চোখের ওপরে ভ্রু না থাকলে কী হতো
ছবি সংগৃহিত
আমাদের চোখের জন্য ভ্রু হচ্ছে 'সুইস আর্মি নাইফ'। অর্থাৎ, এটা একাধিক কাজ করে। চোখের প্রতিরক্ষায় এর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।
প্রথমত, ভ্রু আমাদের চোখকে রক্ষা করে। চোখের উপরে এবং নিচে আইভ্রু এমনভাবে বাঁকানো থাকে, যার ফলে বৃষ্টি, ঘাম ও আর্দ্রতা আমাদের চোখের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না এবং আমাদের দৃষ্টি সবসময় স্বচ্ছ থাকে। বাইরের ধুলাবালি বা ছোটখাটো বস্তু থেকেও ভ্রু আমাদের চোখকে রক্ষা করে।
চোখের ভ্রু বিভিন্ন আকার, আকৃতি ও রঙের হয়ে থাকে। চেহারার সৌন্দর্যবর্ধনই কিন্তু ভ্রুর একমাত্র কাজ নয়। চোখের সুরক্ষায় ভ্রুর রয়েছে বহুমাত্রিক কাজ।
অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের তুলনায় মানুষ চোখের ওপর বেশি নির্ভরশীল। ভ্রু বৃষ্টির পানি ও ঘাম থেকে চোখকে সুরক্ষা দেয়। এটি না থাকলে চোখে পানি ঢুকে দৃষ্টি ঘোলা হয়ে যেত। কিছু ক্ষেত্রে ভ্রু ধুলাবালু ও সূর্যের তীব্র রশ্মি থেকে চোখকে সুরক্ষা দেয়। তাই বিবর্তনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে মানুষ দেহের বেশির ভাগ লোম হারালেও চোখের পাপড়ি ও ভ্রু রয়ে গেছে।
কমিউনিকেশন বা ভাব প্রকাশেও ভ্রুর ভূমিকা রয়েছে। মুখের অভিব্যক্তি মানুষের মনের আবেগ ও অনুভূতি প্রকাশ করে। আর অভিব্যক্তিকে অতিরঞ্জিত করে ভ্রু। মানুষের আনন্দ, দুঃখ ও বিস্ময়ের মতো বিষয়গুলো ভ্রুর নড়াচড়া দেখে বোঝা যায়। অনেক সময় কোনো শব্দ ব্যবহার না করেও ভ্রু নাচিয়ে অনেক কিছু বলে দেওয়া যায়। কার্টুন চরিত্রেও চোখের ওপরে বিভিন্ন ধরনের ভ্রু আঁকার মাধ্যমে রাগ, ক্ষোভ ও অভিভূত হওয়ার মতো অভিব্যক্তি প্রকাশ করা যায়।
অবাচনিক যোগাযোগের জন্যও আমরা ভ্রু ব্যবহার করি। আমাদের চেহারার অভিব্যক্তি নিয়ে গবেষণাকারী বিজ্ঞানীরা বলেন, বিস্ময়, আনন্দ, কষ্ট, ক্ষোভ ইত্যাদির মৌখিক অভিব্যক্তি প্রকাশের ক্ষেত্রে আইভ্রু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) এক জরিপে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের ২টি ফটোশপ করা ছবি দেখানো হয়। একটিতে নিক্সনের চোখ ফটোশপে মুছে ফেলা হয়, আরেকটিকে তার ভ্রু মুছে ফেলা হয়। জরিপে অংশগ্রহণকারীরা ভ্রু ছাড়া নিক্সনকে চিনতে বেশি সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। অন্যান্য সেলিব্রেটিদেরকে চেনার ক্ষেত্রেও জরিপে অংশগ্রহণকারীরা তাদের ভ্রু দেখেই সহজেই চিনতে পেরেছেন।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, চোখের চেয়ে ভ্রু দেখে মানুষ পরিচিত ব্যক্তিকে সহজে চিনতে পারে।
অনেক সময় বয়স বৃদ্ধি, ক্যানসার বা অন্য কোনো রোগের কারণে ভ্রু ঝরে যেতে পারে।