ভেঙে-গড়েও সংখ্যায় ২০ দলীয় জোট
বিএনপি ১৯৯৯ সালের ৬ জানুয়ারি ‘চারদলীয় ঐক্যজোট’ গঠন করে। এই ঐক্যজোট ভুক্ত ছিলেন বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ঐক্যজোট। কিছুদিন পর এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি জোট থেকে বেরিয়ে গেলেও যুক্ত থাকেন নাজিউর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় নির্বাচনের পর জোটের পরিধি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিল জোট নেতারা। পরবর্তীতে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল নতুন ১২টি দলের সংযুক্তির মাধ্যমে চারদলীয় ঐক্যজোট বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ দলীয় জোটে। শেষ পর্যন্ত জোটের পরিধি দাঁড়ায় ২০ দলীয় জোটে। অবশ্য জোটভুক্ত দলের নেতৃত্ব জোট ত্যাগ করলেও দলগুলো থেকে বিকল্প নেতাদের একত্রিত করে ২০ দলীয় জোটকে সংখ্যাগত দিক অটুট রেখেছে বিএনপি।
তবে রাজনীতিতে বিএনপি নির্বাচন ও আন্দোলন-সংগ্রামে যতটা সক্রিয় তারচেয়ে বেশি সমালোচিত জোটভুক্ত থেকে বেরিয়ে গেলেও জোটে থেকে যাওয়া রহস্যের বিষয়টি।
২০ দলীয় জোট ছেড়েছে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ ন্যাপ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি, ন্যাপ ভাসানী।
২০১৪ সালের নির্বাচনের পর জোট ত্যাগ করেছেন শেখ আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন ন্যাপ ভাসানী। সেই সময় ১৮ দলীয় জোটের সংখ্যাতত্ত্ব ঠিক রাখতে তৎকালীন কল্যাণ পার্টির গাইবান্ধা জেলার সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলামের নেতৃত্বে তৈরি করা হয় ন্যাপ ভাসানী।
শেখ শওকত হোসেন নীলুর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)। তবে দলটির মহাসচিব ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নেতৃত্বে এনপিপি তৈরি করে ২০ দলীয় জোট ধরে রাখা হয়।
২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারি ২০ দল ত্যাগ করে ইসলামী ঐক্যজোট। নেতৃত্বে ছিলেন মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, আবুল হাসনাত আমিনী ও মুফতি ফয়জুল্লাহ। সে দিনই খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অ্যাডভোকেট মাওলানা আবদুর রকিবের নেতৃত্বে ইসলামী ঐক্যজোট প্রতিষ্ঠা করা হয়।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে ১৩ অক্টোবর বিএনপি, গণফোরাম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিকদল (জেএসডি) ও নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আত্মপ্রকাশ করেছিল। তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের তিন দিন পর জেবেল রহমান গাণি নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাপ জোট ছেড়ে চলে যায়। একই দিন বেরিয়ে যায় খোন্দকার গোলাম মোর্তুজার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি)।
তবে জোটে রাখতে এম এন শাওন সাদেকীকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করে গঠন করা হয় বাংলাদেশ ন্যাপ ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) গঠন করা হয় ক্বারী আবু তাহেরের নেতৃত্বে।
২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর জোটে যোগ দেয় রিটা রহমানের নেতৃত্বাধীন পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশ এবং সৈয়দ এহসানুল হুদার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় দল।
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) নেতৃত্বে থাকা সাবেক ছাত্রনেতা শফিউল আলম প্রধানের মৃত্যুর পর দলটির নেতৃত্ব পায় প্রধানের মেয়ে ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ-এর পক্ষে মনোনয়ন চাইলেও মনোনয়ন দেয়নি বিএনপি। এরপর থেকে জোটে নিষ্ক্রিয় দলটি। তবে দলটির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফুর রহমানের নেতৃত্বে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) আরেকটি অংশ জোটে প্রতিনিধিত্ব করছেন।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ভরাডুবির পর শপথের সিদ্ধান্ত না নিয়েও পরবর্তীতে তাদের দলের নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সংসদে যোগদান করায় ২০১৯ সালে ২০ জোটভুক্ত থেকে বেরিয়ে যান বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ। জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়া দলগুলোর মধ্যে একমাত্র নিবন্ধিত দল বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) কোনো অংশ নিয়ে এখন পর্যন্ত ২০ দলীয় জোটে কেউ নেই।
২০২১ সালের ১৪ জুলাই জোট ত্যাগ করে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নিবন্ধিত অংশ। অবশ্য মুফতি ওয়াক্কাছের নেতৃত্বে আরেকটি অংশ জোটে থেকে যায়।
গত ১ অক্টোবর জোট ছেড়েছে নিবন্ধিত খেলাফত মজলিস। দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জাহাঙ্গীর হোসাইন ২০-দলীয় জোট ছাড়ার ঘোষণা দেন। দলের আমিরের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, এখন থেকে খেলাফত মজলিস ২০ দলীয় জোটসহ সব রাজনৈতিক জোটের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করছে।
কর্নেল (অব.) ড.অলি আহমদ নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। তবে অলি আহমদের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধে দলটির সিনিয়র নেতা আবদুল করিম আব্বাসী ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমের নেতৃত্বে এলডিপির আরেকাংশ তৈরি করে তারাও জোটভুক্ত থেকে যায়।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত দলগুলো হলো- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), ইসলামী ঐক্যজোট, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বি এম এল), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ- ভাসানী), বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি, ডেমোক্রেটিক লীগ, জমিয়তে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ পিপলস লীগ, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, খেলাফত মজলিশ, বাংলাদেশ ন্যাপ, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), বাংলাদেশ জাতীয় দল প্রমুখ।
রিটা রহমান ২০ দলীয় জোট শরিক পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশের (পিপিবি) সভাপতি ছিলেন। কিন্তু জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের মৃত্যুতে রংপুর-৩ আসন শূন্য হয়। পরবর্তীতে সেখান থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পান রিটা রহমান। অবশ্য মনোনয়ন পাওয়ার পর তিনি তার দলকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে বিএনপির সঙ্গে একীভূত হওয়ার ঘোষণা দেন। তার এ সিদ্ধান্তকে বিএনপি স্বাগত জানায়।
এমএইচ/এএস