রাজনীতিতে ফের সক্রিয় হতে সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় সম্রাট
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি-ব্লকের দ্বিতীয় তালা। হাসপাতালের নন-কোভিড ইউনিটের হৃদরোগ ইউনিটে দেখা হয় যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের সঙ্গে। বেশ কিছু ফুলের তোড়া তার সামনে। অনেকেই অপেক্ষমান ফুল হাতে। অপেক্ষমানরা জানান, সম্রাট ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন।
রবিবার (১৫ মে) হাসপাতালে দেখা করতে গিয়ে শারীরিক অবস্থা জানতে চাইলে সম্রাট জানান, আমি মোটামুটি ভালো আছি। অনেকে হাসপাতালে আসছে তাদের সঙ্গে দেখা করতে হচ্ছে। একারণে পা টা ফুলে গেছে এবং ব্যাথাটাও বাড়ছে। তাছাড়া বুকে ব্যথা রয়েছে। ডাক্তার বলছেন কারো সঙ্গে দেখা না করতে এবং কথা না বলতে।
অনেকেই আসছেন ফুল দিচ্ছেন। তবে সবার ফুল গ্রহণ করছেন না বলেও জানাগেছে।
৩১ মাস ৬ দিন কারাভোগের পর ১১ মে জামিনে মুক্তি পেয়ে এখনো হাসপাতালেই আছেন সম্রাট। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসকরা সম্রাটকে হাসপাতালে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলেছেন এই করোনাকালে কোনো বহিরাগত মানুষের সঙ্গে দেখা না করতে। তার চিকিৎসা চলছে বিশেষ মেডিকেল বোর্ডের অধীনে। হাসপাতাল ছেড়ে যাবেন কিনা সে সিদ্ধান্ত নেবে মেডিকেল বোর্ড। এখন কিছু বলা যাচ্ছে না বলে জানান, বিএসএমএমইউয়ের পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নজরুল ইসলাম খান।
বিএসএমএমইউয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. রায়হান মাসুম মণ্ডল বলেছেন, তিনি কিছু সময় স্থিতিশীল থাকেন, আবার কিছু সময় অস্থিতিশীল। তার ‘সাডেন কার্ডিয়াক ডেথ’ সিনড্রোম আছে। এর সঙ্গে ভাল্ব রিপ্লেসমেন্ট (হার্টের ভাল্ব প্রতিস্থাপন) আছে। যখন প্রথম এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন, তার হৃদস্পন্দন এলোমেলো ছিল। যতক্ষণ তার জটিলতাগুলো ঠিক না হচ্ছে, তার এমন জায়গায় থাকতে হবে যাতে, দ্রুত সিসিইউ কিংবা কার্ডিওলজিস্টের শরণাপন্ন হওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, তার শরীরে একটি ধাতব বস্তু আছে সেখানে কারেন্ট দিয়ে ইলেকট্রোফিজিও স্টাডি করব। এতে আরেকটা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এজন্য হাইলি ইকুপমেন্ট (উন্নত চিকিৎসা সরঞ্জাম) আছে এমন জায়গায় যাওয়া ভালো। ঢাকায় আমরা এমন জায়গা এখনো ডেভেলপ (উন্নতি) করতে পারিনি।
`তিনি সিঙ্গাপুরের কথা বলেছেন, সেটা অবশ্যই ভালো জায়গা। তিনি চাইলে তার চেয়েও ভালো জায়গায় যেতে পারেন। আমরা আসলে ইলেকট্রোফিজিওলজি স্টাডিতে অতটা সক্ষম নই'।
একারণে পরিকল্পনা আছে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার। চিকিৎসকরা পরামর্শ দিলে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার সব প্রস্তুতি নিবেন সম্রাটের পরিবার। তবে তার চিকিৎসার ব্যাপারে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা কাজ করবেন জানান, সম্রাটের অনুসারীরা।
হাসপাতালে সম্রাটের সার্বিক বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া যুবলীগ নেতা কাজী মাহাতাব উদ্দিন ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ৩১ মাস ৬ দিন কারা ভোগের পর সম্রাট ভাই জামিনে মুক্তি পায়। সম্রাট ভাই এখন অসুস্থ তেমন করো সঙ্গে দেখা করছেন না। তিনি সুস্থতার জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন এবং জানিয়েছেন, মানুষের সেবাই আবারও পরিছন্ন রাজনীতিতে ফিরে আসবেন।
হাসপাতালে উপস্থিত সম্রাটের একাধিক অনুসারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট শারীরিক সুস্থতা কেটে গেলে ও দলের উপর মহলের সবুজ সংকেত মিললেই আবার ও তিনি রাজনীতির মাঠে পুরোপুরি সক্রিয় হবেন। তার অনুসারীদের দাবি, আমরা আশা করি ফের রাজনীতিতে ফিরে আসবেন সম্রাট। যুবলীগের দক্ষিণের দায়িত্বে এক মাত্র যোগ্য তিনি।
হাসপাতালে আগত অনুসারীদের দাবি, সম্রাটকে দল থেকে বহিষ্কারের দালিলিক কোনো প্রমাণপত্র নেই। ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেপ্তারের পর যুবলীগের তখনকার কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ কেউ সম্রাটকে বহিষ্কারের তথ্য সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু এর কোনো দালিলিক ভিত্তি নেই।
অনুসারীরা বলছেন, দলের পক্ষ থেকে তার বহিষ্কারাদেশের ব্যাপারে কোনো বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়নি। ফলে তাদের ‘নেতা’ ফের রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন। শারীরিক সুস্থতা ও দলের উপর মহলের সবুজ সংকেত মিললেই রাজনীতির মাঠে পুরোপুরি সক্রিয় হবেন তিনি।
জানা যায়, সম্রাটের জামিন ঠেকাতে হাইকোর্টে কাজ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আড়াই বছরের বেশি সময় কারাবাসের পর জামিনে মুক্ত হতেই সম্রাটকে নিয়ে সুর পালটে ফেলেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এটাকেই সম্রাটের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত হিসাবে দেখছেন তার অনুসারীরা।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহ সভাপতি খোরশেদ আলম মাসুদ বলেছেন, ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়নি। তাকে বহিষ্কারাদেশের কোনো দালিলিক প্রমাণপত্র নেই। তিনি এখনো দলের মহানগর দক্ষিণের সভাপতি পদে রয়েছেন।
সম্রাটের বহিষ্কারাদেশের বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ বলেছেন, ‘সম্রাট গ্রেপ্তারের সময় যুবলীগ অনেকটা অগোছালো ছিল। তখন সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন তৎকালীন চেয়ারম্যান।’ সম্রাটের বহিষ্কারাদেশ নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে জানাতে চাইলে সংগঠনের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান খান নিখিল তার বহিষ্কারাদেশের বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং তিনি উল্টো বলেছেন, সাংবাদিকরা তো তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের কথা লিখেছে। দলীয় কার্যালয়ের অফিস ফাইলে সম্রাটকে বহিষ্কারের কোনো দালিলিক প্রমাণপত্র রক্ষিত আছে কিনা সে সম্পর্কে আপাতত কিছু বলতে পারছি না।
প্রসঙ্গত, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের এক সময়ের প্রতাপশালী নেতা সম্রাট ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িয়ে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর গ্রেপ্তার হন। তার বিরুদ্ধে এখন অস্ত্র, মাদক, অর্থ পাচার ও অজ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের চারটি মামলা বিচারাধীন। আড়াই বছর কারাবাসের পর সব মামলায় জামিন পেলে গত বুধবার তিনি মুক্তি পান। এর পর থেকে গুঞ্জন শুরু হয় সম্রাট কি তাহলে আবার রাজনীতিতে ফিরছেন।
কেএম/