ডিলার-পাইকারদের কাছে ‘নাই’ কিন্তু অনলাইনে মিলছে চিনি
ডি০লার ও পাইকারদের কাছে জিজ্ঞাসা করলে বলছে 'চিনি নাই'। কিন্তু অনলাইনে ঠিকই বেশি দামে পাওয়া যাচ্ছে। খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, অনলাইন থেকে বেশি দামে চিনি কিনতে হচ্ছে। তাই বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে।
সরকার এক মাসেরও বেশি আগে চিনির দাম কমিয়ে ১০৯ টাকা কেজি বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু তা মিলছে না বাজারে। ডিলার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা চিনির মুখ দেখতে পাচ্ছে না। খুচরা বিক্রেতারা তারা ঈদের আগে ১১৫ টাকা বিক্রি করলেও বর্তমানে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি করছে। এভাবেই সিন্ডিকেট করে ভোক্তাদের কাছে বেশি দামে চিনি বিক্রি করা হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের মেসার্স আমিন জেনারেল স্টোরের বাবুল বলেন, চিনি আছে। তবে বেশি দাম। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো ডিলার বা পাইকারিতে পাওয়া যায় না। মোকাম ডটকম নামে এক প্রতিষ্ঠান থেকে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ চিনি বেশি দামে ৬৩০০ টাকা বস্তা (১২৬ টাকা কেজি) কেনা হয়েছে। তাই ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
এভাবে বেশি দামে বিক্রি করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কি করব ব্যবসা তো করতে হবে। ডিলার বা পাইকারিতে পাওয়া যায় না। তাই যেখানে পাই সেখান থেকেই আসি। ক্রেতাদের ধরে রাখতে হবে।
তার কথা মোতাবেক মোকাম ডটকম এ যোগাযোগ করা হলেও সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, গোড়া (মিল) থেকেই চিনির দাম বাড়ানো হচ্ছে। তারপরও পাওয়া যাচ্ছে না। মিল থেকে ডিলাররা না পেলে ভোক্তাদের কাছে কিভাবে বিক্রি করব। যে যেভাবে পারছে ভোক্তাদের পকেট থেকে বাড়তি টাকা তুলে নিচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বাড়তি দামের ব্যাপারে একে অপরকে দোষারোপ করলেও কেউ দায় স্বীকার করছেন না।
রাজধানীর কারওয়ানবাজার, কৃষিমার্কেট, টাউনহল, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন বাজারে গেলে ঈদের পরে বিভিন্ন পণ্যের বাড়তি দামের এমনই চিত্র দেখা গেছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় সরকার গত ৮ এপ্রিল থেকে পরিশোধিত খোলা চিনির কেজিতে ৩ টাকা কমিয়ে ১০৪ টাকা এবং প্যাকেট চিনির দামও ৩ টাকা কমিয়ে ১০৯ টাকা কেজি নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু সরকার ঘোষণা করলেও বাস্তবে বাজারে তার উল্টো চিত্র।
পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখনো কম দামে চিনি পাইনি। বরং চিনির দাম বাড়িয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি খোলা চিনির কেজি ১০৭ টাকা ও প্যাকেটজাত ১১২ টাকা কেজি করা হয়েছিল। সেই দামেও পাওয়া যায় না। মিলমালিকরা রমজান মাসকে টার্গেট করে কারসাজি করে আটকে রাখে। তাই ডিলার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা কোনো চিনি পাচ্ছে না। ঈদের আগে ১১২ টাকা পেলেও বর্তমানে বাজারে সহজে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ অনলাইনে ঠিকই পাওয়া যাচ্ছে।
চিনি আছে কিনা জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের মেঘনা গ্রুপের ডিলার মেসার্স জামান ট্রেডার্সের মো. জামাল হোসেন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ঈদের ৫ দিন আগে থেকে কোনো চিনির মুখ দেখিনি। ১১২ টাকা রেটে সর্বশেষ চিনি পেয়েছি। টাকা দেওয়া আছে। তারপরও কোনো রেটেই দিচ্ছে না। চিনিও পাচ্ছি না। কবে পাব মিল থেকে তাও জানাচ্ছে না।
জামাল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এটা কোনো ব্যবসা না। দোকান খুলে বসে আছি। টাকা দেওয়ার পরও মাল পাচ্ছি না। কিন্তু খরচ তো থেমে নেই। এভাবে লোকসান গুনে আর কতো দিন চলব? এমন কি হয়েছে, যে সরকারও এর সমাধান করছে না?
শুধু এই ডিলারই নয়, কারওয়ান বাজারের সিটি গ্রুপের ডিলার এটুআই এন্টারপ্রাইজের জসিমও বলেন, ১৫ রোজার পর থেকে চিনি নেই। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, গোড়ায় খোজ নেন। কেন দিচ্ছে না, তাদের বলেন। তারা দিলেই আমরা বিক্রি করতে পাবর। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সর্বশেষ ১১০ টাকা কিনে ১১২ টাকা কেজি বিক্রি করা হয়েছে। এভাবে ব্যবসা হয় না।
শুধু এই পাইকারি ব্যবসায়ীদের নয়, কৃষিমার্কেট, টাইনহলের পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যেও দেখা গেছে চরম ক্ষোভ। কৃষিমার্কেটের সিটি এন্টারপ্রাইজের আবু তাহেরসহ অন্যান্য ব্যবসায়ী এবং টাউনহলের মনির জোনারেল স্টোরের আনোয়ারসহ অন্যান্য খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, চিনি নাই নাই বলতে বলতে মুখ ব্যথা হয়ে যাচ্ছে। কোম্পানি থেকেই বেশি দাম নিচ্ছে। কিন্তু আমরা জরিমানার ভয়ে তা বিক্রি করছি না।
এ ব্যাপারে কারওয়ান বাজারের ইয়াসিন স্টোরের রফিক বলেন, চিনি নাই বলতে বলতে মুখের ফ্যানা উঠে গেছে। তারপরও পাচ্ছি না। কারণ বেশি দামে কিনে জরিমানা খেতে চাই না। ম্যাজিস্ট্রেট প্রায় ঘুরে দেখে। অনেককে জরিমানাও করেছে। শুধু এই দোকানই নয়, অন্যান্য ব্যবসায়ীদের অভিযোগ এভাবে আর কতকাল চলবে। রমজান শেষ। তারপরও চিনি পাওয়া যায় না।
আসল তথ্য জানতে মেঘনা গ্রুপের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা শফিউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন না ধরায় কোনো মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। পরে প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক মো. তসলিম উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
'যেহেতু মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ চিনিই বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। তাই আপনার মন্তব্য জানতে চাই।' এমন প্রশ্নের উত্তরে তসলিম উদ্দিন বলেন, কোথা থেকে এই চিনি বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করছে আমি কিছুই জানি না। পারলে তাদের ধরিয়ে দিন। এর বাইরে তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
তসলিম উদ্দিনের কথা মোতাবেক সংগঠনটির সভাপতি গোলাম মোস্তফার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন না ধরায় কোনো মন্তব্য জানা যায়নি।
সিটি গ্রুপের তীর চিনি কোনো বাজারে নির্ধারিত দামে পাওয়া যাচ্ছে না তা জানতে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে ফোনে বার্তা দেওয়া হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।
শুধু চিনির দামই বেশি না রমজান মাসে খেজুরের ব্যাপক চাহিদার কারণে যে বেশি দাম ঈদের পরও সেই দামে বিক্রি করা হচ্ছে, একটুও কমেনি বলে জানান সজিব এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার সজিব।
আরইউ/এএস