এডিটর’স টক অনুষ্ঠানে শ ম রেজাউল করিম
খালেদা জিয়া ইস্যুতে তারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়
বর্তমান সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ.ম রেজাউল করিম এমপি সম্প্রতি এসেছিলেন ঢাকাপ্রকাশ কার্যালয়ে। এ সময় সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকাপ্রকাশ-এর প্রধান সম্পাদক মোস্তফা কামাল। কথোপকথনের শেষ পর্বটি তুলে ধরা হলো।
মোস্তফা কামাল: খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার ব্যাপারে বিএনপি থেকে বলা হচ্ছে, তাকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। এটা কোনো আইনি প্রক্রিয়া না বরং রাজনৈতিক। আপনি কি মনে করেন?
শ.ম রেজাউল করিম: দেখুন দুই পক্ষের দুই রকম কথা। আওয়ামী লীগের মুখপাত্র হিসাবে যারা কথা বলছেন, তারা বলছেন খালেদা জিয়া দেশের কোন 'সাবজেক্ট' না। যারা দেশেকে অস্থিতিশীল করতে চায়,অসুস্থ একজন প্রবীণ নারীকে নিয়ে,এরা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চায়। আবার বিএনপি'র সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য গয়েশ্বর রায়; তিনি বলছেন, আমাদের আসল আন্দোলন হচ্ছে সরকার পতনের আন্দোলন। আবার দেখলাম, আমানুল্লাহ আমান সাহেব বললেন, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির ভেতরেই হাসিনাকে টেনে হিঁচড়ে নামাবেন। ভাষাটা হলো হাসিনাকে টেনে হিঁচড়ে নামানো হবে। দেশের প্রধানমন্ত্রীকে যদি না পছন্দ হয় তার, তিনি কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কন্যা এবং এ দেশের প্রবীণ একজন রাজনীতিবিদ । এই জাতীয় ভাষাটা ব্যবহার করছেন তারা । তারা চাচ্ছেন খালেদা জিয়াকে ঘিরে একটা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারেন কিনা।
আমি একটা সাধারণ কথা বলি। বেগম খালেদা জিয়া যখন গভঃমেন্টের কাস্টডিতে ছিলেন,বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে,তখন কিন্তু প্রতিদিন হাসপাতালের একটা টিম প্রেসকে ব্রিফ করলেন,খালেদা জিয়ার আজকের শারীরিক অবস্থা এই, এই অবস্থা,এই অবনতি এই উন্নতি আছে। যখন তিনি মুক্ত হয়ে গেলেন, তার সাজা স্থগিত হয়ে গেল, তখন তিনি নিজের মত করে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন । সেখানে তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন নিজের পছন্দের ডাক্তারদের দ্বারা। মাঝে একটা ব্রিফিং হলো ছয়জন ডাক্তারের। এর একজনো এভারকেয়ার হাসপাতালের ডাক্তার না । প্রশ্নটা উঠলো তাহলে যে,হাসপাতালে আছেন সেখানকার ডাক্তাররা কেন বলতেছেন না খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এইরকম। যাদের দিয়ে বলালেন,ড্যাবের প্রধান প্রফেসর জাহিদ সাহেবসহ ড্যাবের ডক্টররা । এখন উনাদের কথাও তো মানুষ বিশ্বাস করছে না যে,ওনারা বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কথা যা বলছেন,এটা উনারা জানলেন কোথা থেকে?
ট্রিটমেন্টের যে টিম, তারা তো কোন কথা বলছে না । আমি মনে করি,বেগম খালেদা জিয়াকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে মহানুভবতা দেখিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন, নিজের মত খাওয়া-দাওয়া, নিজের মত চলাফেরা, নিজের মতো ডাক্তার দেখাবার সুযোগ করে দিয়েছেন এবং এই শর্তে উনি রাজি হয়েই কিন্তু মুক্তি পেয়ে বাসায় গেছেন। উনি যদি সেই সময় বলতেন যে, আমি কোন শর্ত সাপেক্ষে যাব না। তাকে ক্ষমা করতে পারত অথবা অন্য কিছু হতে পারত। উনি কিন্তু শর্ত যখন মেনে গেছেন তখন সেই শর্তের বাইরে উনার যাওয়ারতো সুযোগ নাই । সেই শর্তেই আছে, এই দেশের ভেতরে চিকিৎসা নেবেন। প্রথম ছিল নির্ধারিত ডাক্তার । তারপর উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে তার পছন্দের ডাক্তার। কিন্তু বিদেশে যেতে পারবেন না। এটাতো তিনি রাজী হয়েছেন। কাজেই এই ক্ষেত্রে এটা নিয়ে নতুন কিছু করার নাই। উনারা যদি মনে করেন যে, দেশের সর্বোচ্চ আদালতে কিছু পান নাই তিনি রাষ্ট্রপতির মহানুভবতার জন্য আশ্রয় নিতে পারেন। সরকারের কাছে ৪০১ দণ্ড মওকুফের জন্য আবেদন করতে পারেন। কিন্তু তা কিন্তু তারা করছেন না। আবার বলছেন বিদেশে যেতে দিতে হবে। এখন যে সকল মামলাগুলোয় সাজা হয় নাই, বিচারাধীন মামলা সেখানে কিন্তু উনি জামিনে আছেন । জামিনের মামলাগুলোর জন্য কোর্ট থেকে অনুমতি নিতে হবে । কিন্তু কোর্ট থেকেও তো তিনি অনুমতি নেন নাই অথবা ঐ মামলাগুলোকে স্থগিত করাতে হবে,সেটা কিন্তু করা হয় নাই। অনেক জায়গায় কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার প্রক্রিয়াটা আইনগতভাবেই আটকে আছে ।
মোস্তফা কামাল: আপনি কি মনে করেন, খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা যে ব্যাখ্যাটা দিচ্ছেন, বিএনপির রাজনৈতিক নেতারা এবং আইনজীবীদের কোনো ভুল আছে কিনা ? আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাকে মুক্ত করা বা এক্ষেত্রে তাদের ভূমিকাটা কি?
শ.ম রেজাউল করিম: বেগম খালেদা জিয়ার প্রধান আইনজীবী ছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন । তিনি আমাদের দেশের ক্রিমিনাল ল প্রাকটিসের টপ মোস্ট সিনিয়র। উনি কিন্তু বলছিলেন আইনি লড়াই করে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা অসম্ভব। এখন এটার আমাদের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা হচ্ছে,উনি এতো ভালো উকিল, উনি মামলার রেকর্ড পত্র পড়ে শুনে বুঝছেন যে, মামলাটা এত খারাপ যে,উনাকে আইনি প্রক্রিয়ায় রিলিজ করানো অসম্ভব। এখন বেগম খালেদা জিয়ার হয়ে যারা বক্তব্য দিচ্ছেন আইনের কথা বলছেন যেমন- মির্জা ফখরুল ইসলাম, গয়েশ্বর রায়,মির্জা আব্বাস, রুহুল কবির রিজভী; এরা কিন্তু কেউ আইনজীবী না। এরা যেভাবে যা ব্যাখ্যা দিচছেন, ওরা বলছে আইন কোন বাধা না। আর সরকার বলছে আইনি বাধা। কারণ উনি আইনের চুক্তি করে গেছেন যে ‘আমি বিদেশে যাব না । তাহলে তুমি আইনে বাধা না কেন? তুমিতো রাজি হইয়া গেছ এটায়। ‘এর জবাবে বিএনপি নেতাদের কাছে জানতে চাইলে তারা ইনিয়ে-বিনিয়ে অন্যদিকে চলে যায় ।
মোস্তফা কামাল: তারা বলছেন এখানেতো চিকিৎসাই নাই, উনার এখন যে সমস্যা ।
শ.ম রেজাউল করিম: যারা বললেন তারাতো বেগম খালেদা জিয়ার ডাক্তারই না। এভারকেয়ারে যে চিকিৎসা হচ্ছে সেই ট্রিটমেন্ট টিমতো এই কথা বলে নাই। উনারা বললেন কিভাবে? উনারা কি তার ডাক্তার ? উনারা তার পলিটিক্যাল সহকর্মী, ড্যাব নামক যে অর্গানাইজেশনটা আছে সেটার প্রতিনিধি। এভারকেয়ারের সেই টিম তো এখন পর্যন্ত বাইরে কোন বক্তব্য দেয়নি। আমি এটা বিএনপি নেতাদেরকে জিজ্ঞেস করেছি। they could not satisfy me!
মোস্তফা কামাল: অন্য প্রসঙ্গে আসি। স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখেছি যে, এই নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে যারা নির্বাচন করেছেন বিভিন্ন জায়গায় তাদের এক ধরনের ভরাডুবি হয়েছে এবং বিদ্রোহী প্রার্থীরাই বেশি জয়ী হয়েছেন। এটাকে এই লেভেলে অর্থাৎ নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা এটা কি যথাযথ বলে আপনি মনে করেন? সরকারের জনপ্রিয়তা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে তার কোনো রিফ্লেকশন আছে কিনা?
শ.ম রেজাউল করিম: দেখুন আমি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের একজন ক্ষুদ্র কর্মী। আমার দলের যে সিদ্ধান্ত একেবারে গ্রামীণ রুট পর্যায়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে বা যার যার রাজনৈতিক প্রতীক নিয়ে নির্বাচন হবে। আমি যেহেতু ওই দল করি, দলের যে সিদ্ধান্ত সেই সিদ্ধান্তের সাথে আমি একমত। তবে এবার যে ঘটনাগুলো ঘটেছে এই ক্ষেত্রে আমার একটা এনালাইসিস; বিএনপি নির্বাচনে প্রতীক নিয়ে আসে নাই কিন্তু প্রতীক ছাড়া আসছে । মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, যারা নির্বাচন করতে চান করতে পারেন,তবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নয় অর্থাৎ তারা টেকনিক্যালি নির্বাচনে আছে। সেই জায়গায় বিএনপি যেখানে দেখছে যে নৌকা প্রতীককে হারাতে হবে,তো নৌকার বিপক্ষে যদি আওয়ামীলীগ ঘরানার একজন নমিনেশন পায় নাই,স্বতন্ত্র হয় তাকে ওরা বলল ঠিক আছে ওইটাকেই ভোট দিয়ে দাও । দেখাবে যে নৌকাকে হারিয়েছ। আবার অনেক জায়গায় নৌকার মনোনয়ন এমন ব্যক্তিদের নামে আসছে, যে ব্যক্তিরা জনপ্রিয় না। কিন্তু কোনো না কোনোভাবে আসছে। ফলে তারা হতে পারেন নাই । এরকম কিছু অনাকাঙ্খিত প্রক্রিয়ায় হয়েছে । আমার কাছে মনে হয়েছে আরও সুন্দরভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন ।
মোস্তফা কামাল: এবার একটু আপনার নিজের মন্ত্রণালয় নিয়ে জানতে চাই। এর আগে তো আমরা দেখেছি, আপনি অনেক বিপ্লবী কাজ করেছিলেন । সেটা দরকার ছিল এবং মানুষ আশায় বুক বেধে ছিল যে, আপনি যে কাজগুলো করছিলেন সেটা যাদের হাত অনেক লম্বা তাদের হাত ছেঁটে দেয়ার এক ধরনের প্রবণতা আমরা দেখেছি । যেটা আসলে একজন গণতান্ত্রিক সরকারের মন্ত্রীর হিসাবে সেটাই তার আসল দায়িত্ব ছিল । পরে আমরা আপনাকে অন্য একটি মন্ত্রণালয়ে দেখলাম । আপনার এই বর্তমান মন্ত্রণালয়ে আপনি সন্তুষ্ট কিনা। আপনার আগের কাজ এবং আপনার আগে যিনি মন্ত্রী ছিলেন সেই কাজগুলো অব্যাহত রেখেছেন কিনা?
শ.ম রেজাউল করিম: দেখুন, আমি বেসিক্যালি একজন আইনজীবী। সুপ্রিম কোর্টের একজন সিনিয়র ল-ইয়ার। আমার কৃতজ্ঞতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যে, আমার মতো একটা সাধারণ লোককে তিনি টেনে এনে এমপি করেছেন, মন্ত্রী করেছেন। তিনি তো আমাকে মন্ত্রীত্ব নাও দিতে পারতেন বা উপমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী করতে পারতেন। তিনি যখন যেখানে যে দায়িত্ব দেন সেটাই করি। এই মন্ত্রণালয়ে আমাকে পাঠিয়েছে ,আমার ধারণা আমাকে নতুন কাজগুলো শেখার সুযোগ করে দিয়েছেন। আমার একটা অভিষ্ট লক্ষ্য আছে যখন যেখানে যে দায়িত্ব নিয়ে থাকি সেটা যেন স্বচ্ছতার সঙ্গে,আন্তরিকতার সঙ্গে,নিষ্ঠার সঙ্গে,দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পালন করতে পারি। সেভাবেই আমি চেষ্টা করছি। যখন আমি মন্ত্রী থাকবো না বা থাকা অবস্থায়ও আমার কর্মের এনালাইসিস আপনারা করবেন,সাধারন মানুষ করবে। আমার বিশ্বাস আমি আমার কাজের প্রতি আন্তরিক।
মোস্তফা কামাল: আমরা আপনাকে দেখি যে,আপনি মন্ত্রী কিন্তু আপনার মধ্যে মন্ত্রিত্বের ডাট যা বলে মানুষ সেরকম দেখা যায় না যে ডাটফাট নিয়ে চলা সেরকম না। আপনি আগে যেরকম ছিলেন এখনো ওই রকমই আছেন। ক্ষমতা এবং অর্থ এ দুটোই তো মানুষের দম্ভ বাড়িয়ে দেয়। তো, আপনি এই দুটোর মধ্যে কিভাবে সমন্বয় করলেন একজন সাধারণ রেজাউল করিম এবং একজন মন্ত্রী রেজাউল করিম হিসেবে।
শ.ম রেজাউল করিম: আমি অতি সাধারণ একটি সম্ভ্রান্ত পরিবার থেকে এসেছি। অনেক চড়াই-উতরাই এর ভেতর থেকে আজকে এই জায়গায় এসেছি। আমি একটি কলেজের নির্বাচিত জিএস ছিলাম। একটি কলেজের নির্বাচিত ভিপি ছিলাম জিয়াউর রহমানের শাসনামলে। জিয়ার শাসনামলে এরশাদের শাসনামলে দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলাম। ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়েছি। অনেক চেষ্টার পরে এখানে এগিয়ে আসা। কিন্তু আমি বুঝতে পারি যে ,জীবন কারো চিরন্তন না । সারা জীবন বেঁচে থাকবো না। যত সাদামাটা জীবনে আপনি অভ্যস্ত হবেন তত আপনি ভালো থাকবেন। যত আকাঙ্ক্ষা আপনার বেড়ে যাবে,তত অতৃপ্তি আসবে। যত ধন সম্পদের প্রতি আপনার লোভ হবে ততই দেখবেন কষ্টটা বেড়ে যাবে। বিত্ত বৈভব কাউকে শান্তি দিতে পারে না। যদি মানসিক শান্তির প্রশ্ন হয় তাহলে অল্প বিত্তে অল্প বৈভবে আপনি ভালো থাকতে পারবেন। এজন্য আমি আমার মতো করে থাকতে চাই। আমি কালকে মন্ত্রী থাকবো না। আমাকে যাতে কেউ বলতে না পারে মন্ত্রীত্বের দাম্ভিকতা বা অহংকার বা ক্ষমতার অপব্যবহার করেছি। আমার ক্ষমতার ব্যবহার করতে পারাটাই যথেষ্ট। অপব্যবহার যথেষ্ট নয়। আর এই জীবন দীর্ঘস্থায়ী নয়। কে কতটুকু কাজ করে যেতে পারলাম সেটাই মাথায় থাকবে। ফলে আমি আমার মত করে থাকতে চাই।
মোস্তফা কামাল: আপনি কি সমালোচনা সহ্য করতে পারেন?
শ.ম রেজাউল করিম: আমি সমালোচকদের সবসময় গ্রহণ করি। আমার মন্ত্রণালয়, আমার আগের মন্ত্রণালয়। আমি একটা উদাহরন বলি, একটা পত্রিকায় ছোট্ট একটা নিউজ আসছিলো সিঙ্গেল কলামে যে, বালিশ কাহিনী । বালিশের দাম নিয়ে ইত্যাদি ইত্যাদি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে । আমি সেই নিউজটাকে কোট করে হাই পাওয়ার তদন্ত কমিটি গঠন করে আমি ৩৪ জনকে দুদকে রেফার করেছিলাম। কাজেই গণমাধ্যমের সমালোচনা এবং আমার কনস্ট্রাক্টিভ সমালোচনা হলে আমি তার স্বাগত জানাই। শুধু প্রত্যাশা থাকে আমাকে যেন আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয়। কারণ যে তথ্য আপনার কাছে গেল সেটা ভুল তথ্যও হতে পারে। কাজেই সমালোচনা হওয়া দরকার।
মোস্তফা কামাল: আপনি এই মন্ত্রিত্বের বাইরে আর কী করেন, কীভাবে আপনার সময় কাটে?
শ.ম রেজাউল করিম: আমি প্রচুর পড়াশোনা করি। আমার চমৎকার একটি লাইব্রেরী আছে। আমি ইসলামিক বই পড়ি। আমাদের ভারত উপমহাদেশের বাঙালি শাসনের ইতিহাস পড়ি। আমাদের বিভিন্ন সময়ে যে সামরিক শাসন হয়েছে সেটা পড়ি। বিশ্বের বিখ্যাত ব্যক্তিদের বিভিন্ন কর্মযজ্ঞ নিয়ে পড়ি। আমাদের এদেশে যারা উইজডম নিয়ে চলতেন,তাদের জীবন কাহিনী পড়ি। আমি পড়তে পছন্দ করি। আর যখন আর কিছুতে সুখ হয় না তখন আমি রবীন্দ্রসংগীত শুনি। পুরনো দিনের উত্তম কুমার সুচিত্রা সেনের ছবি দেখি। সবমিলে আমি প্রতিটা মুহূর্ত কোন না কোন কাজের ভিতরেই থাকি। গান শোনা হোক,বইপড়া হোক,মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বই হোক অথবা বন্ধুদের সাথে ফোনে কথা বলে হোক,আমি সময়টাকে কাজে লাগাবার চেষ্টা করি।
মোস্তফা কামাল: পরিবারকে সময় দেন?
শ.ম রেজাউল করিম: আমার পরিবারের সঙ্গে আমি খুব সময় দিতে পারিনি। এটা আমার একটা আফসোস। আমার সন্তানরা তাদের মাকে ঘিরেই স্কুলে গেছে, কলেজে গেছে। ছেলেটা ব্যারিস্টার হয়েছে। মেয়েটার রেজাল্ট কয়েকদিন পরেই দেবে। সেও ব্যারিস্টার হয়ে যাচ্ছে। আমি তাদের সময় দিতে পারিনি, এখানে তাদের আমি বঞ্চিত করেছি। কিন্তু তাদের যদি আমি আজকে সময় দিতে পারতাম তাহলে আমি আইন অঙ্গনে সুপ্রিম কোর্ট বার সেক্রেটারি ছিলাম, বার কাউন্সিলের দুই বার নির্বাচিত সদস্য ছিলাম, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক ছিলাম, জেলে যেতে হয়েছে, মার খেতে হয়েছে, এগুলো হয়তো করা হতো না। সেজন্য পরিবারকে কিছু ঠকিয়েছি কিন্তু বাইরের সবাইকে কিছু দেবার চেষ্টা করেছি।
মোস্তফা কামাল: আপনার দুই ছেলেমেয়েই তো আপনার ধারা অনুসরণ করেছে । তো তারা কি আপনার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছে নাকি তারা আপনাকে আইডল মনে করে?
শ.ম রেজাউল করিম: আমি তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করেছি এবং আমার ছেলে মেয়েরা মনে করে যে, নির্দিষ্ট মূল্যে অদৃষ্টের চাকরি করা তাদের ঠিক হবে না। আমি বলছি বাবা আমিও কিন্তু একসময় চাকরি পেয়েছিলাম। চাকরি করলে এতদিন রিটায়ার্ড হয়ে গ্রামে চলে যেতে হতো। কিন্তু একটা আইন পেশায় মানুষকে অনেক কিছু দেবার সুযোগ রয়েছে। মানুষকে অনেক উপকার করা যায়। অসহায় বিচার বঞ্চিত মানুষকে যে উপকার করা যায় এই উপকার কিন্তু অনেক সময় একজন মন্ত্রীও করতে পারে না। ফলে বিচারব্যবস্থাকে সাহায্য করার জন্য, বিচার ব্যবস্থাকে উন্নত করার জন্য, বিচারপ্রার্থীকে ন্যায়বিচার দেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। এটা আমি তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছি। এখানে যেরকম আয় করবার সুযোগ আছে মর্যাদার সঙ্গে নিজের বিবেকের বিকাশ ঘটানোর সুযোগও আছে। সবকিছু মিলে আমার কাছে মনে হয়েছে ওরা এখানে আসলে ভালো করবে। সেজন্য আমি তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করেছি তারাও আমার সাথে একমত হয়েছে।
মোস্তফা কামাল: আমরা সবশেষে আপনার কাছ থেকে একটু শুনবো আপনি যদি ঢাকাপ্রকাশের পাঠক এবং দর্শকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলেন।
শ.ম রেজাউল করিম: ঢাকাপ্রকাশের পাঠক, দর্শক, শুভাকাঙ্ক্ষী, শুভানুধ্যায়ী সকলের কাছে আমার আহবান থাকবে গতানুগতিক সাংবাদিকতার বাইরে গিয়ে নতুন একটি উদ্যোগ। আসুন না এই উদ্যোগকে আমরা সকলে মিলে প্রসারিত করি। এই উদ্যোগকে আমরা কতটা সার্থক করতে পারি , আমরা সহযোগী হয়ে দেখি।নতুন কিছু সৃষ্টি করতে হবে। গতানুগতিকতার ভেতরে কিন্তু সবকিছু না। নতুন কিছু সৃষ্টি করার ভেতরেই কিন্তু সার্থকতা। আমার বিশ্বাস প্রতিনিয়ত পৃথিবী পাল্টাচ্ছে, দেশ পাল্টাচ্ছে, আসুন আমরা পাল্টাই প্রচলিত সাংবাদিকতার ধারাকে। সকলের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।
মোস্তফা কামাল: শ.ম রেজাউল করিম আমাদের সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
শ.ম রেজাউল করিম: আপনাকেও ধন্যবাদ
প্রথম পর্ব‘: পেশার ন্যূনতম স্বার্থে সাংবাদিকদের ঐক্য দরকার’
এসপি/জেডএকে