‘জাতীয় সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন গণতান্ত্রিক হবে না’
মুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তী যোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। অনিয়মের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যান বুক চিতিয়ে। রাজনৈতিক পরিবেশ-পরিস্থিতি যখন উত্তপ্ত, অনিশ্চিত তখনই বিবাদমান পক্ষের মাঝখানে সমঝোতার সেতুর ভূমিকায় অংশ নেন তিনি।
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে থেকেও একজন ব্যক্তি মানুষের পক্ষে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য যতটুকু কাজ করা সম্ভব তার সর্বোচ্চটাই করে যেতে চান ডা. জাফরুল্লাহ।
ঢাকাপ্রকাশকে দেওয়া একান্ত আলাপচারিতায় উঠে আসে এমনি কিছু কথা। পাঠকের সুবিধার জন্য ঢাকাপ্রকাশ ও গণস্বাস্থ্য ট্রাস্ট্রিবোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কথোপোকথন তুলে ধরা হলো-
ঢাকাপ্রকাশ: মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর অতিবাহিত, মুক্তিযুদ্ধের একজন জীবন্ত কিংবদন্তী হয়ে মুক্তিযুদ্ধের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে বলে আপনার মনে হয়েছে?
জাফরুল্লাহ চৌধুরী: যেসব নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিবাহিত করলেও সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি। আমাদের সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর ইচ্ছাও নাই। মূলকথা দেশে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, সাম্য তার কোনোটাই নেই। দেশে আইনমন্ত্রী যখন বলেছেন, একটি বিচার শেষ হতে ৬০ বছর লেগে যায় সেখানে কী আছে সেটা সবার বোধগম্য।
ঢাকাপ্রকাশ: রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মহামান্য রাষ্ট্রপতির সংলাপকে কীভাবে মূল্যায়ণ করছেন?
জাফরুল্লাহ: রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ হলো-হাসি ঠাট্টার খেলা। এক ধরনের তামাশা। অর্থ ও সময়ের অপচয় ছাড়া কিছুই না।
ঢাকাপ্রকাশ: সম্প্রতি দেশের বেশ কয়েকজন ব্যক্তিবর্গ ও আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর (র্যাব) উপর দেওয়া মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
জাফরুল্লাহ: মাার্কন নিষেধাজ্ঞায় তেমন কিছু নেই। দুই একটা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তারা বুঝিয়ে দিয়েছে যে, আমরা যদি এতেও উন্নতি না হই তাহলে আমাদের (বাংলাদেশ) কপালে দুঃখ আছে। তারা যদি নিয়ম না মানার জন্য আমাদের পোশাক-শিল্পখাতের উপর হাত দেয় তখন কী হতে পারে? দেখেন না? চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১০০ লোকের প্রাণহানি হয়েছে। সিইসির উচিত ছিল নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়া। কিন্তু তিনি করেননি।
ঢাকাপ্রকাশ: আপনি তো জাতীয় সরকারের কথা বলছেন? চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট উত্তরণে জাতীয় সরকারের প্রয়োজনীয়তা আপনার দৃষ্টিতে কতটুকু?
জাফরুল্লাহ: দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। যা কোনো দলীয় সরকার করবে না, ফিরিয়ে আনবে না। সে জন্য জাতীয় সরকারের কথা বলছি। জাতীয় সরকার ছাড়া আগামী দিনে রাজনৈতিক সঙ্কট থেকে পরিত্রাণের খুব বেশি সুযোগ নেই।
ঢাকাপ্রকাশ: সরকার প্রধান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আপনার কোনো প্রস্তাব বা পরমর্শ আছে কী? যদি থাকে তাহলে সেটা কী?
জাফরুল্লাহ: আমি মনে করি, আপনার (শেখ হাসিনা) উচিত হবে জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে সবজায়গায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। ন্যায়বিচার না আনলে সার্বিক সঙ্কট থেকে দেশের উত্তরণ ঘটবে না। আপনাকে দলীয় সরকারের ঊর্ধ্বে যেতে হবে, আর সে জন্য জাতীয় সরকারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। তা ছাড়া জাতীয় সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন গণতান্ত্রিকভাবে হবে না। মানুষ তার ন্যায্য অধিকার পাবে না।
ঢাকাপ্রকাশ: সময় দেওয়ার জন্য ঢাকাপ্রকাশ পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।
জাফরুল্লাহ: আপনার মাধ্যমে ঢাকাপ্রকাশকে ধন্যবাদ।
এমএইচ/টিটি/এএস