করোনা
এখনই সতর্ক না হলে দিতে হতে পারে চড়া মূল্য
বৈশ্বিক মহামারি করোনা থেকে মুক্তি মিলছে না। মরণব্যাধি এ ভাইরাস আবারও চোখ রাঙাচ্ছে। দ্রুত বেগে বাড়ছে সংক্রমণ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে সংক্রমণের হার নতুন করে ভাবিয়ে তুলবে।
অপরদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই সতর্ক না হলে চড়া মূল্য দিতে হতে পারে। তবে তারা স্বস্তির কথাও জানিয়েছেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বর্তমান করোনার যে ধরণে বাংলাদেশের মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে এই ধরণ পূর্বের ওমিক্রন বা ডেল্টার মতো ভয়ংকর হবে না।
গত কয়েক দিনে সারাদেশেই করোনা সংক্রমণ রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। সামনে ঈদ উল আজহা। মুসলিম ধর্মের সবচাইতে বড় এই উৎসবে মানুষের সমাগম সর্বত্র বেড়ে যাবে। বিশেষ করে রাজধানী থেকে জেলা শহরগুলোতে মানুষের চলাফেরা বাড়বে কয়েকগুণ। তাছাড়া পশুর হাটগুলোতেও মানুষের উপস্থিতি ব্যাপক হারে বেড়ে যাবে। তাই বিশ্লেষকরা বলছেন, এখনই সরকারকে এ বিষয়ে কঠোর হতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১ জুলাই থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত করোনা সংক্রমণ হার দেখলে সহজেই অনুমান করা যাবে কতটা দ্রুত বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। শুধু আক্রান্ত নয়, মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে গত ৪ জুলাই আর ৫ জুলাই মারা গেছেন সাত জন। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শনাক্তের সংখ্যাও।
গত কয়েক দিনে যে হার শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে তাতে বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন এটি বাংলাদেশে করোনার পঞ্চম ঢেউ। চলতি (জুলাই) মাসের শেষ দিকে এটি নিম্নমুখী হতে পারে।
গত ১ জুলাই করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল এক হাজার ৮৯৭ জন। আক্রান্তের হার ছিল ১৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। ওই দিন পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। পরদিন ২ জুলাই সংক্রমণের হার ছিল ১৩ দশমিক ২২ শতাংশ। অর্থাৎ ২ জুলাই এক হাজার ১০৫ জন সংক্রমিত হয়। সংক্রমণের এই ধারা বাড়তেই থাকে। ৩ জুলাই ১৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। সেদিন মোট সংক্রমিত হয় এক হাজার ৯০২ জন, মারা যান দুই জন। আর ৪ জুলাই সংক্রমণের হার ১৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। মৃত্যুও ছিল সর্বোচ্চ। সবশেষ ৫ জুলাই করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন এক হাজার ৮৯৭ জন। টানা চারদিন পর দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দুই হাজারের নিচে এসেছে। মহামারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৯ লাখ ৭৫ হাজার ৫৮২ জন।
করোনার বর্তমান ঢেউ কোথায় যেয়ে থামতে পারে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য, করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য, দেশের অন্যতম শীর্ষ ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশ’কে বলেন, আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে এই ওয়েবটা খুব বেশি দিন স্থায়ী হবে না। এটা আস্তে আস্তে কমে যাবে কারণ অনেকটা ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। এটার কার্যকারিতা আছে তো। ঈদের জন্য একটা ফিডব্যাক হবে। এটা ওমিক্রনই। আমার মনে হচ্ছে জুলাইয়ে দ্বিতীয় সপ্তাহে নিচে নেমে যাবে। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ বাড়তে পারে নাও পারে।
সংক্রমণ রোধে এই বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দেন আমাদের ছোট্ট বাবুদের যেহেতু ভ্যাকসিন দেওয়া হয়নি তাই তাদের সাবধানে রাখতে হবে। সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। লডকাউনের পর্যায়ে যাবে না বলে মনে হয়। সিলেটে বন্যা পরিবর্তী সংক্রমণটা বাড়তে পারে। এজন্য সেখানে সরকারের আরও একটু কঠোর হতে হবে।
আইইডিসিআর-এর সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন ঢাকাপ্রকাশ’কে বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত অভিমত করোনার বর্তমান ঢেউ চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। এটি আমাদের পঞ্চম ঢেউ। করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ঠেকাতে সরকারের পাশাপাশি সামাজিক উদ্যোগ বাড়াতে হবে। যারা এখনও ভ্যাকসিন নেয়নি তাদের খুঁজে বের করে ভ্যাকসিন দিতে হবে।’
যদি সবাই সতর্ক ও সচেতন না হই তাহলে ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন সংক্রমণের হারটা দুই হাজারের মধ্যে স্ট্যাবল রয়েছে। তাই ধারণা করা হচ্ছে এরপর গ্রাফটা নিচে নেমে যেতে পারে। তবে মানুষ যদি মাস্ক না পরে বা স্বাস্থ্যবিধি না মানে তাহলে বিপদ বেড়ে যেতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত যেটা মনে হচ্ছে ডেল্টার মতো হবে না। ঈদের পর সংক্রমণটা বাড়তে পারে বলে মনে হচ্ছে।
এনএইচবি/আরএ/