গবেষণায় মেয়র, মানুষকে কামড়ে ‘জাত’ চেনাচ্ছে মশা
মশার সঙ্গে যুদ্ধ করছেন নগরবাসী। আর মশার প্রজাতি নিয়ে গবেষণা করে ওষুধ প্রয়োগের কথা বলছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আতিকুল ইসলাম। শুধু তাই নয়, তিনি বলেছেন, এতদিন মশা নিধনে ভুল পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে।
তবে নগরবাসীর অভিযোগ, এই ভুল পদ্ধতির পেছনেই প্রতিবছর ব্যয় করা হয়েছে শত শত কোটি টাকা। কিন্তু কোনো সুফল পাওয়া তো দূরের কথা উল্টো খেসারত দিচ্ছে নগরের প্রতিটি নাগরিক।
সন্ধ্যা হলেই রাজধানী ঢাকা চলে যায় দলবদ্ধ মশার দখলে। বাসা-বাড়িতে নেট লাগিয়েও মশাকে ঠেকানো যাচ্ছে না। বিশেষ করে যেসব এলাকায়, খাল, নালা-নর্দমা আছে সেসব এলাকায় তো কথাই নেই। পুরোটাই মশার রাজ্যে পরিণত হয়। ফলে মশা মানুষের শরীরে লেপ্টে থাকছে। কয়েল কিংবা মশার ওষুধ দিয়েও মশাকে তাড়ানো যাচ্ছে না। উল্টো মশা সংঘবদ্ধভাবে মানুষকে কামড়াচ্ছে।
নগরবাসী বলছেন, মশার প্রজাতি নিয়ে গবেষণা করতে চাচ্ছেন ডিএনসিসি মেয়র। এর মধ্যেই নগরবাসীকে কামড়ে নিজেদের জাত চেনাচ্ছে মশা নিজেই।
ডিএনসিসি মেয়র বলছেন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি শহর সফর করেই তিনি বুঝতে পেরেছেন যে এতদিন ভুল পদ্ধতি প্রয়োগ করেছেন মশা নিধনে। কিন্তু মিয়ামিতে গিয়ে তিনি জানতে পেরেছেন যে মশার প্রজাতি নিয়ে গবেষণা করে সেই অনুযায়ী ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়। এখন মিয়ামির সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চান ডিএনসিসি মেয়র।
এ লক্ষ্যে কাজও শুরু করেছেন। কিন্তু এর মধ্যেই মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ নগরবাসী। একই অবস্থা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনেরও (ডিএসসিসি)।
বেড়েছে কিউলেক্স মশা
তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ে কিউলেক্স মশার উপদ্রব। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। শীতের প্রকোপ কমার সঙ্গে সঙ্গে কিউলেক্স মশার প্রজননও বেড়ে গেছে। আগামীতে কিউলেক্স মশা আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে কিউলেক্স মশার প্রজনন বাড়তে শুরু করে। মার্চে ভয়াবহ রূপ নেয়। এই চিত্র থাকে এপ্রিল-মে পর্যন্ত। তাই সামনে আরও খারাপ দিন অপেক্ষা করছে নগরবাসীর জন্য।
জানতে চাইলে ডিএনসিসি মেয়রের উপদেষ্টা ও কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ইতিমধ্যে ব্যাপক হারে কিউলেক্স মশার প্রজনন ঘটেছে। মার্চ মাস পুরোটাই এমন ধকল সইতে হবে নগরবাসীকে। এপ্রিলে কিউলেক্স মশার উপদ্রব কমতে থাকবে।
মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি নানাবিধ তৎপরতা পরিচালনা করছে বলে জানান ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান।
অন্যদিকে, ডিএসসিসি এলাকায় কিউলেক্স মশার বিস্তার নিয়ন্ত্রণে আছে দাবি করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামছুল কবির বলছেন, তবে যেসব এলাকার জলাশয় অপরিষ্কার রয়েছে সেসব এলাকায় মশা কিছুটা বেশি।
খরচের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মশাও
ঢাকার দুই সিটিতে মশা মারতে প্রতিবছরই বরাদ্দ বাড়ছে ৷ সেই সঙ্গে যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মশাও। দুই সিটিতে বছরে বরাদ্দ প্রায় ২০০ কোটি টাকা ৷ তাই নগরবাসীর প্রশ্ন, মশা মারতে বরাদ্দকৃত এত এত টাকা আসলে যায় কোথায়?
ডিএনসিসিতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মশা নিধনে ব্যয় হয়েছিল ১০ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাজেটে বরাদ্দ ছিল ২৪ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২০ কোটি টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেট ছিল ২১ কোটি টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
এ ছাড়া, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫০ কোটি ৫০ লাখ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যয় হয় ১১০ কোটি টাকা। আর চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ১০১ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে ডিএনসিসি।
অন্যদিকে, ডিএসসিসি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছর ব্যয় ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেট ছিল ২৬ কোটি টাকা।
২০১৯-২০ অর্থবছরে বাজেট বরাদ্দ ছিল ৪৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৫ কোটি টাকা, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে মশা নিধনে বাজেট রাখা হয় ৪৫ লাখ ৭৫ কোটি টাকা।
এই বরাদ্দের সঙ্গে আরও যোগ করতে হবে মশক নিধন যন্ত্রপাতি কেনার ব্যয়। জানা যায়, দুই সিটি করপোরেশন বিগত পাঁচ অর্থবছরে মশক নিয়ন্ত্রণে কীটনাশকই কিনেছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার। এই কেনাকাটায়ও ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
এসএইচবি/এমএমএ/