বিদ্রোহীদের সম্পর্কে মির্জা আজম
'কচুরিপানা-আবর্জনা দলে থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো'
দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যারা বিদ্রোহ করে তারা বিশ্বাস ঘাতক, বেঈমান। এগুলো কচুরিপানা-আবর্জনা। এইসব কচুরিপানা-আবর্জনা দলে থাকার চাইতে না থাকাই ভাল। ঢাকাপ্রকাশ-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনই মন্তব্য করেছেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মির্জা আজম এমপি। তিনি বিদ্রোহীদের নিয়ে কঠোর বার্তা দিলেন।
ঢাকাপ্রকাশ: দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যারা ইউপিতে নির্বাচন করেছে তাদের বিষয়ে দলের সিদ্ধান্ত কী?
মির্জা আজম: এসব ব্যাপারে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত দিয়ে দিয়েছেন নেত্রী। যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে তারা নতুন যে সম্মেলন হবে সেখানে কোন পদ পদবী পাবে না। বহিষ্কারাদেশ যতক্ষণ না প্রত্যাহার হবে ততক্ষন তারা কোন পদে আসতে পারবে না। নেত্রীর যে সিদ্ধান্ত বা মনোভাব সেটা হলো গত উপজলা পরিষদ নির্বাচনেও অনেকে বিদ্রোহ করেছিল। যারা বিদ্রোহী ছিল তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন, যারা বিদ্রোহীদের সমর্থন করেছে তাদেরও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু যারা প্রার্থী ছিল তাদের ক্ষেত্রে দুইটা সিদ্ধান্ত আছে। একটা হলো তারা যে পদে ছিল তাদের সেই পদ থাকবে না। দ্বিতীয় হলো যতদিন নির্বাচন আসবে আওয়ামী লীগ যতদিন নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দেবে সেই বিদ্রোহী প্রার্থী যে একবার ছিল তাকে জীবনেও আর কোন দিন নৌকা প্রতীক দেওয়া হবে না। এই দুইটা সিদ্ধান্ত বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে কঠোরভাবে দেওয়া হয়েছে।
ঢাকাপ্রকাশ: যেসকল নেতাদের শোকজ করা হয়েছে তাদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত?
মির্জা আজম: শোকজ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা কোন পদ পাবে না।
ঢাকাপ্রকাশ: দলের হাইকমান্ড থেকে বার বার নির্দেশনা দেওয়ার পরও বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার কারণ কি?
মির্জা আজম: আওয়ামী লীগ একটা বড় দল। সেই দলে একটা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হোক, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হোক বা পৌরসভার মেয়র হোক কিংবা সংসদ সদস্য হোক একটা এলাকায় এই পদগুলোতে কমপক্ষে ৫ জন থেকে ১০ জন যোগ্য প্রার্থী আছে। দলের অনেক কর্মী। আর ১৪ বছর এক টানা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার কারণে দলের কর্মী সংখ্যা বাড়ছে। অর্থ-বিত্ত বেড়েছে, মাথাপিছু আয় বাড়ছে। ৫৪০ ডলার ২৬০০ ডলারে আসছি। অর্থনৈতিক বিত্তটা থাকলে সবাই কিন্তু চায় তাদের সামাজিক অবস্থা বা মর্যাদা, যার জন্য প্রার্থী বেশি হয়। বিদ্রোহের মূল প্রবণতা এই কারণে যেহেতু আমাদের প্রধান বিরোধী দল তারা নির্বাচনে নাই। যে কারণে অনেকে মনে করে নমিনেশন পেলেই তো হয়ে গেল। এইরকম একটা মনোভাব যার জন্য এমনিতে যদি ১০ জন যোগ্য প্রার্থী থাকে বিএনপি না থাকার কারণে ২০ জন প্রার্থী বেড়ে যায়। টার্গেট থাকে নমিনেশন। যেহেতু বিরোধী নাই যখন একজন নমিনেশন পেয়ে যায় সবার তখন মাথায় ঢোকে ওই নেতা তো আগাইয়া গেল। ও যোগ্য বেশি একবার পেয়ে গেল। ওই প্রার্থীর অযোগ্য প্রমাণের জন্য নিজেরা নিজের দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে গোপনে দাঁড়ায়। একজন যদি বিদ্রোহ ঘোষণা করে তাহলে দেখা যায় ওখানে আওয়ামী লীগের যদি ৪৫ শতাংশ সমর্থন থাকে বিএনপির তো ৩৫ শতাংশ আছে। এই রেডিমেট বিএনপি জামায়াতের ভোটটা তারা বিদ্রোহী প্রার্থীর সাপোর্ট চলে যায়। আর যে আওয়ামী লীগ করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয় স্বাভাবিকভাবে দলেরও কিছু লোক তার সঙ্গে থাকে। দলের অন্যান্য প্রার্থী যারা নমিনেশন পায় না তারাও কিন্তু চায় বিদ্রোহী পাস করুক, তাহলে ওদের ইজ্জতটা বাড়ে। এই সমস্ত কারণে যেগুলো হয়েছে এগুলো তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কাউকে কাউকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অতএব বহিষ্কৃত যারা আছে সেই বহিষ্কারাদেশ যতক্ষণ না পর্যন্ত প্রত্যাহার হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা কোন পদ পদবী পাবে না।
ঢাকাপ্রকাশ: এতে জাতীয় নির্বাচনে কোনো প্রভাব পড়বে কী-না?
মির্জা আজম: কিছুই পড়বে না। এগুলো কিছু যায় আসে না। এই কচুরিপানা-আবর্জনা, এগুলো দলে থাকার চাইতে না থাকাই ভাল। তারা বিশ্বাস ঘাতক, বেঈমান। এই কাজটা যারা একবার করে এদের প্রবণতাই হয়ে যায় সুযোগ পেলেই বেঈমানী করা। আবার সুযোগ পেলে আবার বিশ্বাস ঘাতকতা করা। অতএব এই বিশ্বাস ঘাতক-বেঈমান এদের দলে রাখলে বরং ঝুঁকি থাকে। এরা চিহ্নিত শত্রু। বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী আছে এরা গেলে ৫টা কর্মীর সংখ্যা হয়তো বাড়বে তাতে আমাদের কি যায় আসে?
ঢাকাপ্রকাশ: আপনি সব সময় কঠিন সত্য বলেন, দলের বিপক্ষেও বলেন, বিভিন্ন পেশার বিরুদ্ধে বলেন এতে আপনার উপর চাপ পরে কী-না?
মির্জা আজম: আমি যে কথাগুলো বলি সেগুলো আসলে কোনো ব্যক্তি বিশেষের বিরুদ্ধে বলি না। আমি একটা সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে বলি। যে অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্পষ্টভাবে বলে গেছেন। আমার নেত্রী শেখ হাসিনা তিনিও এখন বলছেন। আমার দলের নেতাকর্মীরা অনেকে বলেন না, কিন্তু আমি যেটা বিশ্বাস করি সেটা বলি। যখন কোনো জায়গায় সম্মেলনে যাই বলি। একটি নির্দিষ্ট পেশার মানুষ দুর্নীতি করে, ঘুষ খায় তা তো না। এটা সামাজিক অবক্ষয়। সব পেশার মানুষের মধ্যেই দুর্নীতিবাজ ঘুষখোর আছে। আমার দল যে করে সে তো চাকরি করে না, দলের মধ্যেও যারা রাজনীতিবিদ আছে বিভিন্ন টায়ারে এদের মধ্যেও দুর্নীতিবাজ আছে। আমি সবার বিরুদ্ধেই বলি। এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে অধিকাংশ মানুষ যখন কথা বলা শুরু করব, তখন কিন্তু দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যাবে। আমার কি করবে? আমি অনেক বড় বড় দুর্নীতবাজের বিরুদ্ধে বলেছি, যখন বয়স অনেক কম ছিল তখন অনেক ক্ষমতবান মানুষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছি। সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছি, এরজন্য তো পারলে তারা (বিএনপি-জামায়াত) মেরেই ফেলে। এরপরও তো টিকে আছি। এগুলো তো ছোট খাটো চোর-ছ্যাঁচর। এগুলোর ব্যাপারে বললে কি হবে? এতে কিছু যায় আসে না।
ঢাকাপ্রকাশ: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মির্জা আজম: আপনার মাধ্যমে ঢাকাপ্রকাশকেও ধন্যবাদ।