আবাসন পরিকল্পনায় স্বল্প আয়ের মানুষ বরাবরই উপেক্ষিত
সরকারের আবাসন পরিকল্পনায় স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। অথচ এই শ্রেণির মানুষই সংখ্যাগরিষ্ঠ। এ অবস্থায় আজ সোামবার (৩ অক্টোবর) সারাবিশ্বে পালিত হচ্ছে বিশ্ব বসতি দিবস।
সরকারের পক্ষ থেকে আবাসনের বিষয়টি দেখে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের মতো প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠান উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের আবাসনেই কাজ করে গেছে বলে অভিযোগ নগরবিদ ও পরিবেশবাদীদের।
উদহারণস্বরূপ রাজউক পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প ও উত্তর তৃতীয় পর্ব প্রকল্পে ৩ কাঠা, ৫ কাঠা, ৭.৫ কাঠা ও ১০ কাঠার প্লট দিয়েছে। এসব প্লট দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক নেতা, সামরিক-বেসামরিক আমলা, চিকিৎসকসহ, উচ্চ ও মধ্যবিত্তসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদের। অথচ ৩ থেকে ৪টি কিস্তিতে সামান্য কিছু টাকা পরিশোধ করে এসব জমির কাঠা কোটি টাকা করে বিক্রি করে দিয়েছেন বরাদ্দপ্রাপ্ত অনেকে।
অথচ স্বল্প আয়ের মানুষের জমি তো দূরের কথা ছোট আকারের ফ্ল্যাটের ব্যবস্থাও করা হয়নি। শুধু পূর্বাচল বা উত্তরা তৃতীয় পর্ব প্রকেল্পই নয়, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষসহ প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই এমন করেছে। তাদের পরিকল্পনায় স্বল্প আয়ের মানুষ কখনোই স্থান পায়নি। অথচ এসব বিত্তবান প্লট নেওয়ার ক্ষেত্রে হলফনামা দিয়েছে যে, তাদের মাথা গোঁজার কোনো ঠাঁই নেই।
পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, এসব প্রকল্প করাও হয়েছে পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংস করে। প্রত্যেকটি প্রকল্প শুরুর সময়ই পরিবেশবাদী ও নাগরিক সংগঠনগুলো এর বিরোধীতা করেছে। কিন্তু সরকার পক্ষ কর্ণপাত করেনি।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, জরুরি উন্নয়ন পরিকল্পনা অংশগ্রহণমূলক করতে হবে। উন্নয়ন পরিকল্পনায় ধনীদের প্লট-ফ্ল্যাট দেওয়া হচ্ছে। ধনীদের জন্য রাস্তা-ফ্লাইওভার তৈরি করা হচ্ছে। অথচ দরিদ্রদের জন্য কোন ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে না। রাজউকের উত্তরা, পূর্বাচলসহ বিভিন্ন প্রকল্পে মন্ত্রী, এমপি, নেতাসহ ধনী পেশাজীবীদের প্লট দেওয়া হয়েছে।
পবা চেয়ারম্যান বলেন, অথচ এই শহরে দরিদ্র মানুষের সংখ্যাই বেশি। তাদের জন্যও ছোট ছোট বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে পারত সরকার। তাহলেই উন্নয়নটা টেকসই হতো। এই বিষয়টি নীতিনির্ধারকরা মাথায় না নিলে ঢাকা শহরের বিপদ আরও বাড়বে।
এ প্রসঙ্গে রাজউকের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) পরিচালক আশরাফুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এবারের ড্যাপে রাজধানীর ৫৫টি স্থানে সাশ্রয়ী মূল্যের ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। প্রথমে চারটি এলাকায় পাইলট প্রকল্প হবে। এই চারটি এলাকা হলো-মোহাম্মদপুর, কেরানীগঞ্জ, মিরপুর ও শ্যামপুরের কদমতলী।
বিশ্ব বসতি দিবস উপলক্ষে নগর পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) এক পরিকল্পনা সংলাপেও পরিকল্পনাবিদরা স্বল্প আয়ের আবাসনকে নীতি প্রণোদনা দেওয়ার পাশাপাশি নাগরিক সুবিধা প্রদান করে সবার জন্য মানসম্মত আবাসন নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মত দেন।
তারা বলেন, ঢাকা মহানগরীর আবাসনের সংকট মূলত নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য অত্যন্ত তীব্র হওয়াতে আবাসন পরিকল্পনায় স্বল্প আয়ের আবাসনকে বিশেষ প্রণোদনা ও প্রাধান্য দেয়া উচিত। ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা ও কাঠামোগত পরিকল্পনায় প্রস্তাবিত কৌশল ও প্রণোদনা স্বল্প আয়ের আবাসনের জোগানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
এনএইচবি/এমএমএ/