বাড়তে পারে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম
জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বৃদ্ধির শঙ্কা
গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বৃদ্ধির শঙ্কায় দিন পার করছে সাধারণ মানুষ।
ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ইতিমধ্যে এক দফা বাড়ানোর কারণে কৃষিখাতে সেচ ও বাস ভাড়াসহ প্রায় সবক্ষেত্রে একদফা ব্যয় বেড়েছে। সরকার আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে এমন যুক্তি দিয়ে দেশীয় বাজারে দাম বাড়িয়েছিল। যদিও এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমানো হলেও ডিজোল-কেরোসিনের দাম আর কমানো হয়নি।
সম্প্রতি আবার গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে ৬টি বিতরণ কোম্পানি। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করার প্রস্তাব দিয়েছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। এক চুলার মাসিক বিল ২ হাজার টাকা এবং দুই চুলার মাসিক বিল ২ হাজার ১০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
আবাসিকে প্রিপেইড মিটার, শিল্প, সিএনজি, বিদ্যুৎ, ক্যাপটিভে (শিল্পকারখানায় নিজস্ব উৎপাদিত বিদ্যুৎ) ব্যবহৃত গ্যাসের দামও দ্বিগুণের বেশি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
সারাদেশে এখন প্রতিদিন গড়ে ৩০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে ৭৮ শতাংশ অর্থাৎ ২৩০ কোটি ঘনফুট আসে নিজস্ব গ্যাসক্ষেত্র থেকে।
কাতার এবং ওমান থেকে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির আওতায় তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি হয় মোট সরবরাহের ১৭ শতাংশ। বাকি ৫ শতাংশ আন্তর্জাতিক খোলাবাজার থেকে কেনা হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই ৫ শতাংশ গ্যাস দুই মাস ধরে কেনা বন্ধ আছে। মাত্র ৫ শতাংশ গ্যাসের বাড়তি দামের নামে দেশে গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নাই।
বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা সরাসরি কথা বলতে রাজি হননি। দাম বৃদ্ধির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে জানিয়ে বিইআরসির সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা ঢাকাপ্রকাশকে জানান, নিয়ম মেনে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে আবেদন করতে বলা হয়েছে। কাজেই এই মুহূর্তে দাম না বাড়লেও গ্যাসের দাম আসলে বাড়বেই।
বাড়তে পারে বিদ্যুতের দামও
গ্যাসের দাম বাড়লে বিদ্যুতের দামও বাড়াতে হবে। দেশের ৭০ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় গ্যাস থেকে। বাকিটা তেল থেকে। সরকার ইতিমধ্যে একদফা তেলের দাম বাড়িয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচও একদফা বেড়েছে। এখন গ্যাসের দাম বাড়লে অবধারিতভাবে বিদ্যুতের দামও বাড়বে।
সরকারি ও বেসরকারি উৎস থেকে পাইকারি বিদ্যুৎ কেনে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। পিডিবি সেই বিদ্যুৎ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিসহ ৬টি বিতরণ কোম্পানির মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে পৌছে দেয়। কিন্তু পাইকারিতে বিদ্যুৎ কিনতে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে পিডিবি। এই ক্ষতি সামাল দিতে তাই বিদ্যুতের দাম বাড়াতে চায় প্রতিষ্ঠানটি।
গ্রাহক পর্যায়ে খুচরা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আবেদন করা হবে জানিয়ে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান বলেন, পিডিবির পাইকারি প্রস্তাবের বিষয়টির দিকে দৃষ্টি রাখছি।
বেড়ে যাবে সবকিছুর দাম
গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়া মানে সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়া। কৃষি থেকে শুরু করে শিল্পপণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। ফলে সামগ্রীকভাবে অর্থনীতির ওপর একটি মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
জানতে চাইলে কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, এলএনজি দিয়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে যদি বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয় তাহলে গোটা অর্থনীতি তছনছ হয়ে যাবে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে, দ্রব্যমূল্যও বাড়বে। এর চেয়ে দিনে কয়েক ঘণ্টা লোডশেডিং মেনে নিতেও রাজি মানুষ।
গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর 'পাঁয়তারা' বন্ধের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বলেছেন, করোনার কারণে জনগণের অর্থনৈতিক দুর্দশা, কর্মহীনতা, বাজার সিন্ডিকেটের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, বাস ভাড়া বৃদ্ধি, চিকিৎসা ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের জীবনে এমনিতেই নাভিশ্বাস উঠেছে। তার ওপর গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়লে তা মানুষের জীবনযাপনকে ভয়াবহ দুর্বিষহ করে তুলবে।
আরইউ/