দীর্ঘ বিরতির পর আবার সাকিব-তামিম এক সঙ্গে
বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন কর্তৃক সাকিব-তামিম দ্বন্দ্ব প্রকাশ করার পর উপরের শিরোনাম দেখে অনেকেরই মনে হবে দুই তারকা ক্রিকেটার সব কিছু ভুলে গিয়ে আবার এক হয়ে মাঠে নামছেন! আসলে কিন্তু তা নয়। সাকিব-তামিম দ্বন্দ্বের বিষয়টি বিসিবি সভাপতি কয়েকদিন আগে প্রকাশ করলেও এটি চলে আসছে বেশ কয়েক বছর থেকেই। আর কাকতলীয়ভাবে দুইজনেরই একত্রে মাঠে নামা হচ্ছে না বেশ কিছু দিন থেকে। কখনো সাকিব ছুটিতে থাকার কারণে। আবার কখনো তামিম ইকবাল ইনজুরি ও ব্যক্তিগত কারণে। এভাবে দুইজনে সর্বশেষ মাঠে নেমেছিলেন ২০২২ সালের ২২ জুন উইন্ডিজের বিপক্ষে সেন্ট লুসিয়া টেস্টে। সব কিছু ঠিক থাকলে এরপর দুইজনে আবার মাঠে নামবেন আগামীকাল ১ মার্চ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে।
তামিম-সাকিব দুইজনেরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু কাছাকাছি সময়ে। সাকিব শুরু করেন ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে ২০০৬ সালের ৬ অগাস্ট জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারেতে। তামিমের অভিষেক হয় ২০০৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি। সেই একই প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে। ভেন্যু ছিল হারারে।
অভিষেকের পর থেকেই কালের পরিক্রমায় দুইজনেই হয়ে উঠেন দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। মূল কান্ডারি। বাংলাদেশের ক্রিকেট আজ যে পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আছে, সেখানে আছে এই দুই ক্রিকেটারের এক বিশাল অবদান। এখন পর্যন্ত তিন ফরম্যাটে তামিম ৩৭৮টি ও সাকিব ৩৯৮টি ম্যাচ খেলেছেন। তামিম রান করেছেন ১৪,৯১৪। ২৫টি সেঞ্চুরির সঙ্গে আছে ৯৩টি হাফ সেঞ্চুরি। সাকিব রান করেছেন ১৩,৪৪৫। সেঞ্চুরি ১৪টি ও হাফ সেঞ্চুরি ৯২টি। উইকেট পেয়েছেন ৬৫৩টি।
দীর্ঘ এই পথ চলায় দুইজনে কাঁধে কাঁধ রেখে দলকে সামনে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। একমাত্র ইনজুরিই তাদের একমাত্র মাঠে নামার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল। এর বাইরে ব্যক্তিগত কারণ ছিল খুবই কম।
দলের দুই প্রধান কান্ডারি হওয়ার পাশাপাশি দুইজনেই হয়ে উঠেন একে অপরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এক সঙ্গে থাকা, চলা-ফেরা, খাওয়া-দাওয়া অনুশীলনে আসা ছিল নিত্য ঘটনা। তাদের এ রকম ঘনিষ্ঠতা সবার নজর কাড়ে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় সেখান ফাটল ধরে। দুই জনার দুটি পথ যা বেঁকে। এই সময়েই দুইজনের একত্রে মাঠে নামার ক্ষেত্রে পড়ে লম্বা বিরতি।
দুইজনের একত্রে মাঠে নামার বিরতি এমনই লম্বা হয় যে তিন ফরম্যাটে খেলার পরও দুইজনের একত্রে আর খেলা হয়ে উঠেনি। সর্বশেষ দুইজনে একত্রে মাঠে নেমেছিলেন ২০২২ সালে ২২ জুন শুরু হওয়া টেস্টে। প্রতিপক্ষ ছিল উইন্ডিজ। ভেন্যু ছিল সেন্ট লুসিয়া। বাংলাদেশ হেরেছিল ১০ উইকেটে। তামিম ইকবাল ৪৬ ও ৪ রান ও সাকিব ৮ ও ১৬ রান করেছিলেন। সাকিব বল হাতে কোনো উইকেট পাননি। এরপর বাংলাদেশ খেলেছে দুইটি টেস্ট ভারতের বিপক্ষে। এই টেস্ট দুইটি সাকিব খেললেও ইনজুরির কারণে তামিম ইকবাল খেলেননি। দুইটি টেস্টই বাংলাদেশ হেরেছিল।
দুইজনে ওয়ানডে ম্যাচ সর্বশেষ খেলেছিলেন ২০২২ সালেরই ২৩ মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেঞ্চুরিয়ানে। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৫৪ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছিল ৯ উইকেটে। তামিম খেলেছিলেন ৮৭ রানের অপরাজিত ইনিংস। ওয়ান ডাউনে নেমে সাকিবের রান ছিল অপরজিত ১৮। এর আগে তিনি বল হাতে নিয়েছিলেন ৯ ওভারে ২৪ রান দিয়ে ২ উইকেট।
এরপর বাংলাদেশ ৯টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে। কিন্তু দুইজনের আর একত্রে খেলা হয়নি। উইন্ডিজ ও জিম্ববুয়ে সফর থেকে সাকিব ছুটি নেন। যথারীতি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তামিম। আবার ভারতের বিপক্ষে ঘরের মাঠে সিরিজে ইনজুরির কারণে দলকে নেতৃত্ব দিতে পাারেননি তামিম ইকবাল। খেলেছিলেন সাকিব।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দুইজনের দেখা হওয়ার সুযোগই ছিল না। কারণ ২০২০ সালের ৯ মার্চ মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলার পর তামিম ইকবাল আর টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে নামেননি। ইনজুরি ও ছুটি কারণে অনুপস্থিত থাকার পর এক পর্যায়ে তিনি ফেইসবুকে ঘোষণা দিয়ে অবসর নেন। এরপর বাংলাদেশ ৪৯টি ম্যাচ খেলেছে। যেখানে ছিল দুইটি টি-টেয়েন্টি বিশ্বকাপ।
দুইজনে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেন ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর মিরপুরে উইন্ডিজের বিপক্ষে। বাংলাদেশ হেরেছিল ৫০ রানে। ব্যাট হাতে তামিম ৮ ও সাকিব ০ রান করেছিলেন। বল হাত সাকিব ৪ ওভারে ৩৭ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট।
৮ মাসেরও বেশি সময় পর দু্ইজনের একত্রে মাঠে নামার সেই শূন্যস্থান পূরণ হতে চলেছে আগামীকাল বুধবার!
এমপি/এসএন