আহা, কোথায় হারাল জার্মানি?
বিশ্বকাপ ফুটবলে জার্মানির ইতিহাস বেশ রাজকীয়। তা প্রতি আসরেই দেখা যায়। ১৯৩৮ বিশ্বকাপে প্রথবারের মতো গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নেওয়া দলটি এরপর ক্রমেই হয়ে উঠেছিল অপ্রতিরোধ্য। ১৯৫৪ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর দলটি চলে যায় সব সময় টপ ফেবারিটের তালিকায়।
অথচ সেই দল গত রাশিয়া বিশ্বকাপে নিল গ্রুপপর্ব থেকে বিদায়। এবারও তাই, কাতার থেকে। গ্রুপপর্বে কোনো বিশ্বকাপ থেকে টানা দুইবার বিদায়, জার্মানির হলো রেকর্ড।
কোস্টারিকার সঙ্গে বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১টায় ৪-২ গোলে জিতেও জার্মানিকে মাঠ ছাড়তে হলো হতাশা নিয়ে। আসরের প্রথম ম্যাচেই তারা হেরে যায় জাপানের কাছে। পরের ম্যাচে স্পেনের সঙ্গে হার এড়াতে পারলেও জিততে পারেনি। ড্র থেকে পাওয়া এক পয়েন্ট নিয়ে শেষের লড়াইয়ে নামে তারা, যখন সবকিছু আর নিজেদের হাতে নেই। তাই জিতেও শেষ পর্যন্ত গ্রুপ পেরোতে পারেনি।
অথচ ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে জার্মানি ছিল দুরন্ত। অসাধারণ ছন্দময়, গতিময়, নান্দনিক ও আগ্রাসী ফুটবল খেলে তারা জিতে নিয়েছিল ট্রফি। ২০১০ ও ২০০৬ আসরে তারা হয়েছিল তৃতীয়, ২০০২ বিশ্বকাপে খেলেছিল ফাইনালে। এই কয়েক বছরই শুধু নয়, বছরের পর বছর ধরে ছিল তাদের দাপুটে ফুটবলের প্রদর্শনী। চারবারের বিশ্বকাপজয়ী দল তারা, ব্রাজিলের পর যা সর্বোচ্চ। এ ছাড়াও তারা রানার্সআপ হয়েছে চারবার, সেমিফাইনাল খেলেছে আরও পাঁচবার। এমন ধারাবাহিকতা বিশ্বকাপে অন্য দলগুলোর নেই।
কিন্তু সেসব এখন কেবলই অতীত। কাতার ও রাশিয়া দুটি বিশ্বকাপে নিজেদের সামর্থ্যের পরিচয় দিতে পারেনি। মেশিনের মতো অলআউট ফুটবল এখন জার্মানদের কাছে দূর অতীতের গল্প। কোচ হান্সি ফ্লিকের এই দলের প্রস্তুতির ঘাটতি স্পষ্ট। ফুটবলের গুণগত মানেও তারা পিছিয়ে বেশ। মানসম্পন্ন ফুটবলার খুব বেশি নেই। স্কোয়াডের গভীরতাও খুব একটা নেই। তবে সবচেয়ে বেশি যা চোখে পড়ার মতো, চেনা সেই জার্মান চরিত্রই নেই!
এই জার্মানি দলে বেশ কজন ছিলেন, বয়সের ভারে যারা এখন ন্যুজ। সেরা সময়ে অনেক পেছনে ফেলে যারা এখন বিবর্ণ। এবারের বিশ্বকাপেও তা ফুটে উঠেছে। আর কিছু ফুটবলার ছিলেন একদম অনভিজ্ঞ। তাদের মধ্যে জামাল মুসিয়ালা দুর্দান্ত স্কিল দেখিয়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ছবি মেলে ধরেছেন বটে, সম্ভাবনার ঝলক দেখিয়েছেন আরও দু-একজন। তবে এবারের জন্য তা যথেষ্ট হয়নি। ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ করে তাই বিমানের টিকিট কাটতে হচ্ছে থমাস মুলার-ম্যানুয়েল নয়্যারদের।
এসজি