৩৬৩ দিনই অবৈধ দখলে থাকে ‘ঐতিহাসিক আমতলা গেট’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাত্র সমাজ ১৯৫২ সালে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগানে যে গেট দিয়ে ১৪৪ ধারা ভেঙেছিল সেই স্মৃতিবিজড়িত আমতলা গেটটি এখন আর আগের মতো দেখা যায় না। বছরের ৩৬৩ দিন থাকে অবৈধ দোকানপাটের দখলে। বছর ঘুরে একুশে ফেব্রুয়ারি এলেই ১৯ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত থেকে শহীদ মিনার এবং এর আশেপাশের জায়গা পরিষ্কার করা শুরু হয়।
আবার ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকেই আগের নিয়মে ফিরে যায় ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত সেই জায়গাটি অবৈধ দোকানপাটের দখলে চলে যায়। স্থানীয়দের অভিযোগে জানা যায়, হাসপাতাল কতৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো প্রকার প্রদক্ষেপ না নেওয়ায় আজ হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহাসিক আমতলা গেটটি।
আবার হাসপাতালে কর্মচারীরা বর্হিরাগতদের দিয়ে দোকান বসিয়ে মাসোহারা নিচ্ছে। অবহেলা-অযত্নে পড়ে আছে গেটটি। রবিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকালে দেখা যায়, ইতিহাসবিজড়িত সেই গেটটি স্থায়ীভাবে বন্ধ। পাশেই ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেট। ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারিতে মাতৃভাষা বাংলা চাই স্লোগান দিয়ে ১৪৪ ধারা ভেঙেছিল ছাত্র সমাজ। সেই স্মৃতিবিজড়িত গেটসহ তার আশ পাশে চায়ের দোকান, সোহাগের পুরি-শিঙাড়ার দোকান, পান সিগারেটের দোকান, ফল-পানি-বিছানা-বালিশের দোকান।
গেটের উপরে প্লাস্টিকের সাইনবোর্ডটি না থাকলে জানার কোনো উপায় নেই যে এটি সেই ঐতিহাসিক আমতলা স্মৃতিবিজড়িত গেট। তবে উপরে থাকা ব্যানারটি দেখে মনে হচ্ছে ঝকঝকে। কেউ হয়তোবা নতুন লাগিয়েছে। সেই গেটের নিচে অবস্থান দোকানদারের সঙ্গে আলাপ হয়।
তারা জানান, শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরের দিকে ভাষা আন্দোলন পরিষদ থেকে কয়েকজন লোক এসে ভাঙাচুরা পুরাতন সাইনবোর্ড সরিয়ে এ নতুন ব্যানারটি লাগিয়ে গেছে।সেই ব্যানারে লেখা আছে, ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত আমতলার ঐতিহাসিক প্রাঙ্গণ থেকে। আরও লেখা আছে, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির এদিনে ছাত্র সমাজ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে মিছিল করে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এ আমতলা গেট দিয়েই ছাত্ররা বেরিয়ে এসেছিলেন ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করতে। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগান দিতে দিতে রাজপথে নেমে এসেছিলেন তারা। ছাত্রদের মিছিলে গুলি চালায় পুলিশ। শহীদদের রক্তের বিনিময়ে বাংলা ভাষার অধিকার পায় বাঙালিরা। মায়ের ভাষায় কথা বলার স্বীকৃতি পায়। রক্তের বিনিময় ছিনিয়ে আনা বাংলা ভাষা এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি।
ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, ভাষা আন্দোলনের আমতলার সেই ঐতিহাসিক গেট বছরের ৩৬৩ দিন অবৈধ দোকানপাটদের দখলে থাকে। আর গেটটির কয়েকটি কক্ষে হাসপাতালের এক আবাসিক চিকিৎসক থাকেন তার পরিবার নিয়ে। বছর ঘুরে একুশে ফেব্রুয়ারির এলেই প্রশাসন দুয়েক দিন আগে থেকে ঐতিহাসিক আমতলা গেটসহ শহীদ মিনার পর্যন্ত পুরো সড়কটি দুদিন ঝকঝকে করে রাখে।
দ্বিতীয় দিনের মাথায় আবার ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত সেই গেটসহ হাসপাতাল কেন্দ্রিক আশপাশের ফুটপাত অবৈধ দোকানপাটের দখলে চলে যায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাবেক পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত ভাষা আন্দোলনের গেটটি আমি নিজ উদ্যোগে রঙ করেছিলাম। উপরে সাইনবোর্ড লাগিয়েছিলাম। ওই জায়গায় যেন দোকানপাট বসতে না পারে এর জন্য ফুটপাতের পাশে খালি জায়গায় লোহার ব্যারিকেড দিয়ে ফুল গাছ লাগিয়েছিলাম।’
এদিকে বর্তমান ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, ‘স্মৃতিবিজড়িত সেই গেটের নিচ থেকে প্রতিনিয়ত অবৈধ দোকান আমরা উচ্ছেদ করে থাকি। এ ছাড়া হাসপাতাল সংলগ্ন সড়কটি দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আন্ডারে।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বছর ঘুরে একুশে ফেব্রুয়ারি এলেই স্মৃতিবিজড়িত সেই আমতলা গেটটি নিয়ে হুলুস্থুল লেগে যায়। বাকি ৩৬৩ দিন কারো কোনো খবর থাকে না। এ দৃশ্য বহু বছর ধরে দেখে আসছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঠিক থাকলে সব কিছুই হতো। এ ব্যাপারে কেউ চিন্তাভাবনা করে না বলে আজ ঐতিহাসিক আমতলার গেটের এই বেহাল অবস্থা।
এএইচ/এমএমএ/