শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫ | ৫ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

দেশরত্ন শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: আলোর অভিযাত্রা

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার অবিচল নেতৃত্ব আর মেধার আলোয় বিশ্ব দরবারে আজ অন্য এক আলোকিত বাংলাদেশ। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি ইতিহাসের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত একটি উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই পথে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে অনেক দূর এগিয়েছে বাংলাদেশ।

২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১৩ বছরে তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, কৃষিখাত, শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, অর্থনীতি, নারীর ক্ষমতায়ন ও প্রযুক্তি খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে এবং দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয় সীমার মধ্যে থেকেছে। এজন্য সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে মর্যাদাকর জাতিসংঘ পুরস্কার পেয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া শেষ করে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বেশ কয়েকজনের ফাঁসির রায় এবং ৭১’র যুদ্ধাপরাধীদের বেশ কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকর করে শেখ হাসিনার সরকার বাঙালি জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছে, এ সরকারের আমলে জেলহত্যা মামলার বিচারও সমাপ্ত হয়েছে।

২০১৫ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। ২০১৮ সালের ১৬ মার্চ জাতিসংঘ বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের মর্যাদা দিয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ২২৬৪ মার্কিন ডলার। নারী-পুরুষের সমতা (জেন্ডার ইক্যুইটি) প্রতিষ্ঠায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবার ওপরে আছে বাংলাদেশ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অনেক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিবেশ এবং টেকসই উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য লিডারশীপ ক্যাটাগরিতে শেখ হাসিনাকে তাদের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ-২০১৫’ পুরস্কারে ভূষিত করেছে। করোনাকালীন বৈশ্বিক মহামারিতেও বাংলাদেশের অর্থনীতি সব প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করে যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তা বিশ্ববাসীকে অবাক করেছে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দূরদর্শী অসাধারণ নেতৃত্ব ও মানবদরদী হৃদয় নিয়ে করোনা সংকটে যেভাবে দেশের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন, তা দেশে ও বিদেশে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।

বিশ্বের জনপ্রিয় ফোর্বস ম্যাগাজিনে করোনা মোকাবিলায় সফল নারী নেতৃত্বের তালিকায় (৮ জনের) স্থান করে নিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনাকালীন দুর্যোগেও অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে আমাদের দেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ছাড়িয়েছে, এটা বিশ্বাস করা যায়? কিন্তু আজকের এই বাংলদেশকে আলোকিত অভিযাত্রায় আনতে অনেক লড়াই-সংগ্রাম, চড়াই-উৎরাই, হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করতে হয়েছে শেখ হাসিনাকে।

১৯৮১ সালের ১৭ এপ্রিল সামরিক জান্তার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ও জীবনের মায়া ত্যাগ করে তিনি যদি বাংলাদেশে না ফিরতেন তাহলে মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত আর দুলাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিয়ে অর্জিত ধর্ম নিরপেক্ষ স্বাধীন বাংলাদেশ আজ পাকিস্তানের আদলে দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যতম একটি মৌলবাদী, জঙ্গি ও সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত হতো। তাই শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ৭৫’র ১৫ই আগস্ট কালরাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর বিপর্যস্ত বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর এক অনন্য অনুপ্রেরণা। তিনিই দেশে ফিরে বিভক্ত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে সামরিক জান্তাকে উৎখাতে আন্দোলনের ডাক দেন। তাঁর ত্যাগ, তিতিক্ষা ও সাহসী নেতৃত্বের কারণে দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসে, তাঁকে বার বার হত্যা চেষ্টা করা হলেও তিনি গণতন্ত্রের পথ থেকে সরে দাঁড়াননি। শেখ হাসিনার অকুতোভয় সাহসী নেতৃত্ব, সততা, মেধা ও প্রজ্ঞার কারণে বাংলাদেশ আজ আলোকিত অভিযাত্রায় শামিল হয়েছে, এগিয়ে যাচ্ছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ই মে ফিরে এসেছিলেন বলেই বারবার অন্ধকারে ডুবে যাওয়া বাংলাদেশ আজ আলোর মিছিলে, কল্যাণের পথে, উন্নয়নের জোয়ারে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে জাতির পিতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। মীরজাফর খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে আমাদের সেনাবাহিনীর কতিপয় স্বাধীনতা বিরোধী, পাকিস্তানপন্থী’ ক্ষমতালোভী অফিসার সেদিন যে নজীরবিহীন বর্বরোচিত নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত করেছিল তা বাঙালির গৌরবকে ম্লান করেছে এবং বাঙালিকে চিরদিনের জন্য ভাসিয়েছে অশ্রু সাগরে। ঘাতকরা এতটাই পাষাণ ছিল যে অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশু কেউ রক্ষা পায়নি ঘাতকদের হাত থেকে। খুনি চক্র চেয়েছিল বঙ্গবন্ধুর বংশের নাম নিশানা চিরদিনের জন্য মুছে ফেলতে। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সেদিন দেশের বাইরে অবস্থান না করলে তাদের জীবনেও নেমে আসত একই নির্মম পরিণতি। কিন্তু ১৯৮১ সালের ১৭ই মে জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার আগের ছয়টা বছর কি ভয়ংকর দুঃসহ যন্ত্রনায় কেটেছে শেখ হাসিনা আর তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানার, কল্পনা করতেও ভয় লাগবে আজ আমাদের।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বেলজিয়ামের ব্রাসেলস থেকে শেখ হাসিনা ও ওয়াজেদ পরিবারের প্যারিসে যাওয়ার কথা ছিল। সে সময় ওয়াজেদ পরিবার ও শেখ রেহানা আমন্ত্রিত হয়ে বেলজিয়ামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সানাউল হকের বাসভবনে অবস্থান করছিলেন। ভোর ৬টার দিকে হঠাৎ জার্মানির বনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী ফোন করে জানালেন, বাংলাদেশে একটি মিলিটারি ক্যু হয়েছে, কোনোভাবেই প্যারিসের দিকে না গিয়ে তাঁরা যেন তখনি জার্মানি চলে আসেন। এই খবরটা পাওয়া মাত্র বেলজিয়ামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সানাউল হক ওয়াজেদ পরিবার ও শেখ রেহানাকে যত তাড়াতাড়ি তার বাড়ি থেকে বিদায় দিতে পারেন সেই ব্যবস্থা করলেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ‘Hasina: A Daughter’s Tale’ চলচ্চিত্রে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যার খবর শুনে সানাউল হক হুমায়ুন রশীদ সাহেবকে বললেন, আপনি যে বিপদটা আমার ঘাড়ে দিয়েছেন ওটা আপনি এখন নিয়ে যান। তিনি সাক্ষাৎকারে আরও বলেন, আমাদের ওনার বর্ডার পর্যন্ত পোঁছে দেওয়ার কথা পৌঁছে দিলেন না, সোজা বলে দিলেন গাড়িটা নষ্ট। অথচ ১৪ই আগস্ট রাতে এই রাষ্ট্রদূতই অতিথিদের সম্মানে ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের আয়োজন করেছিল। উক্ত চলচ্চিত্রে সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা বলেছেন, কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে মানুষের কী পরিবর্তন, ক্যান্ডেল লাইট ডিনার থেকে ঘর থেকে বের করে দেওয়া এই অবস্থা। জননেত্রী শেখ হাসিনার এক বান্ধবীর স্বামী তিনি ব্রাসেলসে বাংলদেশ দূতাবাসে কর্মরত ছিলেন, পরে তাঁর গাড়িতে শেষ পর্যন্ত তাঁরা বর্ডার পৌঁছাতে পারেন। বর্ডারের ওপাশে জার্মানির রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী তাঁর সেক্রেটারিকে গাড়িসহ পাঠিয়েছিলেন তাঁদের নেওয়ার জন্য। ফলে শেষ পর্যন্ত বহু কষ্টে তারা জার্মানিতে হুমায়ূন রশীদ সাহেবের কাছে পৌঁছলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ‘Hasina: A Daughter’s Tale’ চলচ্চিত্রে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমাকে রাত্রে হুমায়ুন সাহেব আলাদা করে ডেকে নিলেন, তুমি একটু আসো, উনার ড্রয়িং রুমে উনি এবং উনার স্ত্রী বসা। তখন উনি বললেন, দেখ অনেক চেষ্টা করছি খোঁজ করতে, যতদূর খবর পাচ্ছি, কেউ বেঁচে নেই। শেখ হাসিনা সাক্ষাৎকারে আরও বলেন, যখন শুনলাম, সত্যি কথা কি, এ কথা শোনার পর বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমার শরীরের সমস্ত রক্ত হিমশীতল হয়ে গেছিল, মনে হচ্ছে পড়ে যাব। হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনেক সান্তনা দিলেন। হুমায়ূন রশীদ চৌধুরীর স্ত্রীও তখন তাঁদের জন্য অনেক করেছিলেন, তিনি তাঁদের জার্মানির Karlsruhe শহরে গাড়িতে পাঠানার ব্যবস্থা করে দেন। যাওয়ার সময় ১০০০ জার্মান মুদ্রা তাঁদের হাতে তুলে দেন, যাতে হাতে কিছু টাকা পয়সা থাকে। শুধু তাই নয় গরম কাপড় ভরে একটা স্যুটকেসও দেন যেন ঠাণ্ডায় কাজে লাগে।

এসময় জার্মান সরকার তাঁদের রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে চেয়েছিল, ভারতের প্রধানমন্ত্রী তাঁর রাষ্ট্রদূতকে আমাদের রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন রশীদ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বললেন। রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে চেয়ে যুগোশ্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটো তাঁর রাষ্টদূতের মাধ্যমে যোগাযোগ করলেন। কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যখন ম্যাসেজ পাঠালেন যে ভারতে যাওয়ার তাঁদের সব ব্যবস্থা করা হয়েছে, তাঁরা ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ২৪ আগস্ট সকাল ৯টায় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ভারতীয় দূতাবাসের এক কর্মকর্তা অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে তাদের ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দর নিয়ে যান।

এরপর, একটি এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে করে তারা ২৫ আগস্ট সকাল সাড়ে ৮টায় দিল্লির পালাম বিমানবন্দর পৌঁছান। শুরু হয় শেখ হাসিনার নির্বাসিত জীবন। ভারতে আসার পরে বোন আর স্বামী-সন্তানসহ শেখ হাসিনাকে দিল্লির লাজপাত নগরের ৫৬ রিং রোডে একটি ছোট বাসায় থাকতে দেওয়া হয়েছিল সেফ হোম হিসেবে। ১০ দিন পর্যন্ত শেখ হাসিনার মনে ক্ষীণ আশা ছিল, হয়তো মা আর রাসেলকে ওরা মারেনি। কিন্তু ৪ সেপ্টেম্বর দিল্লির সফদরজং রোডে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বাসবভনে রাত ৮টার দিকে পৌঁছানোর পর সব হিসেব এলোমেলো হয়ে যায়। সেখানে পৌঁছানোর মিনিট দশেক পরে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এসে হাসিনার পাশে বসেন। তাঁর এক কর্মকর্তাকে জানান, উপস্থিত সকলকে ১৫ আগস্টের সম্পূর্ণ ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করতে। কর্মকর্তাটি পুরো ঘটনা বলার মধ্যে বলে উঠলেন যে বেগম ফজিলাতুন্নেসা ও রাসেলও জীবিত নেই। হাসিনা আর সহ্য করতে পারেননি, কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি, শেষ আশাটুকুও নিভে যায় তাঁর। ভগ্ন হৃদয়ে ইন্দিরা গান্ধী তাকে জড়িয়ে ধরেন। এসময় ইন্দিরা গান্ধীরে স্নেহ ও ভালবাসা সম্পর্কে বলতে গিয়ে ‘Hasina: A Daughter’s Tale’ চলচ্চিত্রে এক সাক্ষাৎকারে জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যখন কথা বলছিলাম আমার দিকে তাকিয়ে বললো, তুমি কিছু খেয়েছো? তুমি কি ওমলেট খাবে? টোস্ট খাবে? চা খাবে? তিনি উঠে গিয়ে কাউকে বললেন, সেই ওমলেট, সেই টোস্ট আর নিজে কাপে চা ঢেলে উনি দিলেন। তুমি কিছু খাও, তোমার মুখটা খুব শুকনা, তুমি কিছু খাওনি। শেখ হাসিনা আরও বলেন, আসলে এই স্নেহ ও ভালোবাসাটা এতো খোলাভাবে তিনি ব্যবহার করলেন, এটা ভোলা যায় না, এটা মনে লাগে। তিনি আরও বলেন, সত্যি কথা কি ওই সময় সব হারাবার পর ওনার সামনে যেয়ে ওইটুকু অনুভূতি মনে হচ্ছিলো যে, না আমাদের জন্য কেউ আছে। শোকে মুহ্যমান দুই বোনের দিনগুলো দিল্লিতে ছোট একটা বাসার দুই রুমের মধ্যে কেটেছে অনেক কষ্ট আর যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে। এ প্রসঙ্গে ‘Hasina: A Daughter’s Tale’ চলচ্চিত্রে এক সাক্ষাৎকারে শেখ রেহানা বলেন, আল্লাহর এটা রহমত দুই বোনেকে পাগল বানিয়ে রাস্তায় ফেলেনি। আপা কান্না করে এক পাশে, আমি কান্না করি অন্য পাশে। তিনি আরও বলেন, আর একটা কখনও বলিনি, এখন ৪০ বছর হয়ে গেছে এখন বলা যায়, আমাদের দিল্লি থাকাকালীন আমাদের নামও পরিবর্তন করতে হয়েছিল, মি. তালুকদার, মিসেস তালুকদার, মিস তালুকদার, আশে পাশে যেন কেউ না জানে। এটা কি ব্যাপার, দেশ ছাড়া, ঘর ছাড়া, মা-বাপ ছাড়া, নামও বদলাবো, থাকবোনা এখানে, দরকার নেই। তখন উপায়ওতো নাই। দিল্লিতে জননেত্রী শেখ হাসিনা সারাক্ষণ এক উদ্বেগের মধ্যে থাকতেন, দেশে কি হচ্ছে, কি হবে। এ প্রসঙ্গে ‘Hasina: A Daughter’s Tale’ এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এই দেশটাকে স্বাধীন করেছিলেন আমার বাবা, দেশে গণতন্ত্র থাকবে, মানুষের কল্যাণ হবে, কিন্তু সেটাতো হলো না, উল্টো দেশে একটা খুনিদের রাজত্ব কায়েম হয়ে গেল। বিদেশের মাটিতে দুই বোন ক্ষণিকের জন্য ভুলেননি ১৫ই আগস্টের নির্মম ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কথা। এ প্রসঙ্গে ‘Hasina: A Daughter’s Tale’ চলচ্চিত্রে এক সাক্ষাৎকারে শেখ রেহানা বলেন, আপা লেখতেন বসে বসে আজকে চিনি কতটুকু, বিস্কুট কতটুকু, সুজি কতটুকু, ওর পাশে আমার লেখা যে, আল্লাহ তুমি আমাদের কেন বাঁচিয়ে রেখেছো জানি না, কিন্তু ওই খুনিদের ধরবো, বিচার করবো ইনশাল্লাহ, তারিখ দিয়ে লেখা। ১৯৭৬ সালের ডিসেম্বর শেখ রেহানা দিল্লি থেকে লন্ডনে পাড়ি জমান। ৭৭ এর জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে লন্ডনের কিলবার্নে শেখ রেহানার বিয়ে হয় পাত্র লন্ডন প্রবাসী শফিক সিদ্দিকের সঙ্গে। কিন্তু সে বিয়েতে শেখ হাসিনা তাঁর পরিবার নিয়ে অংশ নিতে পারেননি কেবল টিকেটের টাকার অভাবে। দুই সন্তান নিয়ে টিকেট কেটে লন্ডনে যাওয়ার মত টাকা তাঁর ছিল না।

এদিকে ১৯৮০ সালে ভারতে শেখ হাসিনার বাড়িতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আসতে লাগলেন। আওযামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক কাবুল যাওয়ার সময় এবং সেখান থেকে ফেরার সময় তাঁদের সাথে দেখা করেন। আওয়ামী লীগ নেতা জিল্লুর রহমান, আব্দুস সামাদ আজাদ, তৎকালীন যুবলীগ নেতা আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দিল্লিতে যান। তাদের সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিতে রাজি করানো। তারা তাঁকে ক্রমাগত বোঝাতে লাগলেন, তাঁর কেনো দেশে ফেরা উচিত এই মুহূর্তে এবং দলের ঐক্য বজায় রাখতে শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতির পদ গ্রহণের অনুরোধ জানান। শেখ হাসিনা বলতেন, আমি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে, এটাই আমার জন্য সবচেয়ে বড় গৌরব। আমার আর কিছু চাওয়ার নেই।

১৯৮১ সালের ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারি, ঢাকার ঐতিহাসিক ইডেন হোটেলে আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সে সম্মেলনে আওয়ামী লীগ তার রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সিদ্ধান্তটি নেয় যার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। দিল্লিতে থাকা অবস্থায় তিনি খবর পান, আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তাঁকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে। এর এক সপ্তাহ পরে আওয়ামী লীগের সেই সময়ের শীর্ষ নেতারা দিল্লি যান। আব্দুল মালেক উকিল, ড. কামাল হোসেন, জিল্লুর রহমান, আব্দুল মান্নান, আব্দুস সামাদ আজাদ, এম কোরবান আলী, বেগম জোহরা তাজউদ্দীন, স্বামী গোলাম আকবার চৌধুরীসহ বেগম সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, বেগম আইভি রহমান, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ ১৯৮১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে দিল্লি পৌঁছান। শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কয়েকটি বৈঠকও করেন তাঁরা। এরপর ড. কামাল হোসেন ও সাজেদা চৌধুরী ছাড়া সবাই ঢাকায় ফিরে যান। কামাল হোসেন ও সাজেদা চৌধুরীর ওপর দায়িত্ব ছিল তাঁরা শেখ হাসিনার ঢাকা ফেরার তারিখ চূড়ান্ত করবেন। দিল্লিতে থাকাকালীন নাজিমউদ্দিন আউলিয়ার দরাবারে যাওয়ার একটি ঘটনাও শেখ হাসিনার মনে দাগ কাটে যা তাঁকে দেশে ফিরতে সাহস যোগায়। এ প্রসঙ্গে ‘Hasina: A Daughter’s Tale’ চলচ্চিত্রে তথ্য পাওয়া যায়। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দুই বোন নাজিমউদ্দিন আউলিয়ার দরগায় যান , তারা তাদের নামসহ কোনো পরিচয়ও দেননি, একসময় খাদেম এসে একটা খাতা তাদের সামনে ধরলেন সেখানে দুই বোন দেখলেন তাঁদের পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৬ সালের ৯ই এপ্রিল এই দরগায় এসছিলেন, তারা যেদিন গেলেন সেই তারিখটাও ছিল ১৯৮১ সালের ৯ই এপ্রিল। এ প্রসঙ্গে উক্ত চলচিত্রে এক সাক্ষাৎকারে জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সত্যি কথা বলতে কি একটা সাহস আমার মনে আসলো, আমাকে যেতে হবে, বাংলাদেশের জন্য কিছু করতে হবে। এই বার্তাটাই মনে হয় পাচ্ছি।

অবশেষে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, ১৭ই মে, ১৯৮১, দিনটি ছিল রবিবার, ঝড় বৃষ্টির এক দিন। আওয়ামী লীগের দুই নেতা আব্দুস সামাদ আজাদ আর কোরবান আলীকে সঙ্গে নিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা রওনা দেন ঢাকায়। সেদিন বিকাল সাড়ে ৪টায় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং বিমানে তিনি ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে তৎকালীন ঢাকার তেজগাঁও কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেন। সেদিন সব বাধা ও প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে লাখ লাখ জনতা ঢাকা বিমানবন্দরে তাঁকে অভিনন্দন জানাতে ছুটে আসেন। সেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনাকে একনজর দেখার জন্য ঢাকায় মানুষের ঢল নেমেছিল। কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও শেরেবাংলা নগর পরিণত হয়েছিল জনসমুদ্রে। ফার্মগেট থেকে কুর্মিটোলা বিমানবন্দর পর্যন্ত ট্রাফিক বন্ধ ছিল প্রায় ছ’ঘণ্টা। ঢাকা বিমানবন্দরে তিনি বিমান থেকে নামার পর আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা স্লোগান দেয় ‘হাসিনা তোমার ভয় নাই, আমরা আছি লাখো ভাই’। দেশের মাটিতে নেমে কান্নায় ভেঙে পড়েন শেখ হাসিনা। দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে তিনি বলেন, ‘যেদিন আমি বাংলাদেশ ছেড়ে যাচ্ছিলাম, সেদিন আমার সবাই ছিল। আমার মা-বাবা, আমার ভাইয়েরা, ছোট্ট রাসেল সবাই বিদায় জানাতে এয়ারপোর্টে এসেছিল। আজকে আমি যখন ফিরে এসেছি, হাজার হাজার মানুষ আমাকে দেখতে এসেছেন, স্বাগত জানাতে এসেছেন, কিন্তু আমার সেই মানুষগুলো আর নেই। তারা চিরতরে চলে গেছেন।’ তিনি আবেগরুদ্ধ হয়ে বলেন, ‘বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তি সংগ্রামে অংশ নেওয়ার জন্য আমি দেশে এসেছি। আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।’

বিমানবন্দর থেকে শেখ হাসিনাকে নিয়ে যাওয়া হয় মানিক মিয়া এভিনিউয়ে, সেখানে লাখো জনতার উপস্থিতিতে এক সমাবেশে শেখ হাসিনা বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই।’

এভাবেই ১৯৮১ সালের ১৭ই মে ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে স্বদেশে ফিরে আসেন বাংলাদেশের প্রাণপ্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা। নেতাজী সুভাষ বসু বলেছিলেন, ‘বিপ্লবের পথ একেবারে ঋজুপথ নয়। এ পথে নিরবচ্ছিন্ন সাফল্য আসে না, এ পথ বহু বিঘ্নসংকুল, সুদীর্ঘ এবং সর্পিল।’ শেখ হাসিনা নিজেও এ কথা জানতেন, যে কারণে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের জন্য নয়াদিল্লি থেকে ঢাকা রওয়ানা হওয়ার কয়েকদিন আগে মার্কিন সাপ্তাহিক নিউজউইক পত্রিকার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তাঁর স্বদেশে প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা এক হৃদয়গ্রাহী ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। ১১ মে নিউজউইক-এ বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বক্স-আইটেম হিসেবে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, ১৯৭৫ সালে সামরিক চক্র কর্তৃক ক্ষমতা দখলকালে নিহত পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য শেখ হাসিনা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি নিহত হওয়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত নন; এমন কী যে সরকারের মোকাবিলা করবেন তার শক্তিকে তিনি বাঁধা বলে গণ্য করবেন না। তিনি বলেন, ‘জীবনে ঝুঁকি নিতেই হয়। মৃত্যুকে ভয় করলে জীবন মহত্ব থেকে বঞ্চিত হয়।’

দেশে ফেরার দিন থেকেই শেখ হাসিনা উপলব্ধি করেন কত বিপদসংকুল পথ পাড়ি দিতে হবে, সামরিক জান্তাদের কত নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হবে। ঢাকা বিমানবন্দর থেকে শেখ হাসিনা সরাসরি গিয়েছিলেন তাঁদের বাড়ি ৩২ নম্বর ধানমন্ডি যেখানে ১৫ই আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটে ৬ বছর আগে বাবা-মাসহ পরিবারের সবগুলো আপনজনকে হারিয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কুশীলব ও এই বাংলার মাটিতে রাজাকার-যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসনকারী প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান তাঁকে সে বাড়িতে ঢুকতে বাধা দেয়। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়, যাতে শেখ হাসিনা সেই বাড়িতে ঢুকতে না পারেন। স্বজনহারা আমাদের এই প্রিয় নেত্রী সেদিন ৩২ নম্বরের সামনের রাস্তাতে বসেই বুকফাটা আর্তনাদে সবার জন্য দোয়া করেছিলেন, আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছিলেন। দেশে ফেরার পর তাঁকে কঠিন এক সংগ্রামে লিপ্ত হতে হয়, পদে পদে হত্যার আশঙ্কা। সামরিক জান্তা এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে ৮০’র দশকে তাঁকে বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার এমনকি গৃহবন্দি হতে হয়, বারবার তাঁর উপর হামলা চালানো হয়, হামলা চালানো হয় জনসমাবেশে। এরশাদ বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সামরিক জান্তা এরশাদের রোষানলে ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারি ও নভেম্বর মাসে তাঁকে গৃহবন্দি হতে হয়। ১৯৮৫ সালের মার্চ মাসে তিনি আবারও তিনমাসের মত গৃহবন্দি ছিলেন। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে মিছিল করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বধীন আটদলীয় জোটের জনসভায় লালদিঘির ময়দানে যাওয়ার পথে শেখ হাসিনার ট্রাক মিছিলে নির্বিচার গুলি ছুড়েছিল এরশাদ সরকারের পুলিশ ও সাদা পোষাকধারীরা। তখন পুলিশের নির্বিচারে গুলিতে ২৪ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ৯ জন শেখ হাসিনাকে মানববর্ম তৈরি করে রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হন। ৯০’র গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতনের পরও পরবর্তীতে শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য বারবার তাঁর উপর হামলা চালানো হয়, এমন কি নারকীয় গ্রেনেড হামলা চালানো হয় জনসমাবেশে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বাংলার কোটি কোটি মানুষের নয়নের মনি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের হত্যার জন্য বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় চালানো হয় স্মরণাতীত কালের ভয়াবহ নারকীয় গ্রেনেড হামলা। সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা আইভি রহমান ও শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষী মাহবুবসহ আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতাকর্মী বোমার আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে নিহত হয়েছেন। সেদিনও আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মী শরীরে অজস্র স্প্রিন্টার আর বুলেটের গর্ত নিয়েও তৈরি করেছিল মানব দেওয়াল, মৃত্যু দিয়ে প্রিয় নেত্রীর নিশ্চিত মৃত্যুকে ফিরিয়েছেন তাঁরা। ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর ক্ষমতা নয়, দেশের মানুষের অধিকার আদায়, বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জেল হত্যার বিচার এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে সোচ্চার ছিলেন শেখ হাসিনা। এ সব কঠিন কাজ সম্পন্ন করতে এ পর্যন্ত তিনি শত্রুপক্ষের কমপক্ষে ২০ বার হত্যাচেষ্টার সম্মুখীন হন।

শেখ হাসিনাও তাঁর বাবার মত দেশের মানুষের প্রতি টান, তাদের প্রতি একপ্রকার দায়বদ্ধতার টান থেকে কখনোই বের হতে পারেননি। আর তাই সেই রক্তের ডাকে সাড়া দিয়ে মৃত্যু ভয় উপেক্ষা করে তিনি ফিরেছিলেন ১৯৮১ সালের ১৭ই মে স্বদেশের মাটিতে। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিনটি আমাদের জাতীয় জীবনের জন্যে বিশাল গুরুত্ব বহন করে। কারণ শেখ হাসিনা ফিরে এসেছেন বলেই এদেশে সামরিক জান্তার পতন হয়েছে, গণতন্ত্র ফিরে এসেছে। শেখ হাসিনা দেশে ফিরে শক্ত হাতে দলের হাল ও গণতন্ত্রের পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে ধরে সহস্র বাধা অতিক্রম করে জনগণের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে দেশে ফেরার ১৫ বছরের মাথায় ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হন। এর ফলে অন্ধকার থেকে বাংলাদেশ আবার ফিরে আসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকিত ধারায়। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে তিনি সুশাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের পাশাপাশি কুখ্যাত ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) আইন বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বিচার শুরু করেন এবং তাঁর শাসনামলেই ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকা জেলা ও দায়রা জজের আদালত কর্তৃক ঘোষিত বিচারের রায়ে প্রকাশ্য ফায়ারিং স্কোয়াডে ১৫ জন ঘাতকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার বিপুলভোটে জয় লাভ করে ক্ষমতায় আসলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ৭১’র যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নেন। শুধু তাই নয়, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার দীর্ঘ ৩৪ বছরের পথপরিক্রমা এবং ২০১০ সালের ২৮ শে জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আটককৃত খুনির ফাঁসির রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে কিছুটা হলেও জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়। পলাতক ৭ দণ্ডপ্রাপ্ত আসাসিদের মধ্যে অন্যতম ক্যাপ্টেন (বরখাস্তকৃত) আব্দুল মাজেদকে গত ১২ এপ্রিল ২০২০ দিবাগত রাতে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যদণ্ড কার্যকর করা হয়। জননেত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলেই ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ঐতিহাসিক জেলহত্যা মামলায় রায় প্রদান করেন, এরই মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৩৮ বছর পর জাতি পায় জেলহত্যার বিচার। ২০০৯ সাল থেকে একটানা জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন, তাঁর শাসনামলেই ৭১-এ সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপারাধে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীর বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলছে এবং ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে ঘোষিত ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে।

দেশে প্রত্যাবর্তনের পর থেকে এই ৪২ বছরে প্রতিনিয়ত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ঐক্যের প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। তাঁর আলোকিত নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে এক আলোকিত অভিযাত্রায় শামিল হয়েছেন, বিশ্ব নেতৃত্বে আজ তিনি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে নিয়েছেন।

১৯৯৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় তৎকালীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব ল’ ডিগ্রিতে ভূষিত করে। এ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট জন ওয়েসলিং একটি প্রমাণপত্র ‘সাইটেশান’ পাঠ করেন তার শুরুতেই লেখা ছিল- ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনার পিতা বাংলাদেশের জন্য নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। আর আপনিও বারবার নিজের স্বাধীনতা বিসর্জন দিয়ে এবং নিজের জীবনকে বিপন্ন করে দেশে গণতন্ত্রের পুনর্জন্ম ঘটিয়েছেন।’ বাংলাদেশে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরনার্থীকে আশ্রয় দেওয়ায় গার্ডিয়ান পত্রিকায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যে বিশাল মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন তা বিরল।’ আর শান্তিতে নোবেলজয়ী কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হোসে ম্যানুয়েল সান্তোষ শেখ হাসিনাকে ‘বিশ্বমানবতার বিবেক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। আরেক নোবেলজয়ী কৈলাস সত্যার্থী শেখ হাসিনাকে ‘বিশ্বমানবতার আলোকবর্তিকা’ হিসেবে তুলনা করেছেন। নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিবর্তনের মূল কারণ।’

১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে এদেশের গণতন্ত্র নস্যাৎ ও স্বাধীনতার মূল্যবোধ ভূলুণ্ঠিত করা হয়। ১৯৮১ সালের ১৭ মে রাজনীতিবিদ হিসাবে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন আবারো দেশে স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করে, তাঁর সাহসী নেতৃত্বে যথার্থই জেগে উঠে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয় শেখ হাসিনার সৃজনশীল ও দৃঢ় নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে এক অনন্য উচ্চতায় পোঁছেছে, তিনি আজ দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে আপন আলোয় উদ্ভাসিত হয়েছেন। এমন একজন জননন্দিত বিশ্ব নেতাই কেবলমাত্র পারেন ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে। ১৭ই মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন যেন এক আলোর অভিযাত্রার আখ্যান। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য উত্তরসূরী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার ৪২তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে তাঁকে জানাই বাঙালির হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে সশ্রদ্ধ অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা।

লেখক: সভাপতি, আইন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং
সদস্য, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক উপ-কমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

আরএ/

Header Ad
Header Ad

নারীরা কেন বয়সে ছোট পুরুষের সঙ্গে প্রেমে জড়াচ্ছেন?

ছবি: সংগৃহীত

সম্পর্ক তৈরির বেলায় বয়স বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তবে বর্তমান প্রজন্মের অনেকের কাছে বয়স বিশেষ গুরুত্ব বহন করে না। তাই আজকাল নিজের বয়সের চেয়ে কম বয়সের মানুষের সঙ্গে সম্পর্কে জড়াচ্ছেন তরুণ–তরুণীরা।

পুরুষের ক্ষেত্রে এমন সম্পর্ক সমাজে স্বাভাবিক হলেও নারীর ক্ষেত্রে নয়। তবে আজকাল অনেক নারীই সঙ্গী বাছাই করার সময় বয়সের ফারাককে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন না। তাই তাঁরা এখন প্রেমিক বা দাম্পত্যসঙ্গী হিসেবে বেছে নিচ্ছেন কম বয়সীদের। ডেটিং অ্যাপের ট্রেন্ড বলছে, নারীরা পছন্দের ক্ষেত্রে সুন্দর মন, ব্যক্তিগত সুরক্ষা, আত্মবিশ্বাসী সঙ্গীকে খুঁজে নিতে চান। যেকোনো সম্পর্কে ভারসাম্য ও গতিশীলতাকে গুরুত্ব দেন।

ডেটিং ট্রেন্ডে নারীরা

মনোবিদেরা মনে করেন, এখনকার নারীরা নিজেদের সম্পর্ক নিয়ে বেশ সচেতন। যেকোনো বিষয়কে সহজভাবে নিতে পারার মানসিকতা বেড়েছে, বিশেষত অগ্রসর বিশ্বে তাঁরা কোনো বিষয়ে ভীত নন। সম্পর্কে যুক্ত হওয়ার সময় আত্মবিশ্বাস ও আত্মসচেতনতায় গুরুত্ব দেন তাঁরা। ঐতিহ্যগতভাবে পুরুষকে একচেটিয়াভাবে সফল কিংবা শক্তিশালী হিসেবে মেনে নিতে তাঁরা নারাজ। সঙ্গীর প্রতি আনুগত্যের চেয়ে নারীরা নিজের সুখ ও সামগ্রিক মঙ্গলকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। এসব কারণেই অনেক নারী কম বয়সী পুরুষ সঙ্গীর সঙ্গে ডেটিং করছেন। অর্থাৎ ব্যক্তিগত পছন্দকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন তাঁরা। কম বয়সী পুরুষ সঙ্গীর কাছ থেকে মানসিক, সামাজিক চাহিদাসহ অন্যান্য প্রয়োজনকে গুরুত্ব দিয়েই সম্পর্কে জড়াচ্ছেন।

নানা কারণে সম্পর্কে জড়ানোর সময় নারীরা কম বয়সীদের গুরুত্ব দেন

নিজের চেয়ে কম বয়সী পুরুষ সঙ্গীর সান্নিধ্যে আসায় নারীদের মধ্যে নিজেদের আরও তরুণ ভাবার একধরনের প্রবণতা তৈরি হয়েছে। কম বয়সী তরুণেরা নিজেদের সম্পর্কে সচেতন, নিজের স্বাস্থ্য ও রুচির বিষয়েও সজাগ। নতুন নতুন অভিজ্ঞতা কম বয়সীদের পৃথিবীকে নতুন করে জানার সুযোগ দেয়। এসব কারণে সম্পর্কে জড়ানোর সময় নারীরা কম বয়সীদের গুরুত্ব দেন। নারীরা এখন আগের চেয়ে বেশি অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্বাধীনতার জন্য ছুটছেন। পারিবারিক বা সামাজিক নিরাপত্তার জন্য বয়স্ক সঙ্গী খোঁজার প্রথাগত নিয়মে তাঁরা আর বিশ্বাসী নন। ব্যক্তিগত পরিপূর্ণতা, মানসিক সংযোগ ও আকর্ষণকে অগ্রাধিকার দিতেই নিজের পছন্দের সঙ্গীকে বেছে নিচ্ছেন।

বয়স কোনো বিষয় না

বয়সের ব্যবধান সম্পর্কে এখন নারীদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বেশ নমনীয়। তরুণদের তুলনায় নারীরা মধ্যবয়সীদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর আগে অনেক চিন্তা করছেন। মধ্যবয়সী বা সমবয়সীদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক রীতিনীতি বা লোকদেখানোর আচারকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় বলে মনে করেন নারীরা। সম্পর্ক নিয়ে পুরোনো সামাজিক নিয়মগুলোকে চ্যালেঞ্জ করতে চান তাঁরা।

Header Ad
Header Ad

জুলাই-মার্চ মাসে ৩০.২৫ বিলিয়ন ডলার পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ

ছবি: সংগৃহীত

চলতি অর্থবছরের (২৪-২৫) জুলাই-মার্চ মাসে তৈরি পোশাক রফতানি বেড়েছে ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ মাসের দেশভিত্তিক রফতানি তথ্য থেকে বিষয়টি জানা গেছে।

জানা গেছে, এই সময়ে ৩০ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ। যা পোশাক খাতের স্থিতিস্থাপকতা এবং সম্ভাবনা তুলে ধরে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

তথ্য থেকে জানা যায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখনো বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের মোট রপ্তানির ৪৯ দশমিক ৮২ শতাংশই রফতানি হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নে। যার মোট বাজার মূল্য ১৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার।

এরপরেই রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজার। এ বাজারে মোট রফতানি হয়েছে ৫ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক। যা মোট রফতানির ১৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ। যেখানে কানাডার মোট বাজার অংশ ছিল ৯৬৩ দশমিক ৮৫ মিলিয়ন ডলার। যার বাজার অংশ ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। যুক্তরাজ্যের বাজারও গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যার রফতানি মূল্য ৩ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার। যা বাংলাদেশের মোট তৈরি পোশাক রফতানির ১১ দশমিক ১০ শতাংশ ।

প্রবৃদ্ধির দিক থেকে ইইউতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি বছরের পর বছর ধরে উল্লেখযোগ্যভাবে ১১ দশমিক ৩১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। উল্লেখিত সময়ে যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৭ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং কানাডা ১৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, যুক্তরাজ্যে তৈরি পোশাক রফতানি ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ এর একটি সামান্য প্রবৃদ্ধির হার প্রদর্শন করেছে।

ইইউর মধ্যে, জার্মানি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার হিসেবে দাঁড়িয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের রফতানির পরিমাণ ৩ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার, স্পেন ২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার, ফ্রান্স ১ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার, ইতালি ১ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার, পোল্যান্ড ১ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার এবং নেদারল্যান্ডস ১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার।

প্রবৃদ্ধির হার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল - জার্মানি (১০ দশমিক ৭২ শতাংশ), ফ্রান্স (১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ), নেদারল্যান্ডস (২৩ দশমিক ১৫ শতাংশ), পোল্যান্ড (১০ দশমিক ৩২ শতাংশ), ডেনমার্ক (১২ দশমিক ৮০ শতাংশ) এবং সুইডেন (১৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ) ।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতেও অপ্রচলিত বাজারে প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, সামগ্রিকভাবে ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে মোট রফতানি ৫ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা বাংলাদেশের মোট রফতানির ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ দখল করেছে।

এই বাজারগুলোর মধ্যে, জাপান মোট ৯৬০ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন ডলার আমদানি করে শীর্ষে রয়েছে, তারপরে অস্ট্রেলিয়া ৬৫৩ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন ডলার এবং ভারত ৫৩৫ দশমিক ১৫ মিলিয়ন ডলার আমদানি করে।

তুরস্ক এবং মেক্সিকোর মতো দেশগুলোতেও উল্লেখযোগ্য রফতানি হয়েছে। তুরস্কে ৩৫৭ দশমিক ২২ মিলিয়ন ডলার এবং মেক্সিকোতে ২৫১ দশমিক ২২ মিলিয়ন ডলার, যা প্রশংসনীয়। উল্লেখিত সময়ে ভারতে ২০ দশমিক ৪৫ শতাংশ, জাপান ১০ দশমিক ০৬ শতাংশ, মেক্সিকো ২৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং তুরস্কের ৩২ দশমিক ৫৪ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

রিপোর্টে দেখা গেছে, এই সময়কালে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, তুরস্ক এবং মেক্সিকোতে প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক থাকলেও রাশিয়া, কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মালয়েশিয়ায় রফতানি হ্রাস পেয়েছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া এবং কোরিয়ায় নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি এই বাজারগুলোতে আরও গুরুত্বসহকারে রফতানি বাজার দেখা দরকার।

নিটওয়্যার খাত মোট ১১ দশমিক ২২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে। ওভেন সেক্টরেও ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যে প্রবৃদ্ধি ধীর হলেও অপ্রচলিত বাজারে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পয়েছে।

রফতানির চলমান প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্যভাবে ইইউ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল। যা বাংলাদেশের প্রধান বাজার হিসেবে অব্যাহত রয়েছে। যা এই ক্ষেত্রগুলির মধ্যে আরও সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়।

বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক, বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘এটি আমাদের মোট রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে প্রধান ঐতিহ্যবাহী বাজারের তাৎপর্য প্রদর্শন করে।’ তিনি আরও বলেন, অপ্রচলিত বাজারে মাঝারি প্রবৃদ্ধি এই বিভাগে আরও গবেষণা এবং মনোযোগের গুরুত্বকে তুলে ধরে, কারণ এর যথেষ্ট প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে, যা ঐতিহ্যবাহী বাজারের ওপর নির্ভরতা ভারসাম্য বজায় রাখতেও সাহায্য করবে।

রুবেল বলেন, স্থায়ী বৈশ্বিক বাণিজ্য উত্তেজনা ক্রমাগত বৈশ্বিক পরিবেশকে পুনর্গঠন করছে। এমন সুযোগ তৈরি করছে যা বাংলাদেশ সুবিধা নিতে পারে।

Header Ad
Header Ad

মুন্সীগঞ্জে মাইক্রোবাসের সঙ্গে ধাক্কা

সংঘর্ষে উড়ে গেছে বাসের ছাদ, তবুও ১০ কিলোমিটার চালিয়ে ৬০ যাত্রীকে বাঁচালেন চালক

ছবি: সংগৃহীত

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে মাইক্রোবাসের সঙ্গে ধাক্কা লাগার পর কাভার্ডভ্যান ও একটি কন্টেইনারের সঙ্গে সংঘর্ষে উড়ে গেছে বরিশাল এক্সপ্রেস নামের যাত্রীবাহী একটি বাসের ছাদ। পরপর তিন দফা দুর্ঘটনায় পড়ে আহত হন বাসের অন্তত ২০ যাত্রী।

তবু বাস না থামিয়ে ছাদবিহীন গাড়িটি ১০ কিলোমিটার পথ চালিয়ে নিয়ে যান চালক। পরে জনরোষে গাড়ি থামাতে বাধ্য হন।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের শ্রীনগরের সমষপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বাসটিতে ৬০ যাত্রী ছিলেন।

বাসের যাত্রীরা জানান, ঢাকা থেকে বরিশাল এক্সপ্রেস লিমিটেডের বাসটি দ্রুতগতিতে চালাচ্ছিলেন চালক। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের শ্রীনগরের কামারখোলা এলাকায় পৌঁছেলে একটি কাভার্ডভ্যানের সঙ্গে ধাক্কা লাগে বাসটির। এতে বাসটির সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এ সময় চালক বাসটি না থামিয়ে আরও বেপরোয়া গতিতে চালাতে থাকে। সমষপুর এলাকায় পৌঁছে অপর একটি প্রাইভেটকারকে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে বাসটির ছাদ বডি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রাস্তায় পড়ে যায়। যাত্রীরা চালককে থামাতে অনুরোধ করলেও সে তা উপেক্ষা করে।

যাত্রীরা বলেন, চালক দুর্ঘটনাস্থলের অদূরে হাইওয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গাড়ি দেখে ছাদবিহীন চলন্ত বাস চালিয়ে ১০ কিলোমিটার দূরের পদ্মা সেতু উত্তর থানার লৌহজংয়ের কুমারভোগ এলাকায় নিয়ে আসে। এ সময় আহত যাত্রীদের ‘বাঁচাও বাঁচাও’ চিৎকার শুনে বাসটি আটক করে জনতা।

পদ্মা সেতু উত্তর থানার ওসি মো. জাকির হোসেন জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় থানা, হাইওয়ে পুলিশ ও শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। আহত যাত্রীদের উদ্ধার করে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর মধ্যে গুরুতর আহত শাহিন নামের এক যাত্রীকে শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

চালক ও হেলপার বাস রেখে পালিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

নারীরা কেন বয়সে ছোট পুরুষের সঙ্গে প্রেমে জড়াচ্ছেন?
জুলাই-মার্চ মাসে ৩০.২৫ বিলিয়ন ডলার পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ
সংঘর্ষে উড়ে গেছে বাসের ছাদ, তবুও ১০ কিলোমিটার চালিয়ে ৬০ যাত্রীকে বাঁচালেন চালক
কোলের সন্তান বিক্রি করে অলংকার, মোবাইল কিনলেন মা
চুয়াডাঙ্গায় বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে দু’জন নিহত
ইয়েমেনের তেল বন্দরে মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ৩৮
হবিগঞ্জে ট্রাক-পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ৪
সৌদি আরব-মরক্কো থেকে ৪৬৬ কোটি টাকার সার কিনবে সরকার
গাইবান্ধায় মাদক মামলায় ৩ যুবকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের আহ্বান জানালেন প্রধান উপদেষ্টা
তোপের মুখে ওয়াক্‌ফ আইন স্থগিত করল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
নিজেকে বরিশাল সিটির মেয়র ঘোষণার দাবিতে মামলা করলেন ফয়জুল করীম
ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদের ‘পূর্ণ নিরাপত্তা’ নিশ্চিতের আহ্বান বাংলাদেশের
টাঙ্গাইলে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে কেন্দ্র সচিব ও পরীক্ষার্থীসহ আটক ৬
৭১ এর গণহত‍্যার জন‍্য ক্ষমা ও সম্পদ ফেরত দেয়া নিয়ে আলোচনায় সম্মত পাকিস্তান
এবার স্ত্রী রিয়া মনিকে তালাকের ঘোষণা দিলেন হিরো আলম
সাবেক এমপি বাহারের জমি-বাড়ি জব্দ, ২৯টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো ধরণের বাণিজ্যযুদ্ধে জড়াতে চায় না ভারত
বিজ্ঞানীদের সফলতা: ইমপ্লান্ট নয়, নতুন করে গজাবে ক্ষয়ে যাওয়া দাঁত!
নওগাঁয় বাসায় ঢুকে তরুণকে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা