রাজনৈতিক দলগুলোর অনাগ্রহেও থেমে নেই ইসির নির্বাচনী প্রস্তুতি
রাজনীতির মাঠ এখন সরগরম। একদিকে নির্বাচনী হাওয়া শুরু হয়েছে, অপরদিকে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। ঠিক সেই সময়েই আগামী নির্বাচনের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছে নির্বাচন কমিশন।
ইসির ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে ভোট গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেজন্য ভোটার তালিকা হালনাগাদ, সীমানা পুনঃনির্ধারণসহ নিজেদের কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে।
তবে নির্বাচন কমিশন নিজেদের ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ শুরু করলেও কমিশনের উপর অনাস্থা জানিয়ে নির্বাচনে যেতে নিজেদের অনাগ্রহের কথা জানিয়ে দিয়েছে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। বিএনপিসহ তাদের মিত্রদের জোট বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো ভোটে যেতে চায় না।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ইস্যুতে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল অনাস্থা জানিয়েছে। তারপরও ভোটে ইভিএম ব্যবহারে জোর দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তারা আগামী সংসদ নির্বাচনে অনধিক দেড়শ আসনে ইভিএম ব্যবহারের টার্গেটের কথা জানিয়েছে। নিজেদের চাওয়াকে বাস্তবে রূপ দিতে ইভিএম কেনার অনুমোদনও দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু ইসির এই সিদ্ধান্তকে একগুয়েমি বলে মনে করছে অনেক রাজনৈতিক দল। বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তো বটে, সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও মনে করছে, যাদের জন্য ভোটের আয়োজন তাদের সবার কথা উপেক্ষিত রেখেই নিজেদের মতো পথচলা শুরু করেছে কমিশন। এতেই তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত সাধারণ ভোটাররা।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছে, নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ মূল্যহীন। তাদের সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষমতা নেই। শুরু থেকেই নির্বাচন কমিশন স্ববিরোধী কথা বলছে।
একই অভিযোগে ইসিকে জনতার কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে বিএনপিসহ তাদের মিত্র দলগুলো। আওয়ামী লীগ ও তাদের ঘনিষ্ঠ শরিক দলগুলো ছাড়া সব রাজনৈতিক দল যখন ইসির কাজে আস্থাহীন তখনও নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় কমিশন।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশন যে সংলাপ করেছিল সেখানে নিবন্ধিত ৩৯টি দলের মধ্যে ২৯টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে। সেই সংলাপে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে ১২টি দল সরাসরি মতামত দিয়েছে। আর ইভিএম এর বিপক্ষে মতামত দিয়েছে ৬টি দল। শর্ত সাপেক্ষে ইভিএমের পক্ষে ১১টি দল।
অথচ নির্বাচন কমিশন বলছে, ১৭টি রাজনৈতিক দল ইভিএমের পক্ষে তাদের মতামত দিয়েছে। যা মোটেই সঠিক নয় বলে দাবি করছে রাজনৈতিক দলগুলো। তারা বলছে, নির্বাচন কমিশনের এই বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য।
নির্বাচন কমিশনের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ৩৯টি দলের মধ্যে ১২টি দল যদি সরাসরি ইভিএম এর পক্ষে মতামত দেয় বাকি ২৭টি দলই তাদের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে। অর্থাৎ এক তৃতীয়াংশ দলই ‘না’ অবস্থানে। তারপরও কর্ণপাত করছে না নির্বাচন কমিশন।
এত কিছুর পরেও নির্বাচন কমিশন যখন ভোটের পথে তখন সেটাকে সন্দেহের চোখে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। এবিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও তাদের অতি ঘনিষ্ঠ শরিক ছাড়া সবাই ইভিএম এর বিপক্ষে মতামত দিয়েছে। শুধু তাই না বিশিষ্টজনেরাও ইভিএম এর বিপক্ষে মতামত দিয়েছে। সবার মতামতকে উপেক্ষা করে নির্বাচন কমিশন কার স্বার্থে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করল? এখানে নিরপেক্ষ নির্বাচনের সন্দেহটা বাড়িয়ে দিল।’
তিনি বলেন, রোডম্যাপ বা ইভিএম মেশিন কেনার আগে তাদের নিজেদের প্রতি ভোটার ও রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা ফেরাতে উদ্যোগী হওয়া জরুরি।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ব্রতির সিইও শারমিন মুরশীদ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, নির্বাচন কমিশন দেড়শ আসনে ইভিএম ব্যবহারের কথা জানিয়েছে। এটা অযৌক্তিক। এটা যুক্তিসঙ্গত একটা সিদ্ধান্ত নয়। এই সিদ্ধান্তটা সন্দেহের জায়গাটা আরও সুদৃঢ় করবে। মানুষ এটাকে গ্রহণ করতে চাইবে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনী ট্রেন দলমতের মতামতের বিপক্ষে। এ কারণে কমিশনের জন্য কঠিন কাজ হবে গন্তব্যে পৌঁছানো। রোডম্যাপ বা নির্বাচনী প্রস্তুতির আগে নিজেদের নিরপেক্ষতা প্রমাণের ওপর জোর দিলেন বিশ্লেষকরা।
এনএইচবি/এসএন