ইফতেখার রহমান মিঠুর স্মৃতিচারণ
বাংলাদেশের আচার সৌরভের খুব পছন্দ

ইফতেখার রহমান মিঠু। ক্রিকেটাঙ্গনে অতি পরিচিত মুখ। এক সময় ছিলেন ক্রিকেটার। ওপেনিং ব্যাটসম্যান ছিলেন। খেলেছেন গুলশান ইয়ুথ, আজাদ বয়েজ, ওয়ারী ক্লাবে। এর আগে স্কুল ক্রিকেটে শাইন স্কুলের হয়ে, পরে নটরডেম কলেজের হয়েও খেলেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিকেট টিমেও তিনি খেলেছেন। আইআর বিষয়ে মাস্টার্ট শেষ করেন। খেলা শেষে ব্যবসার পাশাপাশি ক্রিকেট সংগঠক হিসেবে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন। বর্তমানে তিনি ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচিত পরিচালক। কিন্তু এ সবের বাইরে তিনি আলোচিত সৌরভ গাঙ্গুলির ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে। গত ৩০ বছরের সর্ম্পক তাদের। বাংলাদেশে এলে সৌরভ গাঙ্গুলি তার বাসায় আতিথেয়তা নিয়ে থাকেন। ঈদ উপলক্ষে সৌরভ গাঙ্গুলিকে নিয়ে স্মৃতির ঝাপটা তিনি মেলে ধরেছেন ঢাকাপ্রকাশের পাঠকদের জন্য।
ঢাকাপ্রকাশ: সৌরভ গাঙ্গুলির সঙ্গে আপনার পরিচয় কীভাবে?
ইফতেখার রহমান মিঠু: গাঙ্গুলির সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় আমি কলকাতায় গিয়েছিলাম তার বড় ভাই স্নেহাশীষকে আমাদের গুলশান ইয়ুথ ক্লাবে খেলাতে চেয়েছিলাম। সেটা ১৯৮৮ সালে। তখন অরুনলাল-অশোক মালহোত্রার মাধ্যমে পরিচয়। তারপরও ওকে আমরা ফরমফিলাপ করালাম। তখন সে ভেরি ইয়ং ক্রিকেটার (পরে সে আর খেলেনি ভারতী যুব দলে সুযোগ পাওয়াতে)। তারপর বাবরি মসজিদের ঘটনার সময় ভারতের ‘এ’ দল বাংলাদেশে এসেছিল। সিধু, মানিন্দর সিংয়ে এদের সঙ্গে সেও ছিল। সেখান থেকে আস্তে আস্তে সম্পর্ক। এখন ৩০ বছরের সম্পর্ক।
ঢাকাপ্রকাশ: ৩০ বছরের সম্পর্ক। তার সঙ্গে আপনার স্মরণীয় একটি মুহূর্ত বলুন?
ইফতেখার রহমান মিঠু: স্মরণীয় মুহূর্ত অনেকই আছে। যখন আমরা ওর ওখানে যাই, তখন সে যেভাবে আমাদের সঙ্গে মিশে, সাধারণ মানুষের মতো মিশে। তারপর জন্মদিনের দাওয়াত, ম্যারিজ এনিভার্সারির দাওয়াত। স্মরণীয় মুহূর্তে বললে কেকেআরে আমরা এক সঙ্গে টাইম কাটিয়েছি। ও আমার বাসায়ও থেকেছে। একবার পারটেক্সের একটা ভিডিও করতে এসেছিল। ওর সঙ্গে পার্টিকুলার মেমোরি বলতে ইংল্যান্ডে তার সঙ্গে দেখা হয়েছে। আমরা একই ঘরে ঘুমিয়েছি। ইংল্যান্ডে ওর এক চাচা আছেন, চাচার বাসায় থেকেছি। এ রকম প্রচুর মেমোরি আছে।
ঢাকাপ্রকাশ: দাদা যখন টপ ফর্মে তখন আপনার সঙ্গে দেখা হলে কিংবা ওই সময়ের দুই/একটা ঘটনা যদি বলতেন?
ইফতেখার রহমান মিঠু: ঘটনা হলো কোনো দিনও কোনো চেঞ্জ হয়নি। ওর যে টা আমার সবচেয়ে ভালো লাগে ও যখন ‘এ’ টিম, বেঙ্গল টিমের ক্যাপ্টেন থাকার সময় যে রকম ব্যবহার ছিল, ইন্ডিয়া টিমের ক্যাপ্টেন যখন হয়েছে, তখনো সেইম ব্যবহার ছিল, আবার এখন যখন প্রেসিডেন্টও হয়েছে, ব্যবহার কিন্তু একদমই এক। একটা অমায়িক ছেলে। কোনো অহমিকা নেই। মানুষের শেখার আছে অনেক কিছু ওর থেকে।
ঢাকাপ্রকাশ: পিংক বলের টেস্টে আমরা জানি সৌরভ গাঙ্গুলি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে ইনভাইট করেছিল। আপনি এখন বোর্ডে থাকলেও তখন ছিলেন না। কিন্তু আপনাকেও পাার্সোনালি ইনভাইট করেছিল। আমরা যতোটুকু জানি আপনাদের জন্য একট বক্স বরাদ্দ করেছিলেন। খেলার ফাঁকে ফাঁকে আপনাদের বক্সে এসে সময় কাটাতেন। সে সময়ের কিছু ঘটনা যদি বলতেন?
ইফতেখার রহমান মিঠু: পিংক বলের টেস্টে শুধু আমি না, আমার ফ্যামিলি, আমার বন্ধুবান্ধব সবাইকে নিয়ে গেছি। টোটাল ২০ জন গিয়েছিল আমার সঙ্গে। ও সৌরভ গাঙ্গুলি হিসেবে একটি বক্স পায় আবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে একটা বক্স পায়। ও একটি বক্সের ২০টা টিকিট আমাকে দিয়ে বলল তোমার বন্ধু-বান্ধব নিয়ে খেলা দেখ। আমাদের ডিনার করিয়েছে। যেটার দরকার ছিল না। খেলার ফাঁকে ফাঁকে প্রচুর টাইম দিয়েছে। গল্প করেছে, সময় কাটিয়েছে। মাঠেও ডেকে নিয়ে গেছে, সিকিউরিটি এতো চমৎকার। প্রাইম মিনিস্টার মাঠে।
ঢাকাপ্রকাশ: বিসিবিতে আপনি পরিচালক হয়ে আসার পর তার সঙ্গে আপনার কী কথা বার্তা হয়েছে?
ইফতেখার রহমান মিঠু: রেগুলারই কথা হচ্ছে। পরশু (২৪ এপ্রিল) দিনও কথা হয়েছে। আইপিএল দেখতে আসব কি না? কলকাতায় হবে। আসো। মাঝে মধ্যে আমার যে আম্পায়ারিং কমিটি, কোনো হেল্প-টেল্প লাগলে কাগজ-পত্র লাগলে তার কাছ থেকে পাই।
ঢাকাপ্রকাশ: আপনার সঙ্গে তার যে ঘনিষ্ঠ সর্ম্পক, তিনি বিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট, আপনি বিসিবির পরিচালক। এই সর্ম্পককে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের ক্রিকেটীয় সর্ম্পকের আরো উন্নয়ন করা যায় কি না? এফটিপির বাইরে গিয়ে আরো কিছু খেলাধুলার আয়োজন করা যায় কি না?
ইফতেখার রহমান মিঠু: সম্ভব ডেফিনেটলি। শুধু আমার রিলেশন না। ও অসম্ভব একটা ভালো ছেলে। সে যেহেতু বাঙালি, বাংলাদেশকে সে অসম্ভব পছন্দ করে। আমাদের প্রেসিডেন্ট সাহেবের সঙ্গেও তার ভালো রিলেশন আছে। তো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কিছু চায় যদি, উনারা সেটা করতে পারেন।
ঢাকাপ্রকাশ: পদ্মার ইলিশ কেমন পছন্দ তার?
ইফতেখার রহমান মিঠু: শুধু পদ্মার ইলিশ না, বাংলাদেশের মাছ তার খুব ফেভারিট এখানকার আচার তার খুব পছন্দ। বিশেষ করে আমার বোন একটা আচার বানায়, সেটা তার খুব পছন্দ। সে সব সময় ক্যারি করে নিয়ে যায়। আবার কাউকে দিয়ে পাঠাতে হয়। বাংলাদেশের রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেতে সে খুব পছন্দ করে। থাই রেস্টুরেন্ট। আপনি বইটা যদি দেখেন, সেখানে সে লিখেছে বাংলাদেশের নানা রেস্টুরেন্ট্ খেতে যেতাম। সে বাংলাদেশের খাবার খুবই পছন্দ করে।
ঢাকাপ্রকাশ: বাংলাদেশের কোন কোন জায়গা তার পছন্দ?
ইফতেখার রহমান মিঠু: গিয়েছে তো ঢাকা আর চট্টগ্রাম। ওভাবে দেখা হয়নি। ঢাকায় আসলে একচুয়ালি আমার বন্ধুবান্ধব ওর বন্ধুবান্ধব হয়ে গেছে। তারপর আমাদের কিছু ক্রিকেটার এনামুল হক মনি, আকরাম খান, হাবিবুল বাশার এদের সঙ্গেও তার সখ্য আছে। ঢাকায় আসলে সে এনজয় করে। মনে হয় তার পাড়া বসে গল্প করছে।
ঢাকাপ্রকাশ: বাংলাদেশের বর্তমান ক্রিকেট নিয়ে কোনো আলোচনা হয় কি না ভালো-মন্দ?
ইফতেখার রহমান মিঠু: সে সব সময় বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে বলে, টেনশন করে। টেলিফোন করে বলে কী ব্যাটিং করছে। আমাদের খেলাগুলো যদি দেখেন, আমাদের ফেইলর কিন্তু ব্যাটিং থেকেই আসে বেশি। এমন না যে ৭০০ রান করেছে। আমরা কিন্তু বোলিং এ পর্যন্ত সব ম্যাচেই মোটামুটি ভালো করেছে। ব্যাটিংয়ে গিয়ে ফেইলর হচ্ছে। ৫০ রানে অলআউট, ৭০ রানে অলআউট। তখন সে আমাকে একবার বলে যে দেখ তোমার ক্রিকেটারদের বলো ডিফেন্স বলে একটা কিছু আছে। খালি মারলেই হয় না। তোমার টিমের বড় সমস্যা হচ্ছে ইনিংস বিল্ডআপ করে না। ওরা কী দেখে না টিভিতে, বড় প্লেয়ারদের, শচিনকে দেখে না কীভাবে ইনিংস বিল্ডআপ করে। সে অলওয়েজ কনসার্ন।
ঢাকাপ্রকাশ: এর বাইরে এমন কিছু কী আছে যা আপনাকে আলোড়িত করে?
ইফতেখার রহমান মিঠু: সবচেয়ে বড় জিনিষটা হচ্ছে ছেলেটা বেসিকেলি অমায়িক। অহংকার নেই। আমাদের প্লেয়ারদের বলবো ওর কাছ থেকে শিক্ষণীয় ব্যাপার আছে। ওর বাবা কিন্তু বিরাট ব্যবসায়ী ছিলেন কলকাতার। বড় লোকের ছেলে। সেখানেও কোনো অহামিকা ছিল না। ইন্ডিয়া টিমের ক্যাপ্টেন, নিজে একটা কিছু এখন। এনিবডি, আমিতো দেখি বাংলাদেশের সাংবাদিক, যেই হোক সবার সঙ্গে অমায়িকভাবে মিশে। আমি আজ পর্যন্ত ওকে কিন্তু মেজাজ খাপার করতে দেখিনি। ৩০ বছরে ওর সঙ্গে কমপক্ষে দুইশবার দেখা হয়েছে আমি আজ পর্যন্ত ওকে রাগ করতে দেখিনি। একটা ছেলের সবচেয়ে বড় প্রীতি মায়ের প্রতি টান। মা অসুস্থ হলে কোথায়ও যায় না।
ঢাকাপ্রকাশ: সৌরভ গাঙ্গুলির একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে আপনি নিজেও কী একরকম তারকা খ্যাতি উপভোগ করেন কিংবা আপনার বন্ধুমহল বা পরিচিত মহলে আপনার ট্রিট কীভাবে হয়?
ইফতেখার রহমান মিঠু: সবাই খুব এক্সাইটেড থাকে। সৌরভ গাঙ্গুলি যখন আমার বাসায় এসে থাকে তখন সবাই এক্সাইটেড হয়। ডেফিন্টেলি এতো বড় একজন মানুষকে চেনা, বলতে পারেন যে আমাদের বাঙালিদের মাঝে কয়জন ওই লেবেলে যেতে পেরেছে। বাংলাদেশে তো হি ইজ ভেরি ভেরি পপুলার। ছোট-বড় সবাই খুব এক্সাইটেড হয়। এর মধ্যে আমিও একটু ইম্পর্টেন্সি পাই।কলকাতায়ও অনেক ইজ্জাত পাই।
ঢাকাপ্রকাশ: লর্ডসে সৌরভ গাঙ্গুলি ন্যাটওয়েস্ট ট্রফির শিরোপা জেতার পর জার্সি খুলে উল্লাস করা নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। এ বিষয়ে কখনো কী তিনি আপনাদের সঙ্গে কোনো কিছু শেয়ার করেছিলেন।
ইফতেখার রহমান মিঠু: জিজ্ঞসে করেছিলাম। এটা ওর মাথায় ছিল। ফ্লিনটফ করেছিল ইন্ডিয়াতে প্রথমে, মনে আছে। ব্যাপারটা হচ্ছে ফ্লিনটফ শার্টখুলে করেছিল। এইটারই উত্তর কিন্তু ওইটা।
এসএন
