চলমান গ্যাস সংকটের শেষ কোথায়?
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে লিখেছিলেন, কারিগরি কারণে ১২ থেকে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত তিতাস গ্যাসের অন্তর্গত এলাকায় গ্যাসের চাপ স্বল্প থাকতে পারে। তারপর ২১ জানুয়ারি চলে গেছে। স্বল্পচাপ তো দূরের কথা, গ্যাসই পাচ্ছেন না রাজধানীর অনেক এলাকার মানুষ। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আরও এক সপ্তাহ গ্যাসের সঙ্কট থাকবে।
সাধারণ মানুষ খুবই ক্ষুব্ধ। শহুরে জীবনে গ্যাসের সংকটের ভয়াবহতা কল্পনাও করা যায় না। বলা হচ্ছে সামিটের এলএনজি টার্মিনাল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবং বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের সংস্কার কাজের জন্য এ সংকট। যদিও ভুক্তোভোগীরা বলছেন শীতে এ গ্যাস সংকট যেন নিয়তি।
বনশ্রীর বাসিন্দা লক্ষ্মী রায় বলেন, ‘প্রতি বছর শীতের সময় গ্যাসের সংকটে ভুগতে হয়। সকাল থেকে বসে আছি গ্যাস এলে রান্না করব বলে, বিকেল গড়িয়ে গেলেও গ্যাস আসেনি। আর এ করোনার সময় বাইরের খাবার নিয়ে আসতেও ভয় হয়। ঢাকা শহরে গ্যাস ছাড়া চলা কোনোভাবে সম্ভব নয়। অথচ এ সংকটের কোনো সমাধান নেই। চলছে বছরের পর বছর।’
শুধু বনশ্রী নয়, রাজধানীর এমন কোনো এলাকা পাওয়া যাবে না, যেখানে গ্যাসের সংকট নেই। সকাল থেকে দুপুর অবধি চুলা জ্বলছে না। কোনো কোনো এলাকায় দুপুর ছাড়িয়ে রাতও হয় চুলায় গ্যাস পাওয়া যায় না।
বিক্ষুব্ধ গ্রাহকরা বলছেন, গ্যাস পাওয়া না গেলেও ঠিকই ৯৭৫ টাকার বিল মাস শেষে ধরিয়ে দেওয়া হয়। এর ওপর আবার গ্যাসের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করা হচ্ছে। গ্যাস না পেলে বিল দেবেন না বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেক গ্রাহক।
গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের বিপরীতে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) সরবরাহ ছিল ২ হাজার ৭২৬ মিলিয়ন ঘনফুট। অর্থাৎ ঘাটতি ছিল ১ হাজার ২৭৪ মিলিয়ন ঘনফুট। প্রতিদিন এমন ঘাটতি থাকছে বলে জানা গেছে।
রামপুরা ওয়াপদা রোডের ২৩৭ নম্বর বাড়ির মালিক আবদুর রশিদ ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, 'দিনের বেলা গ্যাস থাকেই না। রাতে অল্প চাপে গ্যাস পাওয়া যায়। ভাড়াটিয়াদেরও বলেছি রাতে রান্না করে রাখতে। এ সংকট কবে শেষ হবে কে জানে!'
যাত্রাবাড়ির সানারপাড়ের বাসিন্দা গুলশান আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'এভাবে খুব সমস্যা হয়ে যায়। সারাদিনে শুধু রান্নাটা করতে পারার টেনশন। সভ্য সমাজে এটি বিরল।'
রাজধানীর রাজাবাজার, জিগাতলা, মহাখালি, আদাবর, বাড্ডা, বনশ্রী, মিরপুর, পল্লবী ও পুরান ঢাকার বাসিন্দারাও একই ধরনের দুর্ভোগের কথা জানিয়েছেন। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, টাকা দিয়েও গ্যাস পাচ্ছেন না।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বলছেন, সামিট ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় চেয়েছে। ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছি।
আরইউ/এসএন