খালেদা জিয়ার রাজনীতি: সরকারের ভেতরেই দুই মত
খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন কি না তা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত। সরকারের একাধিক মন্ত্রী খালেদা জিয়াকে নিয়ে গণমাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, কৃষিমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ নিজ নিজ অবস্থান থেকে খালেদা জিয়াকে নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।
সম্প্রতি রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠান শেষে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন কি না শর্তে সেটা আছে কি না সেটা আমার মনে পড়ছে না। তবে যতদূর মনে পড়ছে, শর্তে এ রকম কিছু নেই।’
তার এই বক্তব্যের পর গত কয়েকদিন ধরেই বিষয়টি নিয়ে কথা হচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। বিশেষ করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সরকারি দলের নেতাদের কাছে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তারা জবাব দিচ্ছেন।
অবশ্য দেশের বিশিষ্ট আইনজীবীরা বলছেন, প্রথমে যে শর্তে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত রেখে তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে তাতে তার রাজনীতি করার কোনো সুযোগ নেই। যদি না এই শর্ত শিথিল হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘আইনমন্ত্রী যেটা বলেছেন সেটা সঠিক। তিনি রাজনীতি করতে পারবেন। যদি কোনো শর্ত না থাকে। তবে নির্বাচন করতে পারবেন না।’
বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে জাপানের রাষ্ট্রদূত সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকরা কৃষিমন্ত্রীর কাছে জানতে চান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন কিনা? জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার রাজনীতি করতে বাধা নেই। তিনি জেলে থেকেও দল পরিচালনা করতে পারবেন, বিভিন্ন নির্দেশনা দিতে পারবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে আইন অনুযায়ী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে বর্তমান নির্বাচনী আইনে যা আছে, তাই মানতে হবে। এখানে সরকার বা নির্বাচন কমিশনসহ কারও কিছু করার নেই।’
এদিকে, বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে একটি অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদের কাছে সাংবাদিকরা খালেদা জিয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমি সরকারের তথ্যমন্ত্রী হিসেবে বলছি খালেদা জিয়া যে শর্তে বাসায় আছেন তাতে তার রাজনীতি করার কোনো সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘কে কী বললেন সেটা বিষয় না, তাকে যে শর্তসাপেক্ষে বাসায় থেকে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তাতে খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার সুযোগ নেই।’
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কেউ দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত হলে তার নির্বাচন করার কোনো সুযোগ নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন সেটা আইনমন্ত্রী বলেননি। তার বক্তব্য ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।’
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্ট্রাটেজিক স্টাডিজের (বিলস্) এক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আইনমন্ত্রী আবারও বলেছেন, খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার বিষয়ে কোনো আইনি বাধা নেই। তবে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
তিনি বলেন, ‘আইনগত বাধা কোথায় থাকে? খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন না। তার কারণ তিনি দণ্ডিত। কিন্তু রাজনীতি করতে পারবেন না, এ রকম কথা তো কোথাও নাই। বাস্তব অবস্থা হলো তিনি তার যে দণ্ডাদেশ সেটা স্থগিত করেছিলেন। কারণ তিনি অসুস্থ। এটা মনে রাখতে হবে। এখন বাস্তব অবস্থাটা কী সেটাও আপনারা জানেন।’
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাস্তব অবস্থা হচ্ছে, তার ভাই যে আবেদনটা করেছেন; সে আবেদনের মধ্যে বলা আছে তিনি গুরুতর অসুস্থ। তার যদি আরও ভালো চিকিৎসা না হয় তার জীবন বিপন্ন। তখন মানবিক কারণে প্রধানমন্ত্রী তার সাজা স্থগিত রেখে মুক্তি দিয়েছেন। যিনি অসুস্থ তিনি রাজনীতি করতে পারবেন কি না সেটা আমি বার বার আপনাদের বলছি। সেটা আপনারা বিবেচনা করে দেখেন। স্বাভাবিকভাবে মানুষ মনে করে তিনি অসুস্থ রাজনীতি করতে পারবেন না। এটাই হচ্ছে বাস্তব অবস্থা।’
তিন মন্ত্রীর তিন রকম বক্তব্যে রাজনৈতিক মহলে নানান আলোচনা হচ্ছে খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন কি না। চলছে বিতর্ক।
শর্তসাপেক্ষে সাজা স্থগিত করে কারাগারের বদলে বাসায় থাকা খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন কি না-এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যারিস্টার তানজিব-উল আলম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আইনগতভাবে তার সাজা স্থগিত রেখে জেলে না রেখে বাসায় থাকার সুযোগ দিয়েছে সরকার। সরকারের সেই ক্ষমতাটা আছে এবং সেটা করতে হলে যেকোনো ধরনের শর্ত আরোপ করা যায়।
জানা মতে, তার সাজা যখন স্থগিত করে বাসায় থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল তখন যে শর্তটা আরোপ করা হয়েছিল তাতে উল্লেখ ছিল যে, তিনি কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে পারবেন না। আমার জানা মতে, সরকারের পক্ষ থেকে সে শর্তটা শিথিল করা হয়নি। এখন যদি শিথিল করা হয়ে থাকে সেটা আমার জানা নেই। তবে আমি যত দূর জানি, আগের শর্তটা এখনো আছে, যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার নির্বাচন করার কোনো সুযোগ নেই। সাজাপ্রাপ্ত আসামি নির্বাচন করতে পারেন না।’
অপরদিকে, রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা আমিন উদ্দিন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন কি, করবেন না সেটা তিনি যে জামিনে মুক্ত আছেন তার শর্তের উপর নির্ভর করে। যেহেতু আইনমন্ত্রী বলেছেন ও আমি তার বক্তব্য শুনেছি তাতে খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন।’
তিনি বলেন, ‘৪০১-এ তাকে প্যারোলে যে মুক্তি দেওয়া হয়েছে সেখানে যদি শর্ত দেওয়া থাকে তাহলে তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন না। কারণ, তিনি দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত। যেটা নৈতিক স্খলনজনিত।’
এনএইচবি/এমএমএ/