎপাদন বাড়ে এতে করে অর্থনৈতিক অগ্রগতি মসৃণ হবে। জিডিপি বৃদ্ধির বিষয়ে বলতে পারি, এটি অবশ্যই বাড়বে কিন্তু সেটি কি হারে বাড়বে এখনই বলা মুশকিল।এটি আসলে এখন দেখার বিষয়।
নিজস্ব অর্থায়নে প্রজেক্টি করতে হয়েছে।কাজেই এখান থেকে ভাল কিছু বের করে আনতে হবে। যেহেতু বিশ্বব্যাংক বেড়িয়ে গিয়েছিল।হয়তো প্রকল্প বাদ দিতে হত। নয়তো নিজেদের অর্থায়ন করতে হত। এখন নিজেদের অর্থায়নেই যেহেতু কাজটি করতে হয়েছে এবং সেটি করা সম্ভব হয়েছে সেটি সন্তোষজনক এবং প্রশংসার দাবিদার। এখন পদ্মা সেতুর প্রকৃত সুফল ভোগ করার অপেক্ষায় দেশের মানুষ।
লেখক: অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা