৪ বছরেও ফয়সালা হয়নি অগ্নিকাণ্ডে ঝুঁকিতে থাকা ১৮১৮ ভবনের
অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে থাকা রাজধানীর এক হাজার ৮১৮টি ভবনের ব্যাপারে কোনো ফয়সালা হয়নি। চার বছরের বেশি সময় ধরে লালফিতায় বন্দী এসব বহুতল ভবনের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।
২০১৯ সালের মার্চ মাসে বনানীর এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর রাজউক অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে থাকা রাজধানীর নকশা লঙ্ঘন করে নির্মিত ১ হাজার ৮১৮টি বহুতল ভবনের তালিকা তৈরি করে। কিন্তু তালিকা পর্যন্তই সব কাজ শেষ শেষ। এসব ভবনকে ঝুঁকিমুক্ত করা কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ অংশ ভেঙে ফেলার কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি গত চার বছরে।
রবিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর গুলশানে বহুতল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর ঝুঁকিপূর্ণ বহুতল ভবনের বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এফআর টাওয়ার অগ্নিকাণ্ডের পর সরকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, রাজউক, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সবাই নড়েচড়ে বসে। শুরু হয় রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সানক্তের কার্যক্রম। দ্রুততম সময়ের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে গুলশান, বনানীন, ধানমন্ডি, মতিঝিল এলাকায় বহুতল ভবন যেগুলো নকশা বহির্ভূতভাবে তৈরি করা হয়েছে তার একটা দীর্ঘ তালিকা তৈরি করে।
যেখানে স্থান পায় ১ হাজার ৮১৮টি বহুতল ভবন। কিন্তু এই তালিকা প্রকাশ কিংবা তালিকা ধরে ভবনগুলোর মালিকদের বিরুদ্ধে কোনোরকম ব্যবস্থা গত চার বছরেও নিতে পারেনি রাজউক কিংবা সরকারের অন্য কোনো সংস্থা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা, প্রভাবশালীদের চাপের মুখে এই তালিকা প্রকাশই করতে পারেনি রাজউক।
তৎকলীন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম তখন বলেছিলেন ১৫ দিনের মধ্যে তালিকা গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হবে। আমরা দেখাতে চাই কারা বড় বড় কথা বলে অথচ তারা এই ধরনের অপরাধে লিপ্ত। কিন্তু প্রভাবশালীদের চাপের কারণে সেই ১৫ দিন চার বছরেও শেষ হয়নি।
শ ম রেজাউল করিমের পর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। কিন্তু তার এই সময়ে গত প্রায় তিন বছরেও অবৈধ বহুতল ভবনের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি।
এ ব্যাপারে প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে কথা বলা সম্ভব হয়নি। রাজউক চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান ভুইয়ার সঙ্গেও ফোনে যোগাযোগ করে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বনানীতে আগুন লাগার পর রাজউকের করা এই তালিকা প্রকাশ করার ব্যাপারে সরকারের সদিচ্ছা ছিল। কিন্তু ভবনগুলোর মালিক এমন সব ব্যক্তি যারা সমাজের খুবই প্রভাবশালী। এ কারণেই মূলত তালিকাটা হিমঘরে চলে গেছে।
জানা যায়, সেই সময় রাজউকের ২৪টি টিম কাজ করে এই তালিকা প্রণয়ন করে। টিমের সংশ্লিষ্ট কয়েকজন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ১ হাজার ৮১৮টি ভবনের মধ্যে কোনো কোনোটা পুরোটাই অবৈধ, কোনোটার আংশিক অবৈধ আবার কোনোটার নিচের পার্কিংয়ের জায়গা দখল করে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এসব ভবন ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, তালিকার ভবনগুলোর মধ্যে সাধারণ যে সমস্যা সেটি হলো অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থার অপ্রতুলতা। বনানীর এফআর টাওয়ারেরও উপরের দুটি তলা অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল এবং ভবনে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা ছিল না বললেই চলে।
সেই সময় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয় তালিকা প্রকাশের পর মালিকদের সময় বেঁধে দেওয়া হবে। এরপর যেসব ভবন নীতিমালায় না আসবে তাদের ভবন ভেঙে দেওয়া হবে। কিন্তু তালিকাই প্রকাশ করা যায়নি।
এ প্রসঙ্গে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সভাপতি আবু নাসের খান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এ ভবনগুলো যাদের তারা এতই প্রভাবশালী যে, তারা রাষ্ট্র ও সমাজ চালান। তারা মন্ত্রীকেও পরিবর্তন করে দিতে পারে। এ কারণেই এই তালিকা প্রকাশ করা যায়নি বলে মনে করি।
প্রসঙ্গত, বনানীর এফআর টাওয়ার অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু হয়েছিল ২৬ জন। অগ্নিদগ্ধ হয়েছিলেন ৭৩ জন। আর চার বছর পর রবিবার রাতে গুলশান-২ এর ১০৪ নম্বর সড়কের ১২ তলা ভবনে অগ্নিকাণ্ডে মারা গেছেন দুই জন। উদ্ধার করা হয়েছে ২২ জনকে।
এনএইচবি/এমএমএ/