সরকারের নানা উদ্যোগেও কমছে না চালের দাম
বর্তমানে সরকারের কাছে চালের মজুদ আছে প্রায় ১৫ লাখ টন। মজুদ আরও বাড়াতে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানিরও অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। পাইকারি বাজারেও চালের যথেষ্ট সরবরাহ রয়েছে।
চালের বাজারের অস্থিরতা দূর করতে সরকারের নানা উদ্যোগও চলমান। তারপরও খুচরা বাজারে চালের দাম কমছে না কিছুতেই। বরং ঈদের পর থেকে চালের দাম বাড়তির দিকে।
পাইকারি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ— সরকার কখন কাকে কিভাবে চাল আমদানির সুযোগ দিচ্ছে যে, এর প্রভাব চলের বাজারে পড়ছে না। খোঁজ নিয়েও আমদানিকারকদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মিলেও দাম কমছে না। ঈদের পরে এক পয়সাও কমেনি। বরং বেড়েছে। তাই বেশি দামেই চাল কিনতে হচ্ছে।
কৃষিমার্কেটসহ রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারে সরেজমিন ঘুরে এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে এ সব তথ্য জানা গেছে।
রাজধানীর চালের পাইকারি বাজার মোহাম্মদপুর থানার কৃষিমার্কেট। গত রবিবার ও সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় দোকানে চালের সরবরাহ আগের মতো। কিন্তু দাম কমেনি। বরং ঈদের চেয়ে একটু বেশি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের পর আমদানিকৃত চাল বাজারে আসার কথা থাকলেও তা আসেনি।
কৃষিমার্কেটের মেসার্স সাহারা এন্টারপ্রাইজের শিমুল ঢাকাপ্রকাশ’কে জানান, ‘আগে যাই হোক, আশা করেছিলাম আমদানিকৃত চাল ঈদের পর আসবে। কিন্তু এর কোনো লক্ষণ দেখছি না। কারা আমদানি করছে তাও জানতে পারছি না। তাই দামও কমছে না। মিনিকেট ৬৬ থেকে ৭০ টাকা কেজি, ২৮ চাল ৫২ থেকে ৫৪ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। আর মোটা চাল পাওয়া যায় না। সেই চাল খুচরা বাজারে কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
শাপলা রাইস এজেন্সিসহ অন্যান্য চাল ব্যবসায়ীরাও বলছেন, ঈদের পর চালের দাম কমেনি।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির মো. আব্দুল আওয়ালও ঢাকাপ্রকাশ’কে জানান, ‘ঈদের পর এক পয়সাও কমেনি চালের দাম। মিনিকেট চাল প্রতি বস্তা ৩৪০০ থেকে ৩৫০০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। ২৮ চাল ৫২ থেকে ৫৪ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। আমদানি করা চাল বাজারে এলে দাম কমতে পারে। কিন্তু ঈদের পরও কোনো চাল আসেনি। শুধু শুনছি আসবে, কিন্তু এখনো আসছে না। কবে আসবে তাও জানি না।'
একই বাজারের বরিশাল রাইস এজেন্সিসহ অন্যান্য পাইকারি চাল ব্যবসায়ীরাও বলছেন, আমদানি করা চাল বাজারে না আসা পর্যন্ত দাম কমবে না।
বাবুবাজারের পাইকারি চাল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নিজাম উদ্দিন ঢাকাপ্রকাশ’কে বলেন, ‘আমদানি করা চাল এখনও আমাদের কাছে আসেনি। আমদানি করা চাল আসলেই দাম কমে যাবে। তবে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানীকৃত চালের দাম স্থানীয় বাজারে কতটা কমবে তা বলা বেশ কঠিন।'
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু ভারতের কারণে দাম কমছে না। কারণ ভারতে চালের দাম বেশি। এ কারণে আমদানিকারকরাও হয়ত চাল আনছেন না। তবে সরকার সরাসরি আমদানি করলে কমতে পারে চালের দাম।’
উল্লেখ্য, এবার বোরো মৌসুমেও চালের দাম না কমায় বাজার অস্থির হয়ে উঠে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সরকার শেষ পর্যন্ত বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির সুযোগ দেয়।
২৬ দিনে ১০ লাখ টন আমদানির অনুমোদন
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ জুন থেকে সোমবার (২৫ জুলাই) পর্যন্ত ৩৯১ জন আমদানিকারককে ১০ লাখ ১০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। তারপরও দেশে দেশে চাল আসছে না। আমদানির শর্তে বলা হয়েছে, অনুমোদনের পর থেকে এক মাসের মধ্যে চাল আসতে হবে। আমদানিকৃত বস্তায় এসব চাল আনতে হবে। কিন্তু চাল ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বাজারে এর কোনো প্রভাব দেখা যাচ্ছে না।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২৫ জুলাই ৫টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ১০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর আগে ২০ জুলাই ৫৭টি প্রতিষ্ঠানকে ৯০ হাজার টন, ১৩ জুলাই ৪৭টি প্রতিষ্ঠানকে ৭০ হাজার টন, ৭ জুলাই ৬২ জন আমদানিকারককে এক লাখ ৮২ হাজার টন, ৪ জুলাই ১২৫ জনকে দুই লাখ ৪৬ হাজার টন ও ৩০ জুন ৯৫ জন আমদানিকারককে চার লাখ ৯ হাজার টন চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। চাল আমদানির জন্য এক মাস সময় বেধে দিলেও তারা চাল দেশে আনতে পারছে না।
অবশ্য অন্য একটি সূত্র জানায়, নয় মাস পর গত শনিবার (২৩ জুলাই) ভারত থেকে হিলিবন্দর দিয়ে তিনটি ট্রাকে করে মাত্র ১০৫ টন চাল দেশে এসেছে। আর এখন পর্যন্ত প্রায় চার হাজার ৪৬০ টন চাল আমদানি হয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানায়, ২৫ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্নভাবে খাদ্য সংগ্রহ করা হয়েছে ১৬ লাখ ৯২ হাজার টন। বর্তমানে চালের মজুদ ১৪ লাখ ৫২ হাজার টন, ধান এক লাখ ২৫ হাজার টন ও গমের মজুদ এক লাখ ৬০ হাজার টন।
এদিকে আমদানির অনুমোদন দেওয়ার পরও দেশের বাজারে চাল আসছে না কেন? জানতে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকাপ্রকাশ’কে বলেন, 'এটি মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। তাই কিছু জানতে হলে সেখানে যোগাযোগ করেন।’
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মজিবর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকাপ্রকাশ’কে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের সার্বিক ব্যাপারে জানতে চাইলে সচিবের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এনএইচবি/আরএ/