পাতা ফাঁদে পা দেবে না আওয়ামী লীগ
বিএনপির পাতা ফাঁদে কোনোভাবেই পা দেবে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে দলীয় হাইকমান্ড থেকে মাঠ পর্যায়ে এ বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। বিএনপির চলমান আন্দোলন অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করবে আওয়ামী লীগ— এমনটাই বলছেন দলের শীর্ষ নেতারা। একই সঙ্গে তারা বলছেন, সভা-সমাবেশের নামে লাঠিসোঁটা নিয়ে বিএনপিকে কোনো ধরনের অরাজকতাও করতে দেওয়া হবে না। যেকোনো ধরনের নাশকতা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিহত করা হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে মরিয়া বিএনপিসহ তাদের মিত্র দলগুলো। এরইমধ্যে ঢাকাসহ ১০ বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এ সব সমাবেশে সরকার বিরোধী জনসমর্থন তুলে ধরার পাশাপাশি দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করাই মূল উদ্দেশ্য। বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশের কথা বললেও বিএনপির প্রধান টার্গেট রাজধানী ঢাকাকে ঘিরে। শুধুমাত্র ঢাকা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেই পুরো দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পাল্টে যাবে বলে মনে করে বিএনপিসহ অন্যান্য দল।
বিএনপির এই কর্মসূচির বিষয়ে অবগত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও। বিভিন্ন মহলে সহজ বার্তা রয়েছে বিএনপি ঢাকাতে বড় ধরনের অরাজকতা সৃষ্টি করতে পারে। সেজন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে বিএনপির সব কর্মসূচিতে।
সরকারের বিভিন্ন মহলে তথ্য রয়েছে, সরকারের বিরুদ্ধে দফায় দফায় আন্দোলনের হুমকি দিয়েও কিছু করতে পারেনি বিএনপি। তাই এবার তারা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে ভিন্ন পথ খুঁজতে পারে। বিএনপি চাইবে সরকারের সাফল্যকে ম্লান করতে মানুষের মধ্যে ভুল বার্তা পৌঁছে দিতে। গণসমাবেশ বা মিছিল-মিটিং করার নামে কোথাও বড় ধরনের নাশকতা বা হামলা করে আওয়ামী লীগের উপর দায় চাপাতে চায় বিএনপি এমন তথ্যও রয়েছে সরকারের কাছে।
এই পরিস্থিতিতে সরকারি দল আওয়ামী লীগের হাই কমান্ডের নির্দেশ কোনোভাবেই বিএনপির পাতা ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। আওয়ামী লীগকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। তবে ফাঁদে পা না দেওয়ার অর্থ এই না যে, বিএনপি হামলা করলে আওয়ামী লীগ মুখ বুঝে সহ্য করবে। দেশের কোথাও কোনো নাশকতা করলে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার কঠোর হবে— বলেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যে কোনো ধরনের হামলা প্রতিহত করতে মাঠে থাকবে। বিএনপিকে ফাঁকা মাঠে তাফালিং করতে দেবে না। তবে আওয়ামী লীগের হাই কমান্ডের নির্দেশ অযাচিতভাবে বিএনপির সভা সমাবেশে হামলা বা আক্রমণ করা যাবে না।
বিএনপির আন্দোলন নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বরাবরই বলে আসছেন আওয়ামী লীগ মাঠে আছে, থাকবে। তবে আওয়ামী লীগ কখনো আক্রমণ করবে না, যতক্ষণ না পর্যন্ত আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত হলে এর জবাব দিতে প্রস্তুত।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ সতর্ক অবস্থায় আছে, সক্রিয় আছে। সতর্ক অবস্থায় সংযমী হয়ে আমরা থাকব রাজপথে। আমরা রাজপথে ছিলাম, আন্দোলন করে রাজপথ থেকে ক্ষমতায় এসেছি। তাই আন্দোলনের ভয় আওয়ামী লীগকে দেখাবেন না।
বিএনপির আন্দোলনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, বিএনপিকে বিশ্বাস করা যায় না। তারা আগেও আগুন-সন্ত্রাস করেছে। মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। জান-মাল ধ্বংস করেছে। বিএনপি আবার আগুন-সন্ত্রাস করতে মাঠে নেমেছে। বিএনপি কোনো কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ করে না। জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা স্বার্থে তাদের আর সুযোগ দেওয়া যাবে না।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আওয়ামী লীগ মাঠে আছে, মাঠে থাকবে। নির্বাচনের আগে অনেক ষড়যন্ত্র হবে অনেক কিছুই ঘটাতে চাইবে। আওয়ামী লীগ কোনো ফাঁদে পা দেবে না। সরকারের সাফল্যকে ম্লান করতে ষড়যন্ত্রকারীরা অনেক কিছুই করতে চাইবে। এ বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হয়েছে। জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। তাই জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যা করার সেটা করবে সরকার।’
এনএইচবি/আরএ/