সংগ্রহ হচ্ছে আমলনামা
আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন না অনেক মন্ত্রী-এমপি
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ পর্যায়ে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সম্ভাব্য প্রার্থীদের সম্পর্কে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের পাশাপাশি বর্তমান সংসদে দলীয় সদস্যদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এবং আওয়ামী লীগের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এই তথ্য সংগ্রহের কাজ করা হচ্ছে।
নিজ নিজ এলাকায় সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জরিপ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় সংসদ সদস্যদের উপর চালানো জরিপের একাধিক প্রতিবেদন দলীয় হাই কমান্ডের টেবিলে পৌঁছেছে। নির্বাচনের আগে আগামী কয়েক মাসে আরও কয়েক দফা নেতাদের সম্পর্কে মাঠ জরিপ করবে সরকারি দল। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ সব তথ্য জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে সরকারি দল আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য নানা কারণে মনোনয়ন পাবেন না। যে সব সংসদ সদস্য বা মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী মাঠ জরিপে লেটার মার্ক পাবেন তাদের হাতেই তুলে দেওয়া হবে নৌকার বৈঠা।
সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনে অনেকগুলো বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে জরিপ চালানো হচ্ছে। বিশেষ করে যেসকল সংসদ সদস্য নিজ নির্বাচনী এলাকায় নিজস্ব বলয় তৈরি করতে গিয়ে দলের ভেতর বিভাজন সৃষ্টি করেছেন তাদের কপাল পুড়তে পারে। যেসকল নেতা বা সংসদ সদস্য দলের বিপক্ষে নেতিবাচক কথা-বার্তা বলে দলকে বিব্রত করেছেন, দলের সিদ্ধান্তে বাইরে গিয়ে স্থানীয় রাজনীতিতে গ্রুপিং করেছেন তাদের বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব।
সূত্র জানায়, শুধু দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়া কিংবা গ্রুপিং নয়, যাদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তাদের কাউকেই আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেবে না আওয়ামী লীগ। এর বাইরে যেসকল সংসদ সদস্য বা মন্ত্রীরা বয়োবৃদ্ধ তাদের মনোনয়ন পাওয়া বিষয়টিও অনিশ্চিত।
আগামী নির্বাচনে যে প্রার্থী মনোনয়নে বড় পরিবর্তন হবে তার একটা আভাসও পাওয়া গেছে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাম্প্রতিক একটি বক্তব্যে। ভারত সফর শেষে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘নির্বাচনে নমিনেশনে পরিবর্তন এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। ক্ষেত্র-মত অবশ্যই আমরা যাচাই করে দেখব কার জেতার সম্ভাবনা আছে কার নেই। অথবা বেশ কিছু নিবেদিত প্রাণকর্মী আছে যাদের বয়স হয়ে গেছে, কষ্ট হচ্ছে, তাদের আর কষ্ট দিতে চাই না।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি তার এই বার্তায় তৃণমূল পর্যায়ে একটি স্বচ্ছ ধারণা দিয়েছেন আগামী নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই ও মনোনয়নের ব্যাপারে। সভাপতির এই বার্তায় অন্তত শতাধিক সংসদ সদস্য বাতিলের খাতায় পড়ে যাবেন বলে ধারণা করছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।
যেসকল সংসদ সদস্য একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরও নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের বোঝা টানতে চায় না দলীয় হাই কমান্ড। ওই সংসদীয় আসনে কম পরিচিত কিন্তু মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য এমন ব্যক্তি খুঁজে বের করে তাদের হাতেই নৌকার টিকিট দিতে চায় দলটি। এজন্য এমপিদের কাজের মূল্যায়ন যাচাই বাছাই করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
বর্তমান একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগের ২৫৯ জন সংসদ সদস্য রয়েছে। সংরক্ষিত আসনে রয়েছেন আরও ৪৩ জন সংসদ সদস্য। বর্তমান সংসদে আওয়ামী লীগের মোট সংসদ সদস্য রয়েছেন মোট ৩০২ জন। এদের মধ্যে একটা বড় অংশ আছেন যারা বয়স্ক। সঙ্গত কারণেই তাদের বাদ যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, বেশ কয়েকজন মন্ত্রী এমপি নানা বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে দল ও সরকারকে বিব্রত করেছেন। বিশেষ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, প্রাথমিক গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো ডা. মুরাদ হাসান, রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী, নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল, পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবিরের নামে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পংকজ নাথকে ইতোমধ্যে দলের সকল পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ঝালকাঠি-১ আসনের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের মালিকানাধীন হোটেল রেইন ট্রি নিয়ে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। এরকম আরও যারা নানা অভিযোগ বিশেষ করে টেন্ডার, চাঁদাবাজি, মাদক মামলা, নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে। আগামী নির্বাচনে তাদেরও মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলে আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে।
আগামী নির্বাচনে কেমন প্রার্থী চায় আওয়ামী লীগ, মনোনয়নের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘একেবারে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতাকে প্রার্থী করতে হবে। অবশ্যই তাকে সৎ নির্ভীক হতে হবে, এমনতর প্রার্থীকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে। যাদের বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে এবং যে বিষয়ে অভিযোগ সে সব কিছুর উপর একটি সার্ভে চলছে। বার বার মাঠ জরিপ করে আমলনামা নেওয়া হচ্ছে। সেই আমলনামা অনুসারে কোনো নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে কেউ রেহাই পাবে না, কেউ না। সে যত বড় নেতাই হোক, আর যত বড় যেই হোক, কেউ রেহাই পাবে না।’
একই কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। তিনি ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘অবশ্যই জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেবেন আমাদের নেত্রী। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তাকে তো আর প্রার্থী করবেন না।’
এনএইচবি/আরএ/