১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হচ্ছে না নতুন ইসি!
সংবিধান অনুসারে বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনাদের ৫ বছর মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। ইতোমধ্যে নতুন কমিশন গঠনে নির্বাচন কমিশন আইন তৈরি করেছে সরকার। আইন অনুযায়ী গত ৫ ফেব্রুয়ারি ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি বা অনুসন্ধান কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। তবে ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন কাজ শেষ করা সম্ভব না বলে জানিয়েছেন সার্চ কমিটির এক সদস্য। তিনি বলেছেন, সার্চ কমিটির কাজ শেষ করতে আরও সময় লাগবে। ফলে ১৪ ফেব্রুয়ারির পর নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বে কেউ থাকবেন-নাকি কমিশন শূন্য থাকবে তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই আইনে।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়োগ হয়েছে সংবিধানের ধারায়। সংবিধানের ১১৮(৩) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো নির্বাচন কমিশনারের পদের মেয়াদ তার কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পাঁচ বছর হবে। তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কমিশন কিভাবে চলবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো ব্যাখা নেই সংবিধানে। এ কারণে ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নতুন ইসি গঠন না হলে কার্যত কমিশন শূন্য থাকবে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও ঢাকাপ্রকাশ-এর কাছে এমনই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ ৫ বছর। পাঁচ বছর পূর্ণ হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনাররা পদে থাকতে পারবেন না। তারা চলে যাবেন। এই সময়ে মধ্যে যদি ইসি গঠন না হয় পদগুলো খালি থাকবে। এখানে ভারপ্রাপ্ত কাউকে বসানোর সুযোগ নেই। এতে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না বা আইনত কোনো সমস্যা হবে না।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে প্রথমবারের মতো নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে আইন করেছে বর্তমান সরকার। গত ৩০ জানুয়ারি আইনটি সংসদে পাস হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন অনুযায়ী অনুসন্ধান কমিটি সিইসি ও ইসি পদের জন্য ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবে। রাষ্ট্রপতি প্রস্তাবিত নাম থেকে ৫ জনের কমিশন গঠন করবেন।
সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন আইন করার কথা থাকলেও গত ৫০ বছরেও কোনো সরকার এ সংক্রান্ত আইন করেনি। ফলে এর আগের কমিশনগুলো রাষ্ট্রপতির সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি গঠন করেছেন। এবারই প্রথম আইনের ভিত্তিতে ইসি গঠন হতে যাচ্ছে।
রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন মহলের দাবি ছিলো নির্বাচন কমিশন গঠনের একটি আইন প্রণয়নের। সর্বশেষ ইসি গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির ওই সংলাপে আওয়ামী লীগসহ অংশগ্রহণকারী দলগুলো আইন গঠনের প্রস্তাব করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ জানুয়ারি বহুল প্রত্যাশিত আইনটি জাতীয় সংসদে পাস হয়।
আইন পাসের পর গত ৫ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সভাপতি করে ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি গত ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ শুরু করে। এ পর্যন্ত দুইটি বৈঠক হয়েছে। মঙ্গলবার দ্বিতীয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল এবং কমবেশি ৬০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে চিঠি দিয়ে নাম চাওয়া হবে। আগামী শনি ও রবিবার বিভিন্ন পেশার বিশিষ্ট ৬০ ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করবে সার্চ কমিটি। জানাগেছে, আগামীকাল বৃহস্পতিবার ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবে আওয়ামী লীগ। এছাড়া সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও এদিন নাম প্রস্তাব করবে।
তবে এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে শুরু থেকে বিরোধী মত পোষণ করে আসছে বিএনপি। তারা কোনো নাম প্রস্তাব করবে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছে।
প্রস্তাবিত নামগুলো থেকে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবে সার্চ কমিটি। রাষ্ট্রপতি সেই দশ জন থেকে ৫ জন নিয়ে ইসি গঠন করবেন।
অনুসন্ধান কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা সম্ভব হচ্ছে না। আগামী শনি ও রবিবারের পরে আরও বৈঠক হতে পারে। তাই এই ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে যে হচ্ছে না এটা মোটামুটি চূড়ান্ত। মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত ৩০ জনের নাম এসেছে। রাজনৈতিক দলগুলো থেকে বৃহস্পতিবার নাম আসবে। নামগুলো যাচাই বাছাই করে তারপর চূড়ান্ত করব। বাইরে যাই আলোচনা সমালোচনা হোক আমরা এমন নাম প্রস্তাব করবো যেটা সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে বলে আশাকরি।’
আইন অনুযায়ী তিন সদস্যের উপস্থিতিতে অনুসন্ধান কমিটির সভার কোরাম হবে। এ কমিটির কাজে সাচিবিক সহায়তা দিচ্ছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সার্চ কমিটি গঠনের পর ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে নাম সুপারিশ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এই আইন অনুযায়ী সার্চ কমিটির ১৫ কার্যদিবস শেষ হবে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি। যেটি অনুসন্ধান কমিটির প্রথম বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেছিলেন।
যেহেতু ইসি গঠনে প্রথম আইন তাই অনুসন্ধান কমিটির যে ১৫ কার্যদিবস সময়সীমা দেওয়া হয়েছে সে পথেই হাটছে অনুসন্ধান কমিটি।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। এরপর তারা ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব বুঝে নিয়ে কাজ শুরু করেন। সেই হিসেবে ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বর্তমান ইসির ৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে।
এসএম/