সারের ব্যবহার পরিমিত করতে কৃষি মন্ত্রণালয়ে পরামর্শ
ইউরিয়া সারের দাম বাড়ানোর পর এখন সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় সারের পরিমিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে।
সোমবার (৮ আগস্ট) কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে কৃষকদেরকে এমন একটি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন সময় সার ফসল উৎপাদনের জন্য যেমন প্রয়োজনীয়, তেমনি সারের অতিরিক্ত ব্যবহার ফসল, মাটি ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। সারের অতিরিক্ত ব্যবহারে ফসল উৎপাদনের খরচ ও বৃদ্ধি পায়।
সারের ব্যবহার পরিমিত করতে কৃষকদেরকে যেসব পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সেগুলো হচ্ছে-পরিমিত সার ব্যবহারে রোগ ও পোকার আক্রমণ কম হয়। ফলে বালাইনাশক কম লাগে।
অধিক ইউরিয়া ব্যবহারে ফসলের উৎপাদন কখনো কখনো বৃদ্ধি পেলেও জমির উর্বরতা কমে যায়। নাইট্রোজেন বাতাসে মিশে পরিবেশ দূষণ করে। আবার পানিতে মিশে মানুষের জন্য ক্ষতির কারণ হয়।
অতিরিক্ত নাইট্রোজেন ব্যবহারে গাছের কোষপ্রাচীর পাতলা হয়ে যায়। ফলে গাছের কাঠামোগত শক্তি কমে যায়। গাছের কাণ্ড স্বাভাবিকের চেয়ে লম্বা ও নরম হয়ে যায় এবং কাণ্ডের চেয়ে পাতা বেশি ভারী হয়। ফলে গাছ সহজেই হেলে পড়ে।
নাইট্রোজেন বেশি ব্যবহারে মাটিতে বোরন, দস্তা ও কপারের ঘাটতি হয়।
টিএসপি/ ডিএপি সার অতিরিক্ত ব্যবহার করলে ফসলের বৃদ্ধি কমে যায় ও আগাম পরিপক্কতা দেখা যায়। অম্ল মাটিতে ফসফেট আটকে যায় বিধায় গাছের কোনো কাজেই আসে না। বেশি ফসফেট জাতীয় সার ব্যবহার করলে নাইট্রোজেন, আয়রন, জিংক, কপার ও ম্যাঙ্গানিজের অভাব মাটিতে দেখা দেয়।
এমওপি/এসওপি (পটাশিয়াম) সার অতিরিক্ত ব্যবহার করলে মাটির ক্যালসিয়াম ও বোরন শুষে নেয় এবং পানি নিঃসরণের হার কমে যায়। গাছের বৃদ্ধি মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়।
জিপসাম সার অতিরিক্ত ব্যবহার করলে শিকড়ের বৃদ্ধি কমে যায়। ফলে গাছের শারীরবৃত্তিয় কার্যক্রম কমে যায়।
জিংক সালফেট অতিরিক্ত ব্যবহারে মাটিতে বিষক্রিয়া হয়, গাছের আমীষ উৎপাদন ব্যহত হয়।
বোরনের অতিরিক্ত ব্যবহারে কচিপাতা ও ডগা ক্ষতিগ্রস্থ হয়, ফলন কম হয়।
অম্লীয় মাটিতে চুন বেশি ব্যবহার করলে মাটিতে থাকা জিংক, বোরন, আয়রন, কপার ও ম্যাঙ্গানিজের অভাব হতে পারে।
করণীয় সম্পর্কে বলা হয়েছে
জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। খামার/গৃহস্থালীন আবর্জনা, উচ্ছিষ্ট পদার্থ ইত্যাদি দিয়ে বিনা খরচে জৈব সার উৎপাদন করণ।
ইউরিয়া সার প্রতি ফসলেই পূর্ণমাত্রায় প্রয়োগ করতে হয়। রবি মৌসুমে টিএসপি, ডিএপি প্রয়োগ করলে পরবর্তী মৌসুমে ৩০-৫০শতাংশ কম লাগে (খ) এমওপি পরবর্তী মৌসুমে ৩০-৪০ শতাংশ কম লাগে। জিপসাম পরবর্তী ফসলে ভিজা জমিতে পূর্ণমাত্রায় দিতে হয় এবং শুকনা জমিতে ৫০ শতাংশ দিলেই চলে। জিংক সার পরবর্তী মৌসুমে অর্ধেক দিলেই চলে
বোরন বছরে ১ বার দিলেই চলে।
জমিতে একবার চুন ব্যবহারের পর পরের ১ বছরে চুন ব্যবহার করতে হয় না। সুষম মাত্রায় পরিমিত পরিমাণ সার ব্যবহারের জন্য মাটি পরীক্ষা করে/অনলাইনে সার সুপারিশ নির্দেশনা মেনে সার দিন।
আপনার ব্লকের উপসহকারী কৃষি অফিসার (এসএএও) অথবা নিকটস্থ উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করে সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ করুন। অর্থ বাঁচান, জমি ও ফসল নিরাপদ রাখুন।
এনএইচবি/এমএমএ/