অল্প বয়সেই চুল পাকছে? জেনে নিন কার্যকর সমাধান

ছবি: সংগৃহীত
বর্তমানে অনেকেই অল্প বয়সেই চুল পাকার সমস্যায় ভুগছেন। এটি শুধুমাত্র বয়স বৃদ্ধির কারণে ঘটে না, বরং খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রা এবং পরিবেশগত কারণও এর জন্য দায়ী হতে পারে। তবে কিছু কার্যকর পদ্ধতি অনুসরণ করলে এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
চুল পাকার অন্যতম কারণ হলো মেলানিন উৎপাদন কমে যাওয়া। মেলানোসাইট নামক কোষ চুলের গোড়ায় মেলানিন উৎপন্ন করে এবং চুলের স্বাভাবিক রং ধরে রাখে। কিন্তু এই কোষ নষ্ট হয়ে গেলে বা মেলানিন উৎপাদন কমে গেলে চুল ধূসর বা সাদা হয়ে যেতে পারে। এছাড়া জিনগত প্রভাবও অনেক ক্ষেত্রে দায়ী। যদি পরিবারে কারও অল্প বয়সে চুল পাকার ইতিহাস থাকে, তবে আপনাকেও একই সমস্যার মুখোমুখি হতে হতে পারে।
অপুষ্টি চুল পাকার আরেকটি বড় কারণ। বিশেষ করে, ভিটামিন বি১২, আয়রন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবে চুল তার স্বাভাবিক রং হারিয়ে ফেলে। মানসিক চাপও চুল পাকার অন্যতম কারণ হিসেবে কাজ করে। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়, যা চুলের মেলানিন উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
খাদ্যাভ্যাসেরও একটি বড় ভূমিকা রয়েছে চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখার ক্ষেত্রে। প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্ট ফুড ও পুষ্টিহীন খাবার চুলের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া, অতিরিক্ত কেমিক্যালযুক্ত প্রসাধনী ব্যবহার চুলের স্বাভাবিক রং নষ্ট করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে লিভারের অসুখ, ধূমপান ও মদ্যপানের কারণেও চুল পেকে যেতে পারে।
চুল পাকা প্রতিরোধে কিছু কার্যকর সমাধান গ্রহণ করা যেতে পারে। প্রথমত, লুটিওলিন সমৃদ্ধ ফল ও সবজি খাওয়া দরকার। লুটিওলিন এক বিশেষ অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, যা চুলের রং ধরে রাখতে সহায়তা করে। গাজর, ব্রকলি, লেটুস, পালংশাক, বিট, বাঁধাকপি, ফুলকপি, আঙুর, আপেল, চেরি, পেয়ারা, স্ট্রবেরি ও পিচ প্রভৃতি ফল ও সবজিতে লুটিওলিন পাওয়া যায়। এটি মেলানোসাইট কোষের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, প্রদাহ হ্রাস করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

সঠিক পুষ্টি গ্রহণও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি১২, আয়রন ও অন্যান্য খনিজ উপাদান নিশ্চিত করা প্রয়োজন। প্রাকৃতিক তেলের ব্যবহার যেমন নারিকেল তেল, আমলকি তেল ও মেথি তেল চুল পাকা প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
মানসিক চাপ কমানোও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত যোগব্যায়াম, মেডিটেশন ও পর্যাপ্ত ঘুম চুল পাকার হার কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া, অতিরিক্ত কেমিক্যালযুক্ত প্রসাধনীর ব্যবহার কমিয়ে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা উচিত।
ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে আমলকি, মেথি বীজ ও কারি পাতার পেস্ট তৈরি করে চুলে লাগালে প্রাকৃতিকভাবে চুল পাকার সমস্যা দূর করা সম্ভব। অল্প বয়সে চুল পাকা অনেকের জন্যই দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে, তবে সঠিক জীবনযাত্রা ও পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাবার গ্রহণের মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। নিয়মিত যত্ন নিলে আপনার চুলও দীর্ঘদিন কালো ও সুন্দর থাকবে।
