হেরেও আর্জেন্টিনার সঙ্গী পোল্যান্ড
আক্রমণের পর আক্রমণ। শটের পর শট। মেসির আর্জেন্টিনার সবকিছু বাঁধা পড়েছে গিয়ে পোল্যান্ডের গোলরক্ষক সেজেসনির কাছে। প্রথমার্ধের খেলা দেখে মনে হবে খেলা হয়েছে আর্জেন্টিনা বনাম পোল্যান্ডের গোলরক্ষকের মাঝে। কি করলেন তিনি? কোটি কোটি আজর্জেন্টিনার ভক্তদের হতাশ করে গোল করার উল্লাসে মেতে উঠতে দেননি। মেসির পোনাল্টি পর্যন্ত ঠেকিয়ে দেন। শেষ ষোলতে যেতে হলে জয়ের জন্য মরিয়া আর্জেন্টিনার জন্য তাই প্রথমার্ধ হতাশা নিয়ে আসেন তিনি। ৯৭৪ স্টেডিয়ামে দ্বিতীয়ার্ধে তার সকল প্রতিরোধ ভেঙ্গে যায়। একে একে গোল হজম করেন দুইটি। প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হেরে যেখানে শেষ ষোলতে যাওয়া হুমকির মুখে পড়েছিল আর্জেন্টিনা, সেখানে তারা গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। তাদের কাছে হেরেও শেষ ষোলতে সঙ্গী হয়েছে পোল্যান্ডই। গ্রুপের অপর ম্যাচে মার্টিন ও চাভাজের গোলে মেক্সিকো ২-১ গোলে সৌদি আরবকে হারানোর পর দুই দলের পয়েন্টই সমান হয়ে যায়। কিন্তু গোল গড়ে পোল্যান্ড গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে আর্জেন্টিনার সঙ্গী হয়। সৌদির পক্ষে গোলটি করেন সালেম আল দাওসারি। ৩ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনা শেষ ষোলতে খেলবে ‘ডি’ গ্রুপের রানার্সআট অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। অপরদিকে ৪ ডিসেম্বর ‘ডি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের বিপক্ষে খেলবে পোল্যান্ড।
সেজেসনি যদি প্রতিরোধের দেয়াল হয়ে না উঠতেন তা’হলে এই ম্যাচ আর্জেন্টিনা জয়ী হতো আরও বেশি গোলের ব্যবধানে। এই ম্যাচেই আর্জেন্টিনা এবারের আসরে সব থেকে ভালো ফুটবল খেলেছে। পেনাল্টি মিস করলেও মেসি ছিলেন বিপজ্জনক। সবথেকে ভালো খেলেছেন আলভারেজ। তার তিন থেকে চারটি চেষ্টা গোলের মুখ দেখতে পারেনি। যদিও তিনি শেষ পর্যন্ত গোলের দেখা পেয়েছেন।
সেজেসনি যখন একের পর এক আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগের সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছেন তখন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক মার্টিনেজ নিরব দর্শক হয়ে দেখে যাচ্ছিলেন। প্রথমার্ধে তাকে একটি শটও আটাকাতে হয়নি।
খেলায় আর্জেন্টিনা ৭৩ ভাগ বল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখে। শট নিয়েছে ২৩টি। যার ১২টিই ছিল অন টার্গেট। কর্ণার ছিল ৯টি। পোল্যান্ডের কর্ণার ছিল মাত্র একটি। চারটি শট নিতে পারলেও অন টার্গেট শট নিতে পারেনি একটিও। তাদের দলে যে লেভানদোভস্তি নামে একজন দুর্ধষ স্ট্রাইকার আছেন তার খোঁজেই পাওয়া যায়নি!
এক নজরে আর্জেন্টিনার গোল ও আক্রমণগুলো
২ মিনিটেই সুযোগ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। মেসির কর্ণার থেকে ওটামান্ডির হেড সাইড বার দিয়ে বাইরে চলে যায়।
৬ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে মেসির ডান পায়ের দূর্বল শট সরাসরি গোলরক্ষকের হাতে যায়।
১০ মিনিটে বাম প্রান্ত দিয়ে ঢুকে মেসির বাম পায়ের শট গোলরক্ষক কর্নার করে রক্ষা করেন।
এই সময়ের মাঝেই আর্জেন্টিনা তিন তিনটি শট নেয়। যার দুইটি ছিল অন টার্গেট। বিপরীতে পোল্যান্ডের শট ছিল একটি। কোনও অন টার্গেট শট ছিল না। আর্জেন্টিনা ২টি কর্ণার আদায় করে নেয়। পোল্যান্ড একটিও কর্ণার পায়নি।
১৬ মিনিটে বক্সের ভেতর থেকে আলভারেজের শট বারের অনেক উপর দিয়ে চলে যায়।
১৮ মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে ভেসে আস ক্রসে আলভারেজের হেড লক্ষ্যভ্রস্ট হয়।
২৮ মিনিটে আর্জেন্টিনা দুই দুইটি সুযোগ হাতছাড়া করে। ডান প্রান্ত থেকে ভেসে ক্রস থেকে আলভারেজের শট রক্ষণে বাঁধাগ্রস্ত হয়ে ফিরে আসার পর অ্যাকুনার ডান পায়ের কোনাকুনি শট বার ঘেষে বাইরে চলে যায়।
৩২ মিনিটে ডি মারিয়ার বাম পায়ে নেওয়া কর্ণার শট সরাসরি গোলে ঢুকার মুহুর্তে গোলরক্ষ কর্নার করে নিশ্চিত গোল রক্ষা করেন।
৩৫ মিনিটে আলভারেজের বাম পায়ের শট পোলিশ গোলরক্ষক ব্লক করে রক্ষা করেন। ফিরতি বলে আলভারেজের ক্রস থেকে মেসি হেড দিতে উঠলে আবারও গোলরক্ষক পাঞ্চ করে রক্ষা করেন। এ সময় মেসিকে হাত দিয়ে মুখে আঘাত করলে রেফারি ভিএআর পরীক্ষা করে পেনাল্টি দেন। কিন্তু মেসির নেয় পেনাল্টি আটকে দেন সেই গোলরক্ষক।
৪২ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে আলভারেজের ডান পায়ের আচমকা শট গোলরক্ষক ফিরিয়ে দেন। ফিরতি বলে সামনে থাকা এক আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়ের হেড তার হাতে চলে যায়।
আর্জেন্টিনার প্রথম গোল
পোলিশ গোলরক্ষক প্রথমার্ধে চীনের প্রাচীর হয়ে মেসির পেনাল্টিসহ একাধিক সুযেগ প্রতিহত করে দিলেও দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই তার প্রতিরোধের দেয়াল ভেঙ্গে যায়। ৪৭ মিনিটেই গোল পেয়ে যায় আর্জেন্টিনা। ডান প্রান্ত থেকে মোলিনার পাস থেকে বক্সের ভেতর দাঁড়িয়ে থাকা ম্যাক অ্যালিস্টার প্লেসিং শটে সেজসেনিকে বোকা বানায়। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েও তিনি বলের নাগাল পাননি। মোলিনার এটি ছিল প্রথম আর্ন্তজাতিক গোল।
৫৫ মিনিটে বক্সের ভেতর মেসির পাস থেকে আলভারেজের আরকেটি শট পোলিশ গোলরক্ষক ঠেকিয়ে দেন।
৬১ মিনিটে আবারও তার কাছে বাঁধাগ্রস্ত হয় আর্জেন্টাইন চেষ্টা।
আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় গোল
৬৭ মিনিটে আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় গোলের দেখা যায়। একের পর এক চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর অবশেষে গোলের দেখা পান আলভারেজ। ফার্নান্দেজের বাডিয়ে দেয়া বল বক্সের ভেতের পেয়ে পান পায়ের বুলেট শটে সেজেসনকে পরাস্ত করেন।
৭০ মিনিটে সেজেসনি আবারও প্রতিরোধের দেয়াল। এবার তিনি ঠেকিয়ে দেন মেসির বাম পায়ের শট।
৭২ মিনিটে আলভারেজ বিপজ্জনকভাবে বক্সে ঢুকে যে শট নেন তা বার কাঁপিয়ে চলে যায়।
৮৫ মিনিটে আর্জেন্টিনাকে গোল বঞ্চিত করেন বদলি খেলোয়াগ মার্টিনেজ। জ্যাকব কিউ্ইর গোলরক্ষককে ব্যাক পাস দিতে গিয়ে সেই বল পেয়ে যান মার্টিনেজ। বল নিয়ে তিনি বক্সে ডুকে গোররক্ষক সেজেসনিকে একা পেয়ে যান। বিপদ বুঝে সেজেসনি এগিয়ে এসে জায়গা ছোট করে ফেলেন। এরই মাঝে মার্টিনেজ গোল করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বল দ্বিতীয় পোষ্ট ঘেষে বাইরে চলে যায়।
দুই গোল হজম করার পর পোল্যান্ড আরও বেশি করে রক্ষাণাত্বক হয়ে পড়ে। এর কারণ ছিল আর কোনও গোর হজম না করা। কারণ এই অবস্থায় তারা হারলেও দ্বিতীয় পর্বে যেতে পারবে। কারণ তখন অপর ম্যাচে মেক্সিকো ২-১ গোলে সৌদি আরবের বিপক্ষে এগিয়ে। তারা যদি আর গোল হজম করে তা’হলে বাদ পড়ে যাবে। ম্যাক্সিকো তৃতীয় গোল করলে। মেক্সিকোর বিষয়টি তাদের হাতে ছিল না। তাই নিজেদের জাল অক্ষত রাখার চেষ্টা করে। সেখানে তারা সফলও হয়। যদিও ইনজুরির টাইমে গিয়ে তারা গোল হজম করতে যাচ্ছিল। নিকোলাস গোরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে বল পাঠিয়ে গোলে প্রবেশের সময় একজন খেলোয়াড় রক্ষা করেন। তাই হারের পরও পোলিশরা দ্বিতীয় পর্বে যাওয়ার আনন্দে উল্লাস করতে থাকে।
এমপি/এএস