ব্যয় কমাতে সরকারের উদ্যোগ যেভাবে সফল হতে পারে
বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও বিশ্বব্যাপী সংকটের মধ্যে ব্যয় কমাতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার বিদ্যুৎ সাশ্রয়, জরুরি কাজ ছাড়া অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ করাসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে আট দফা নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু ব্যয় কমাতে সরকারের এসব উদ্যোগ কতোটা সফল হবে— এই নিয়ে নানামহলে নানা হিসাব-নিকাষ চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারপ্রধান যখন বলেছেন, অবশ্যই তা বাস্তবায়ন হতে হবে। প্রয়োজনে বাজেট কমিয়ে দিতে হবে। একই সঙ্গে কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে। তাহলেই ব্যয় কমাতে সরকারের উদ্যোগ সফল হবে।
সরকারের ব্যয় কমানোর উদ্যোগকে কিভাবে দেখছেন জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর ঢাকাপ্রকাশ’কে বলেন, ‘ব্যয় কমাতে বিভিন্ন উদ্যোগের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে— এটা ভালো উদ্যোগ। তবে লোডশেডিংয়ের চেয়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো বেশি ইতিবাচক। কারণ লোডশেডিংয়ের ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। শিল্প কারখানায়ও নতুন করে বিদ্যুৎ সরবরাহের আয়োজন করতে হবে। জেনারেটরের ব্যবহার বাড়াতে হবে। তাই এটা অর্থনৈতিকভাবে তেমন ইতিবাচক হবে না। এরচেয়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ালে বেশি লাভজনক হবে। যার যতটুকু দরকার সে ততোটুকু ব্যবহার করবে। যার দরকার হবে না তাকে বাড়তি টাকা পরিশোধ করতে হবে না। এতে বিদ্যুতের ব্যবহারও কমে যাবে।
সরকারি সব দপ্তরে বিদ্যুতের ২৫ শতাংশ ব্যবহার কমানোর নির্দেশনা দেওয়ার পরও দেখা যাচ্ছে অনেক জায়গায় সেটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তাহলে ২৫ শতাংশ বিদ্যুৎ কিভাবে কার্যকর হবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘সরকারপ্রধান যা বলেন, তা কার্যকর করা সরকারি কর্মকর্তাদের নৈতিক দায়িত্ব। তাই সরকারকে শক্তভাবে বিদ্যুতের ব্যবহার মনিটরিং করতে হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিসভা থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে বাজেট কমিয়ে দিতে হবে। তাহলে যে যার মতো আর বিদ্যুৎ ও এসির ব্যবহার করতে পাববে না। কমিয়ে দেবে।
সরকারের সাবেক সচিব ও কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি ড. গোলাম রহমান বলেছেন, ‘ব্যয় কমাতে সরকারপ্রধান যখন উদ্যোগ নিয়েছেন তা সফল হতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা জারিও করা হয়েছে। কাজেই সব মন্ত্রণালয়কেই তা মানতে হবে। অফিস সময়ে আগের মতো এসি, বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ নেই। সরকারপ্রধান ভেবে চিন্তে উদ্যোগ নিয়েছেন, নির্দেশনাও দিয়েছেন। তবে কৃষি ও শিল্প কারখানায় বিদ্যুতের ব্যবহারে খুবই সচেতনা অবলম্বন করতে হবে। কারণ কৃষির ক্ষতি হলে সমস্যা। উৎপাদন কমে যাবে। আবার শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হলেও সমস্যা। সরবরাহ ও রপ্তানি কমে যাবে। তাই সংশ্লিষ্ট সবার সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে কৃষি ও শিল্পের ক্ষেত্রে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারপ্রধানের এমন উদ্যোগ সফল হোক এটা আমিও চাই। আশা করি খুব অল্প সময়ে এই সংকট কেটে যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ সফল হবে।’
উল্লেখ্য, গত বুধবার (২০ জুলাই) ব্যয় সাশ্রয়ে কার্যকর কর্মপন্থা নিরূপণের লক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সিনিয়র সচিবদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ব্যয় কমাতে আট দফা নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস। তিনি রাজস্ব ব্যয় সংকোচন, উন্নয়ন ব্যয়ের সর্বোত্তম ব্যবহার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বৃদ্ধি, নিত্যপণ্যের মূল্য সহনশীল পর্যায়ে রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সব সচিবকে অনুরোধ জানান।
কোভিড পরবর্তী অর্থনৈতিক অভিঘাত এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী সংকট দেখা দিয়েছে। তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। রপ্তানির তুলনায় আমদানি ব্যয় বাড়ছে। জ্বালানিসহ নিত্যপণ্য কেনার জন্য বাড়ছে ব্যয়। আগের চেয়ে রেমিটেন্সও কমে যাচ্ছে। তাই ব্যয় মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে প্রায় দিন টাকার অবমূল্যায়ন করে ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে। ডলারের দাম বাড়তে বাড়তে ৯৩ টাকা ৯৫ পয়সা হয়ে গেছে। খোলা মার্কেটে আরও বেশি। কয়েক মাসের মধ্যে টাকার অবমূল্যায়ন ১০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। আর রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন থেকে ৪০ বিলিয়নে নেমে গেছে।
এনএইচবি/আরএ/