বিএনপির হুংকারকে তামাশা বলছে আওয়ামী লীগ
বিএনপির হুংকারকে তামাশা বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা বলছেন, আন্দোলনের নামে রাজনীতির মাঠ অস্থির করলে এক চুলও ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ। সরকারের শেষ সময়ে কোনোভাবেই মাঠ ফাঁকা রাখতে চায় না আওয়ামী লীগ। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সরকারও হার্ড লাইনে থাকবে। দেশের কোথাও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করলে কঠোর হস্তে দমন করার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে দলটি।
বিজয়ের মাস ডিসেম্বরকে সামনে রেখে আল্টিমেটাম দিয়েছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ বলেছেন ১০ ডিসেম্বরের পর দেশ চলবে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে। বিএনপি নেতাদের এমন হুংকারে মোটেই বিচলিত নন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। বরং আওয়ামী লীগ তাদের এ ঘোষণাকে তামাশা বলে উড়িয়ে দিচ্ছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চায় সব দল সভা-সমাবেশ করুক তবে সেটা হতে হবে শান্তিপূর্ণ। কোনোভাবেই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে জনগণকে জিম্মি করে রাজনীতি করতে দেবে না আওয়ামী লীগ। যেখানেই সংঘাত সেখানেই প্রতিরোধ— তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সব মহলে এই বিশেষ বার্তা দেওয়া আছে আওয়ামী লীগের।
রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তাল করে কেউ ফায়দা লুটতে চায় এমন মেসেজ সরকারের কাছে রয়েছে। তাই সরকারের পাশাপাশি দলীয় নেতাদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। কারণ এই মুহূর্তে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে কেউ ভিন্ন পথে ক্ষমতায় এলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে আওয়ামী লীগ। তাই দলের ও দেশে মানুষের কথা চিন্তা করে আওয়ামী লীগ হার্ড লাইনে।
সম্প্রতি ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, প্রস্তুতি নিন, কর্মসূচি আসছে; কাঁচপুর ব্রিজ, টঙ্গী ব্রিজ, মাওয়া রোড, আরিচা রোড, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া— সারা বাংলাদেশ বন্ধ করে দেবেন। এই বাংলাদেশ চলবে না। আগামী ১০ ডিসেম্বরের পরে বাংলাদেশ চলবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কথায়। এর বাইরে দেশ চলবে না কারো কথায়।
এর একদিন পর বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেছেন, ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় বসে আছে আওয়ামী লীগ। এ সরকারের ক্ষমতায় থাকার আর কোনো নৈতিক অধিকার নেই। তারা দেশের মানুষকে জিম্মি করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় আছে। তাদের নেতৃত্বে এ দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। ১০ ডিসেম্বরের আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। এর পর বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশ পরিচালনা হবে।
এরপর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয়েছে তাহলে কি ডিসেম্বরে সংঘাতের পথে যাচ্ছে দেশের রাজনীতি। বিএনপি নেতাদের কথা যদি সত্যি হয় তাহলে তো সরকারকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে বিএনপি। যদিও বিএনপির এমন হুংকারকে পাত্তা দিচ্ছে না ক্ষমতাসনী আওয়ামী লীগ।
বিএনপি নেতাদের রাজনৈতিক হুংকারের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির আন্দোলনের হাঁক ডাকে আওয়ামী লীগ ভীত এমন উদ্ভট চিন্তা আমাদের কেউ করে না।
বিএনপিকে উদ্দেশে করে বলেন, আসেন মাঠে আসেন। লাঠি নিয়ে এলে খবর আছে। জাতীয় পতাকার সঙ্গে লাঠি, এটা মেনে নেব না। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাকে অবমাননা করা, এটা আমরা মেনে নেব না। আমরা প্রস্তুত আছি। আওয়ামী লীগ সতর্ক অবস্থায় আছে, সক্রিয় আছে। সতর্ক অবস্থায় সংযমী হয়ে আমরা থাকব রাজপথে। আমরা রাজপথ থেকে ক্ষমতায় এসেছি, আন্দোলন করে সেই আন্দোলনের ভয় আওয়ামী লীগকে দেখাবেন না।
বিএনপির হুংকারের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কারো হুংকারে ভীত না। তারা তো কত বার তারিখ দিল, আন্দোলন কি করতে পেরেছে। তারা মাঠে নামলে আওয়ামী লীগ বসে থাকবে না। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগও প্রস্তুত।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, যদি মানুষের উপর হামলা হয়, জ্বালাও-পোড়ায় শুরু হয় ব্যাপকভাবে, তখন তো জনগণের পাশে দাঁড়াতে হয়। জনগণকে তো আমরা বিপদে ফেলতে দেব না এটা যেমন সত্য, আবার জনগণকে নিয়ে কেউ খেলা করবে, জনগণকে ফাঁদে ফেলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে রাজনীতির ফায়দা লুটবে— সেটা কি আমরা মেনে নেব? সহ্য করব? জনস্বার্থেই তাদের রুখতে হবে।
তিনি বলেন, তাদের (বিএনপির) প্রস্তুতির তো কোনো শেষ নেই। গত ১৩ বছর ধরে প্রস্তুতিই নিচ্ছে। তারা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে নিতে আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করব।
এনএইচবি/আরএ/