দুর্নীতিজনিত ব্যয় বন্ধ করতে হবে
কোভিড পরবর্তী সময়ে অস্থিতিশীল মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে সর্বত্র। আর একটি ইমপ্যাক্ট ইতিমধ্যে আমরা দেখতে পাচ্ছি এবং সেটি আরও বাড়বে। যেমন, সীমিত আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমবে। ভোগ ব্যয় কমবে এবং ভোগ্য পণ্য কম ব্যবহার করে তারা বঞ্চিত হবে। জীবনযাত্রার মান কমে যাবে। সরকারের ভ্যাট ট্যাক্স রাজস্ব কালেকশন কম হবে। উত্তরোত্তর মূল্যবৃদ্ধি যে হারে বাড়ছে, সেই হারে আয় বেশি না বাড়ার কারণে ঝুঁকি বেশি তৈরি হবে। ইন্ডাস্ট্রিগুলির উপর তার ক্ষতিকর একটি প্রভাব পড়বে। উৎপাদনশীলতা কমে যাবে এবং বাজার হারাবে। অবধারিতভাবেই আমাদের জিডিপি বৃদ্ধির হার যে হারে বাড়ছে সেটি হুমকির সম্মুখিন হবে। ফলে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়া সেটি হুমকির সম্মুখিন হবে।
বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে একটি কথা বলা হয়ে থাকে। উৎপাদন ক্ষমতা আছে তবুও লোডশেডিং বাড়ছেই। আমার কথা শুধু উৎপাদন ক্ষমতা থাকলেই হবে না, উৎপাদন করে দেখাতে হবে এবং উৎপাদন বাড়াতে হবে।
সকল কিছুর জন্য দরকার সুশাসন। কাজেই সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। ক্রয় বিক্রয় নিশ্চিত করতে হবে। সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে অযৌক্তিক ব্যয় যেটি আমরা বিদ্যুতের ক্ষেত্রে দেখেছি, ৪০হাজার কোটি টাকা অযৌক্তিক ব্যয় রয়ে গেছে সেগুলি দূর করতে হবে। অযৌক্তিক ব্যয়, লুণ্ঠনমূলক ব্যয়, দুর্নীতিজনিত ব্যয় এগুলি বন্ধ করতে হবে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারিরা এ সমস্ত কোম্পানির বোর্ডের চেয়ারম্যান মেম্বার থাকার কারণে, সবকিছু নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় এসব ব্যয় বন্ধ করতে হলে আমলামুক্ত করতে হবে সেক্টরগুলিকে। জ্বালানিখাতের মূল্যস্ফীতি যদি নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাহলে যেভাবে পণ্যসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, নিঃসন্দেহে সেটি দূর করা সম্ভব হবে।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু তার পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোম্পানিগুলির মুনাফা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুর্নীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। অযৌক্তিক ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, সময়ের সাথে সমান তাল মিলিয়ে। যখন আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যায়, দাম কমানোর জন্য বানিজ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পণ্যের রাজস্ব, সরকারের ট্যাক্স কমায়। কিন্তু বিদ্যুৎ জ্বালানির ক্ষেত্রে সেই ব্যাপারগুলি দেখা যাচ্ছে না। সেগুলি আরও বাড়ানো হচ্ছে। সার্বিক মূল্য হারে যেটি প্রায় ৮৮০০কোটি টাকা বাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। কোম্পানিগুলির স্যান্ডার্ডমুনাফা আরও কয়েকগুণ মুনাফা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এইগুলি যদি নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তাহলে কোনভাবেই বিদ্যুৎ বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। ট্যাক্স বাড়ানো অর্থাৎ বেশি দামে উৎপাদন করা হচ্ছে এবং সেভাবেই কেনা হচ্ছে। উৎপাদন ক্ষমতা ৬৩%থেকে যদি ৬৯% করা হয়,তাহলেই দেখা যায় যে, ১৫০০০ কোটি টাকা অপচয় রোধ করা সম্ভব হয়। এসব বিষয়গুলি বিবেচনা করলে যেমন ভাল হবে, ঠিক তার আগে বোর্ডগুলিকে হামলাদের কবল থেকে রক্ষা করতে হবে। তারা যে জিম্মি হয়ে আছে, বিদ্যুৎও জ্বালানি মূলত অযৌক্তিক ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয়ে বন্দী হয়ে আছে, সেই বন্দী দশা থেকে বিদ্যুৎকে মুক্ত করতে হবে।
সেজন্য যেহেতু প্রশাসনিক ক্ষমতা রীতি নীতিগুলি অর্থাৎ উৎপাদন, সঞ্চালন এবং বিতরন কোম্পানি সমূহের গ্যাস বিদ্যুৎ তেল ইত্যাদি সবারই ,কোম্পানি সমূহের অতিরিক্ত বিভাগের চেয়ারম্যান,জ্বালানি বিভাগের সচিবরা তাদেরকে যদি এই দায়িত্ব থেকে আপনি অপসারণ না করেন, তাহলে এসব কোম্পানির ভিতরে জটিলতা থাকবেই। পেট্রোবাংলা বলেন অর্থাৎ অন্যান্য বলেন পিডিবি এদের মালিক। এদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা পিডিবির পক্ষে সম্ভব করতে হবে। বিষয়গুলি সংশোধন করতে হবে। এরা হচ্ছে এক একটি ইন্সটিটিউশন এবং এদের দায়িত্ব এবং কর্তৃত্বে থাকলে তাহলেই কেবল বিদ্যুৎখাত, গ্যাস জ্বালানিসহ লুণ্ঠনমূলক ব্যয় মুক্ত হবে। সুতরাং এটি না করে কোন উপকার আপনি পাবেন না। পিডিবির কাছে জবাবদিহিতা করবে কোম্পানিগুলি। পিডিবির কার্যক্রম মনিটরিং করবে মন্ত্রণালয়গুলি।তারা যদি শুধু কোম্পানিগুলিকে নিয়েই থাকে তাহলে কি করে সুশাসন নিশ্চিত হবে?
লেখক: জ্বালানি উপদেষ্টা, ক্যাব