ঢাকা জোনের সড়কের কাজে অব্যবস্থাপনা, কমিটির ক্ষোভ
সরকারি প্রকল্পে কাজের মন্থরগতি দেখে ক্ষুব্ধ সংসদীয় কমিটি। কার অবহেলায় প্রকল্পগুলো আগাচ্ছে না তাদের খুঁজে বের করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলেছেন সংসদীয় কমিটির সদস্যরা। সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কয়েকটি প্রকল্প নিয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। সেখানে উল্লেখ করা হয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের মোট ৫৪টি প্রকল্প রয়েছে। তারমধ্যে ২৫ শতাংশের নিচে অগ্রগতি আছে ১৭টি প্রকল্পের, ৫০ শতাংশের নিচে অগ্রগতি আছে ৭ টি এবং ৫১ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশের মধ্যে অগ্রগতি আছে ৩০টি। তবে ঢাকা জোনের ১৪টি প্রকল্পের মধ্যে ৫টির অগ্রগতি ২৫ শতাংশের নিচে আর ৫০ শতাংশের নিচে অগ্রগতি দেখানো হয়েছে ৩টি প্রকল্পের। তার মধ্যে দুটি প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৫ শতাংশ। ঢাকা জোনের ১৪টি প্রকল্পের মধ্যে ৯টির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছর। তবে এসব প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি কোনটার ২ শতাংশ, কোনটার ৫৬ শতাংশ, কোনটার ৮৭ শতাংশ আবার কোনটার ৯১ শতাংশ। অধিকাংশ প্রকল্পের আর্থিক ও বাস্তব অগ্রগতি একই হওয়ায় সন্দেহ প্রকাশ করেছেন কমিটির সদস্যরা।
এ বিষয়ে সংসদীয় কমিটির সদস্য ও সংসদের প্রধান হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী বলেন, “ঢাকা জোনে ১৪টি প্রকল্পের মধ্যে ০৯টি প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে সম্পন্ন করা হয়নি। এছাড়া অধিকাংশ প্রকল্পের আর্থিক ও বাস্তব অগ্রগতি একই হওয়ার কথা নয়। যাদের দায়িত্ব অবহেলার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্ব হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো জবাবদিহিতা বা প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কি না এবং প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির সাথে ব্যয় বৃদ্ধির সংশ্লিষ্টতা আছে কি না সে বিষয়ে সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
তার এই বক্তব্যে একমত পোষণ করে কমিটির সভাপতি উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ বলেন, ঢাকা জোনের ১৪টি প্রকল্প যথাসময়ে সম্পন্ন না হওয়ার কারণ ও প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত বা বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে সদস্যদের বক্তব্যের সাথে সহমত পোষণ করেন। তিনি উদ্ভূত বিরূপ পরিস্থিতি থেকে রক্ষার লক্ষ্যে কাজ শুরুর পূর্বে প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক ও মন্ত্রণালয় কর্তৃক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সাথে আলোচনার মাধ্যমে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দেন। তিনি দেশের স্বার্থে সবাইকে দক্ষতা ও মনোযোগের সাথে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের পরামর্শ দেন। প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে সম্পাদন করা হলে আর্থিক অপচয় যেমন রোধ হবে, তেমনিভাবে প্রকল্পের সুবিধাও মানুষ ভোগ করতে পারবে বলে তিনি অভিমত দেন।
বৈঠকে প্রকল্পের প্রাক্কলনে নকশার ত্রুটির কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্ব হলে এর দায়ভার কার সে সম্পর্কে জানতে চান কমিটির সদস্য বেগম ওয়াসিকা আয়েশা খান। যাদের কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্ব হচ্ছে, সেই দায়ী কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোনো বিভাগীয় বা আইনগত সুযোগ গ্রহণের ব্যবস্থা আছে কিনা তিনি সে সম্পর্কেও জানতে চান তিনি।
ওই সভায় আইএমইডি'র সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান বলেন, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রকল্পসমূহের যে তথ্য কার্যপত্রে প্রেরণ করা হয়েছে তার সাথে কার্যপত্রে উল্লিখিত প্রকল্পসমূহের আর্থিক ও বাস্তব অগ্রগতির মধ্যে গড়মিল আছে। করোনার মধ্যেও এ বিভাগের জাতীয় অগ্রগতির রিপোর্ট ছিল ৮৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। যা খুবই ভালো দিক বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম আশ্বস্ত করে বলেন, মন্ত্রণালয়ের মাসিক সমন্বয় সভায় চলমান প্রকল্পের অগ্রগতি ও গাফিলতির কারণে যে-সমস্ত প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং এ ধরনের কয়েকটি বিষয় চলামান আছে।
ঢাকা জোনের যে ১৪টি প্রকল্প নিয়ে কথা উঠেছে সেগুলো হচ্ছে-
* পাঁচদোনা ভাঙ্গা-ঘোড়াশাল জেলা মহাসড়ককে এক স্তর নীচু দিয়ে উভয় পাশে পৃথক সার্ভিস লেনসহ ৪ লেনে উন্নীতকরণ বাস্তবায়নকাল ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন আর্থিক অগ্রগতি দেখানো হয়েছে ৩৯ শতাংশ।
* নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার হেতেমদী থেকে সাগরদী বাজার পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মান প্রকল্প ২০১৭ সালের মার্চ হতে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি দেখানো হয়েছে ৫৫ শতাংশ।
* জিঞ্জিরা-কেরানীগঞ্জ-ননাবগঞ্জ-দোহার-শ্রীনগর মহাসড়ক উন্নয়ন (কদমতলী থেকে জনি টাওয়ার লিংকসহ) ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন আর্থিক অগ্রগতি ৮৭ শতাংশ।
* লাঙ্গলবন্দ-কাইকারটেক-নবীগঞ্জ জেলা মহাসড়কের লাঙ্গলবান্দ হতে মিনার বাড়ি পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি হতে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। আর্থিক অগ্রগতি ৪৬ শতাংশ।
* জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প ২০১৮ সালের জানু হতে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। আর্ধিক অগ্রগতি ৯১ শতাংশ।
* রাজউক পূর্বাচল ৩০০ ফিট মহাসড়ক হতে মাদানী এভিনিউ সিলেট মহাসড়ক পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মান ২০১৮ সালের জুলাই হতে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি দেখানো হয়েছে ৫৬ শতাংশ।
* ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের যাত্রবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে ইকুরিয়া-বাবুবাজার লিংক সড়কসহ) মাওয়া পর্যন্ত এবং পাঁচ্চর-ভাঙ্গা অংশ ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেনসহ উন্নয়ন প্রকল্পের অসমাপ্ত কাজ সমান্তরলকরণ প্রকল্প ২০২০ সালের জুন হতে ২০২০ সালের ডিসেম্বর আর্থিক অগ্রগতি ১২ শতাংশ।
* যাত্রবাড়ী (মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার) ডেমরা (সুলতানা কামাল সেতু) মহাসড়ক -৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প ২০১৯ সালের জুন হতে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আগ্রগতি ৪৬ শতাশং।
* ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জের হাসাড়া পর্যন্ত জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প ২০২০ সালের জুন হতে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। অগ্রগতি ৫ শতাংশ।
* ঢাকা মিরপুর উথলী পাটুরিয়া জাতীয় মহাসড়ক এর নবীনগর হতে নয়ারহাট ও পাটুরিয়া ঘাট এলাকা প্রশস্তকরণসহ আমিনবাজার হতে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড এলাকা ডেডিকেটেড লেনসহ সার্ভিস লেন ও বাস বে নির্মাণ প্রকল্প ২০১৯ সালের জুলাই হতে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত অগ্রগতি ৪৫ শতাশং।
* চাষাড়া-খানপুর হাজীগঞ্জ গোদনাইল-আদমজী ইপিজেড সড়ক নির্মাণ প্রকল্প ২০১৯ সালের জুলাই ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি ২ শতাংশ।
* ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিন বাজার সালেহপুর ও নয়ারহাট নামক স্থানে ৩টি সেতু নির্মাণ প্রকল্প ২০১৯ সালের জুলাই হতে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি ১৯ শতাংশ।
* জরাজীর্ণ অপ্রশস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বিদ্যমান বেইলী সেতু এবং আরসিসি সেতু প্রতিস্থাপন শীর্ষক প্রকল্প ২০২০ সালের জুন হতে ২০২২ জুন পর্যন্ত। অগ্রগতি ৩ শতাংশ।
* নারায়নগঞ্জ লিংক সড়ক (সাইনবোর্ড-চাষাড়া)-৬ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প ২০২০ সালের জুন হতে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত অগ্রগতি ১১ শতাংশ।
এসএম/এএস