হঠাৎ অতিবৃষ্টিতে ফসলের বিপুল ক্ষতির আশঙ্কা
অসময়ের অতিবৃষ্টিতে বিপুল ক্ষতি হবে ফসলের। কৃষিবিদরা বলছেন, অনাকাঙ্খিত হঠাৎ বৃষ্টিতে গম সরিষা, আমন, বোরো ধান ও শীতকালীন সবজির ক্ষতি হবে অপূরণীয়।
যদিও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দাবি, এই বৃষ্টিতে তেমন ক্ষতি হবে না। যদি আরও বৃষ্টি হয় তাহলে হয়তো কিছু ক্ষতি হতে পারে।
জানতে চাইলে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মির্জা হাসানুজ্জামান ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘অনাকাঙ্খিত বৃষ্টিতে গম, সরিষা, আমন ধানের বিপুল ক্ষতি হয়ে যাবে। কারণ এই সময়ের ফসল পানি সহ্য করতে পারে না।’
যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে তাতে পানি আগামী এক সপ্তাহেও নামবে না জানিয়ে অধ্যাপক হাসানুজ্জামান বলেন, ‘এতে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে। সাধারণত নভেম্বরের পর যেসব ফসল লাগানো হয় সেগুলোর ফলন কম হয়। এ ছাড়া আমন ধান মাঠে রয়ে গেছে। এই ফসলগুলো নষ্ট হয়ে যাবে।’
ড. মির্জা হাসানুজ্জামান বলেন, ‘শাক-সবজিরও প্রচুর ক্ষতি হবে। এ ছাড়া আলুরও ক্ষতি হয়ে যাবে অনেক। বিশেষ করে বগুড়া অঞ্চলের আলু চাষিরা ক্ষতির মুখে পড়বে।’
একই কথা বলেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন অধ্যাপক ড. পরিমল কান্তি বিশ্বাস। তিনি ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘ফসলের প্রচুর ক্ষতি হবে। এটা আগ্রহায়ণ মাস। খনার বচনেও আছে এই মাসে বৃষ্টি হলে ফসলের সর্বনাশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাঠে অনেক ফসল রয়ে গেছে। পাকা ধান রয়েছে মাঠে। আমাদের প্রধান ফসল আমন যেটা বছরে এক কোটি ৩০ লাখ থেকে এক কোটি ৪০ লাখ টন ফলন হয় সেই ফলের অনেক খানি এখনো মাঠেই রয়ে গেছে। এগুলো নষ্ট হয়ে যাবে।’
এ ছাড়া দ্বিতীয় প্রধান ফসল বোরো ধানেরও বিপুল ক্ষতি হবে জানিয়ে অধ্যাপকক ড. পরিমল কান্তি বিশ্বাস বলেন, ‘সাধারণত বোরো ধান লাগানো হয় মধ্য ডিসেম্বর থেকে মধ্য জানুয়ারিতে। তার মানে এখন বোরোর বীজতলা করেছে অনেকে। এই বীজ ৩০ থেকে ৪০ দিন বয়সের হয়ে থাকে।’
অধ্যাপক পরিমল বলছেন, ‘চাষীরা জানেন যে, এখন বৃষ্টি হয় না। তাই তারা সাধারণত নিচু জমিতে বীজতলা করেন। এই বীজতলাগুলো বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে নতুন করে বীজতলা তৈরি করতে হবে। এতে বোরো চাষ বিলম্বিত হবে। আর বোরো চাষ বিলম্বিত হলে ফলন কমে যায়। অনেকে রবি ফসল লাগায় এখন। সেই ফসল চাষেও বিলম্বিতে হবে। শীতকালীন সবজিরও ব্যাপক ক্ষতি হবে।’
জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘যে বৃষ্টি হয়েছে তাতে ফসলের ক্ষতি হবে না। আমি সারাদেশের অফিসগুলো থেকে খোঁজ নিয়েছি। তারা আমাকে এমনটাই জানিয়েছেন।’
আল্লাহ যদি রহম করে তাহলে ক্ষতি হবে না–এমন মন্তব্য করে মহাপরিচালক বলেন, ‘তবে হ্যাঁ, যদি বৃষ্টি আগামীকালও (মঙ্গলবার) হয় তাহলে হয়তো কিছু ক্ষতি হবে। আর যদি আল্লাহ রহম করে, বৃষ্টি না হয় তাহলে ক্ষতি হবে না। কারণ এবারের বৃষ্টি ঢাকা শহরে বেশি হয়েছে। ঢাকার বাইরে কম হয়েছে।’
৫ ও ৬ ডিসেম্বর ঘুর্ণিঝড়ের জাওয়াদের প্রভাবে বঙ্গপসাগরে সৃষ্টি নিম্নচাপের কারণে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। সোমবার (৬ ডিসেম্বর) আবহাওয়া অধিপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ দুর্বল হয়ে প্রথমে নিম্নচাপ এবং পরে লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। সন্ধ্যায় এটি আরও দুর্বল হয়ে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হবে। মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ফরিদপুরে ৭৬ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আরইউ/এসএ/